ডিপ ভেন থ্রমবোসিস কী ভাবে মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়? ছবি: সংগৃহীত।
শরীরে রক্তজমাট বাঁধা মোটেই ভাল লক্ষণ নয়। শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে রক্ত জমাট বাঁধতে শুরু করলে স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক ও পালমোনারি এম্বলিজ়ম রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। তাই শরীরে রক্ত জমাট বাঁধার লক্ষণকে কখনও অবহেলা করা উচিত নয়। শরীরে তিন ধরনের শিরা রয়েছে। ত্বকের কাছাকাছি সুপারফিশিয়াল ভেন এবং গভীরে থাকে ডিপ ভেন। আর পারফোরেটিং ভেনের মাধ্যমে সুপারফিশিয়াল ভেন থেকে রক্ত ডিপ ভেনে পৌঁছয়। ডিপ ভেনে রক্ত জমাট বেঁধে গেলে, তাকে বলে ডিপ ভেন থ্রমবোসিস (ডিভিটি)। বেশির ভাগ সময়ে পায়ের পিছনের অংশ কাফের ডিপ ভেনেই ডিভিটি হয়ে থাকে। ডিভিটি ডেকে আনতে পারে বড় বিপদ। তৈরি হয় মৃত্যু ঝুঁকিও।
কোন কোন উপসর্গ দেখে সতর্ক হবেন?
দীর্ঘ ক্ষণ পা ঝুলিয়ে বসে থাকলে পা ফুলে যায়? মাঝেমাঝেই যদি দেখেন পা ফুলে যাচ্ছে সঙ্গে মৃদু যন্ত্রণা হচ্ছে, ত্বক লালচে হয়ে যাচ্ছে, তা হলে কিন্তু সতর্ক হোন। এগুলি হতেই পারে ডিপ ভেন থ্রম্বোসিসের উপসর্গ। কিছু ক্ষণ পা ঝুলিয়ে বসলে কিংবা হাঁটাহাঁটি করলে যদি দেখেন পা ফুলে যাচ্ছে, এবং ফোলা জায়গায় ত্বক স্বাভাবিকের তুলনায় গরম মনে হচ্ছে, তা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। পেটের ডিপ ভেনে রক্ত জমাট বাঁধলে পেটে তীব্র যন্ত্রণা হতে পারে, মাথার ডিপ ভেনে রক্ত জমাট বাঁধলে মাথায় ভীষণ ব্যথা করে। শিরাগুলি ফুলে ত্বকের উপরের অংশ উঁচু উঁচু ও অসমান দেখায়। অনেকের ক্ষেত্রে মলের সঙ্গে রক্তপাতও হয়।
কাদের ঝুঁকি বেশি?
ডিভিটির প্রধান কারণ শিরায় রক্তপ্রবাহের বেগ কমে যাওয়া। বয়স্ক ব্যক্তিদের মধ্যে এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা অপেক্ষাকৃত বেশি। যদিও কম বয়সের মানুষদেরও এই সমস্যা হতে পারে। যাঁরা দীর্ঘ ক্ষণ পা ঝুলিয়ে বসে থাকেন বা দাঁড়িয়ে কাজ করেন কিংবা যাঁরা অনেক ক্ষণ একনাগাড়ে গাড়ি চালান, তাঁদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। পক্ষাঘাতগ্রস্ত বা অস্ত্রোপচারের কারণে যাঁরা দীর্ঘ দিন বিছানায় শুয়ে আছেন, তাঁদের পায়ের শিরায় রক্তপ্রবাহের মাত্রা কমে যাওয়ার ফলে হতে পারে এই রোগ। অন্তঃসত্ত্বা মহিলাদের সন্তানধারণের শেষ পর্যায়ে ডিভিটি হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। জিনগত কারণেও ডিভিটি হতে পারে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া দীর্ঘ সময় ধরে গর্ভনিরোধক ওষুধ খেলেও এই রোগ হতে পারে। অস্বাভাবিক ওজন বৃদ্ধি বা ওবেসিটিও এই রোগের কারণ।
ডিপ ভেন থেকে একটু একটু করে ছোট ছোট রক্তখণ্ড পালমোনারি আর্টারিতে জমা হয়, তখন তাকে ক্রনিক পালমোনারি এম্বলিজ়ম হয়। এই রোগ থেকে শ্বাস বন্ধ হয়ে মৃত্যু হতে পারে।
কী ভাবে সেরে উঠবেন?
ধূমপান করলেও এই রোগের আশঙ্কা বাড়ে। তাই এই অভ্যেস ত্যাগ করতেই হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া দীর্ঘ দিন ধরে গর্ভনিরোধক ওষুধ না খাওয়াই ভাল। যাঁরা অফিসে একটানা দীর্ঘ ক্ষণ বসে কাজ করেন, তাঁদের মাঝেমাঝে উঠে হাঁটাচলা করতে হবে। গাড়ি চালানোর ক্ষেত্রেও একই নিয়ম মানতে হবে। ওজন এ ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণে রাখা ভীষণ জরুরি।