কালীপুজো মানেই নির্জলা উপোস। ছবি: সংগৃহীত
দুর্গাপুজোর রেশ কাটতে না কাটতেই এসে গেল কালীপুজো। আর কালীপুজো মানেই নির্জলা উপোস। দুর্গাপুজো, কালীপুজো হোক কিংবা ছট অথবা রমজান— ধর্ম আচরণের অঙ্গ হিসাবে উপবাস করার প্রথা সবের সঙ্গেই জুড়ে আছে। উপোস করে পুজো দিলেই কি ভগবান প্রসন্ন হবেন আর অন্যথায় নয়— এ বিতর্ক বহু দিনের। কে কী ভাবে পুজো দিয়ে সন্তুষ্ট হবেন, তা তাঁর ব্যক্তিগত বিষয়। কিন্তু যদি আধ্যাত্মিক বা ধর্মীয় দিক ছেড়ে স্বাস্থ্যের দিকে আসা যায়, তা হলে তো মনে প্রশ্ন উঠবেই, উপবাস করা কি আদৌ ভাল? এতে শরীরের লাভ হয় না ক্ষতি?
উপোস কত উপকারী, এ নিয়ে তথ্যের অভাব নেই। উপবাস করলে নাকি যৌবন দীর্ঘস্থায়ী হয়, শরীর থেকে বর্জ্য বেরিয়ে গিয়ে ত্বকের ঔজ্জ্বল্য বাড়ে, ইনসুলিনের কর্মক্ষমতা বাড়ে, শরীর থেকে ক্ষতিকর কোলেস্টেরল বেরিয়ে যায়, ডায়াবিটিসের পক্ষেও উপকারী ইত্যাদি। কিন্তু এই কথাগুলি আদৌ কি সত্যি? চিকিৎসকদের মতে, এ কথার বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। কারণ রক্তে গ্লুকোজ় পৌঁছলে ফিডব্যাক পদ্ধতিতে ইনসুলিন হরমোনের ক্ষরণ হয়। এটি অতিরিক্ত গ্লুকোজ়কে রক্ত থেকে সরিয়ে গ্লাইকোজেন আকারে লিভার ও পেশিতে সঞ্চয় করে। দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকলে শরীরে ইনসুলিনও ক্ষরিত হবে না। তার পর যেই শরীরে খাবার ঢুকবে, রক্তের শর্করার মাত্রা হঠাৎ অনেকটা বেড়ে যাবে। শুধু ডায়াবেটিক রোগী নয়, কারও আলসার, গ্যাসট্রাইটিস কিংবা হায়াটাল হার্নিয়া থাকলে উপোস তাঁর পক্ষে ক্ষতিকর। উপোস মানে পরিপাক ক্রিয়ার বিশ্রাম, সেটার তো কিছু সুবিধা আছেই। কিন্তু সেই উপকারিতা নির্ভর করে উপোস কী ভাবে করা হচ্ছে তার উপরে। অনেকে উপোস ভাঙার পরে বেশি তেল-মশলা দেওয়া খাবার খেয়ে ফেলেন কিংবা প্রচুর পরিমাণে ফল মিষ্টি খান। তাতে উপোসের সম্পূর্ণ সুফল চলে যায়।
উপোসের আগে বা পরে কী খাওয়া হচ্ছে, সে দিকে নজর দেওয়া ভীষণ জরুরি। সব সময়ে হালকা আর সহজে হজম হয় এমন খাবার খেতে হবে। উপোসের পরে আপনি অল্প নুন দিয়ে আলু সিদ্ধ খেলেন কিংবা ছোলা দিয়ে আলুর চাট করে খেলেন। সেগুলি আপনাকে ভাল ফল দেবে। কিন্তু আলু চিপ্স খেলেন। তা হলে কোনও উপকারই হবে না। ভাত এমনিও খাওয়া যায়, আবার পোলাও করেও খাওয়া যায়। আপনি কোনটা বেছে নিচ্ছেন, তার উপরে আপনার স্বাস্থ্য নির্ভর করবে।
মন চাইলে উপোস করতেই পারেন, তবে ভাল-মন্দ নিজেকেই বুঝতে হবে। শরীরও মন্দির আর স্বাস্থ্যরক্ষাও ধর্ম— এ কথা কিন্তু ভুললে চলবে না।