অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসার নিরাময়ে নতুন কী খোঁজ পাওয়া গেল? ছবি: সংগৃহীত।
একটি উৎসেচক জিনের বাড়বাড়ন্তই প্যানক্রিয়াস বা অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসারের মূলে। সেই জিনটিকে নিষ্ক্রিয় করতে পারলেই ওই মারণরোগ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব বলে দাবি করলেন ভারতের এক বিজ্ঞানী। লখনউয়ের বাসিন্দা অনুপম ধাসমানা আমেরিকার ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সাসে গবেষণারত। সম্প্রতি ‘পিয়ার রিভিউ জার্নাল অফ অ্যাডভান্সড রিসার্চ’-এ তাঁর একটি গবেষণাপত্র ছাপা হয়েছে। যেখানে ওই বিজ্ঞানী ও চিকিৎসক অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসার নিয়ন্ত্রণের দিশা দেখিয়েছেন।
চিকিৎসকের কথায়, অগ্ন্যাশয় ক্যানসারের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর রূপ হল ‘প্যানক্রিয়াটিক ডাক্টাল অ্যাডিনোকার্সিনোমা’। এই ক্যানসার ছড়াতে শুরু করলে তাকে নিয়ন্ত্রণে আনা প্রায় অসম্ভব। এই ক্যানসার তাড়াতাড়ি ধরাও পড়ে না। তলে তলে শরীরে বাড়তে থাকে। কিন্তু পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, অগ্ন্যাশয়ে যদি এই ক্যানসার বাসা বাঁধে তা হলে একটি প্রোটিনের মাত্রা বেড়ে যায়। সেই প্রোটিনটির নাম ‘কার্সিনোএমব্রায়োনিক অ্যান্টিজেন সেল অ্যাডহেসন মলিকিউল ৭’। এই প্রোটিনটিকে যদি নিষ্ক্রিয় করে দেওয়া যায়, তা হলে ক্যানসার কোষের বিভাজনও থেমে যাবে। ইঁদুরের উপরে পরীক্ষা চালিয়ে এই বিষয়ে তাঁরা নিশ্চিত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন অনুপম।
অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসারের ঝুঁকি ইদানীং কালে বেড়েই চলেছে। পরিসংখ্যান জানাচ্ছে, অন্যান্য ক্যানসারের তুলনায় অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসারে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন মানুষ। এর কারণই হল খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাপনের পদ্ধতি। অনুপমের কথায়, অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসার ধরা পড়ে একেবারে শেষ পর্যায়ে, যখন আর কিছু করার থাকে না। জন্ডিস ছাড়া আর কোনও উপসর্গও থাকে না। ফলে, দ্রুত এই রোগ নির্ণয় করা যায় না। যখন ধরা পড়ে, তখন শরীরে অনেকটাই ছড়িয়ে যায় ক্যানসার। তাই যদি জন্ডিসের বিভিন্ন পর্যায়ে অগ্ন্যাশয়ে ওই প্রোটিনটির মাত্রা পরিমাপ করা হয়, তা হলেই বোঝা যাবে, ক্যানসার কোষের বিভাজন শুরু হয়েছে কি না অথবা ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে কি না। সে ক্ষেত্রে ক্যানসার বাড়াবাড়ি অবস্থায় পৌঁছনোর আগেই তা ধরা সম্ভব।
কী ভাবে বোঝা যাবে? চিকিৎসকের দাবি, অগ্ন্যাশয়ে যদি টিউমার তৈরি হয়, তা হলে তা দ্রুত বড় হতে থাকে। ওই পক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে আরও একটি জিন। ওই জিন অগ্ন্যাশয়ের টিউমারে অতিরিক্ত রক্তজালিকা তৈরি করে, যার মধ্যে দিয়ে কোষে অতিরিক্ত খাদ্য পৌঁছয়। ফলে তারা দ্রুত বাড়তে থাকে এবং আশপাশের সুস্থ কোষগুলিকে নষ্ট করতে থাকে। যে প্রোটিনটিকে চিহ্নিত করা হয়েছে, সেটি ওই জিনকে নিয়ন্ত্রণ করে। যদি প্রোটিনের মাত্রা বেড়ে যায়, তা হলে বুঝতে হবে টিউমারও দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। কোনও ভাবে ওই প্রোটিনকে নিয়ন্ত্রণ করা গেলেই ক্যানসারের বাড়বাড়ন্ত থেমে যাবে। রোগীকে বাঁচানোও সম্ভব হবে।