হাসতে হাসতে অজ্ঞান ব্যক্তি। প্রতীকী ছবি।
হাসতে গিয়ে অজ্ঞান? যে সে হাসি নয়, একেবারে অট্টহাসি। আর তাতেই জ্ঞান হারালেন এক ব্যক্তি। বেঁকে গেল মুখও। চিকিৎসক পরীক্ষা করে দেখলেন ভয়ানক ব্যাপার। হায়দরাবাদে এমনই একটি ঘটনা ঘটেছে।
বছর ৫৩ বয়স ব্যক্তির। সন্ধ্যাবেলা এক পেয়ালা চা নিয়ে বসে পরিবারের সঙ্গে কমেডি শো দেখছিলেন। সকলেই হাসছিল। তবে তিনি একটু বেশিই হাসছিলেন। শেষে অট্টহাসিতে ফেটে পড়তেই বিপদ ঘটে গেল। হাসতে হাসতে আচমকাই জ্ঞান হারিয়ে গড়িয়ে পড়লেন সোফা থেকে। হাত থেকে পড়ে ভেঙে গেল চায়ের কাপ। ওই ব্যক্তির মেয়ে জানিয়েছেন, ব্যাপারটা লক্ষ্য করে ছুটে এসে বাবাকে ধরতেই দেখলেন তাঁর শরীরের এক দিক প্রায় নিস্তেজ হয়ে গিয়েছে। মুখের একটি দিক বেঁকে গিয়েছে। তড়িঘড়ি তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। আর তার পরেই চিকিৎসকেরা পরীক্ষা করে যা দেখেন, তা চমকে ওঠার মতোই।
স্নায়ুরোগ চিকিৎসক সুধীর কুমার তাঁর এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করে ওই ব্যক্তির কী হয়েছে তা বিশদে জানিয়েছেন। চিকিৎসক বলছেন, বিরল রোগ ধরা পড়েছে ওই ব্যক্তির। চিকিৎসার পরিভাষায় একে বলে ‘লাফটার ইনডিউসড সিনকোপ’। বেশি হাসলে অনেকের এমন রোগের লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
এখনকার ব্যস্ত জীবনে মানসিক চাপ যে ভাবে বাড়ছে, তাতে হাসিখুশি থাকারই পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা। মন ভাল রাখতে লাফটার ক্লাবও গজিয়ে উঠেছে পাড়ায় পাড়ায়। সেখানে গিয়ে মন খুলে হাসেন সকলে। তা হলে হাসলে সমস্যাটা কোথায়? চিকিৎসক সুধীর কুমারের মতে, হাসলে সমস্যা নেই, ক্ষতিটা হতে পারে অতিরিক্ত হাসিতে। জোরে আওয়াজ করে হাসির অভ্যাস যাঁদের, সে সব মানুষের রক্তচাপ দ্রুত ওঠানামা করে। হাসতে হাসতে হঠাৎ রক্তচাপ বেড়ে গিয়ে হৃদ্যন্ত্রের সমস্যা হতে পারে। অট্টহাসি হাসতে গিয়ে চোখে অন্ধকার দেখে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছেন, এমন উদাহরণও কম নয়।
ওই ব্যক্তি প্রচণ্ড শব্দ করে একটানা হেসে যাচ্ছিলেন। অট্টহাসির বেগ এমনই যে আচমকাই রক্তচাপ বেড়ে যায়। পরীক্ষা করে ওই ব্যক্তির, হৃদ্স্পন্দনেও গোলমাল ধরা পড়েছে। শ্বাসকষ্টও হচ্ছিল তাঁর। ওষুধ খাইয়ে তাঁকে সুস্থ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক।
‘লাফটার ইনডিউসড সিনকোপ’ সকলের যে হবে, এমনটা নয়। চিকিৎসকদের মতে, হার্ট দুর্বল, রক্তচাপ মাঝেমধ্যেই ওঠানামা করে এমন লোকজনের এই রোগ হওয়ার আশঙ্কা বেশি। যাঁরা জল কম খান, সুষম খাবার খাওয়ার অভ্যাস নেই, অতিরিক্ত নেশা করেন, তাঁরাও ভুগতে পারেন এমন রোগে। এক বার যদি এমন লক্ষণ দেখা দেয়, তা হলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া খুব জরুরি। হাসতে হাসতে মাথা ধরে যাওয়া, মাথা ঘোরার মতো সমস্যাও দেখা যায় অনেকের। সে ক্ষেত্রে চিকিৎসকের কাছে গিয়ে পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া জরুরি।