বাসে বা গাড়িতে উঠলেই মাথা ঘোরে, গা-বমি শুরু হয়? ছবি: সংগৃহীত
নামী স্কুলে পড়ার সুযোগ পেয়েছিল রাজন্যা। বাড়ি থেকে স্কুল ঘণ্টা দুয়েকের পথ। স্কুলের বাসে সেটুকু রাস্তা যেতে গিয়েই যত সমস্যা। বাসে ওঠার ১০-১৫ মিনিটের পর থেকেই শরীর আনচান শুরু। তার পরেই বমি। পরিস্থিতি এমনই যে, দিন পাঁচেকের পর সে কিছুতেই বাসে উঠতে চায় না।
কচিকাঁচা থেকে বড় অনেকেরই এমন সমস্যা হয়। বাস, চারচাকার গাড়িতে উঠলে শরীরে অস্বস্তি, বমি ভাব, কেউ আবার বমি করেও ফেলেন। কারও আবার সমতলে তেমন সমস্যা না হলেও, পাহাড়ের চড়াই-উতরাই পথে গাড়ি চললেই শরীর খারাপ লাগতে শুরু করে। বমি পায়। চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় একেই বলা হয় ‘মোশন সিকনেস।’
কেন হয় এই সমস্যা? চিকিৎসক অরিন্দম বিশ্বাস বলছেন, চোখ, কান ও মস্তিষ্কের সমন্বয় চলাফেরার ও কাজকর্মের জন্য জরুরি। কোনও কারণে এই সমন্বয় বিঘ্নিত হলে ‘মোশন সিকনেস’ হতে পারে। এ ক্ষেত্রে বমি হয়ে যায়। এই সমন্বয়ের কাজটি করে ভেস্টিবিউলার সিস্টেম। কানের ভিতরে থাকে ‘ভেস্টিবিউলার অ্যাপারেটস’। কারও ক্ষেত্রে তা বেশি সংবেদনশীল হয়, কারও কম। এই সিস্টেমে ছন্দপতন হলে সমস্যা দেখা দেয়।
বমির সমস্যা সমতলে, জলে, আকাশে— যে কোনও জায়গায় হতে পারে। সাধারণত, দোদুল্যমান কোনও কিছুতে চড়লে এই ধরনের সমস্যা হতে পারে। সমাধানের উপায়?
অরিন্দম বললেন, ‘‘মোশন সিকনেসের জন্য নানা ধরনের ওষুধ রয়েছে। প্রোমেথাজ়িন থিওক্লেট, প্রোক্লোরপেরাজ়িন জাতীয় ওষুধ খেলে বমি হবে না।’’
কিন্তু, ওষুধ খেলেও অনেক সময় বমি হয়। তখন?
চিকিৎসকের পরামর্শ, ওষুধ কাজ করার জন্য অন্তত ৪-৬ ঘণ্টা সময় দিতে হবে। ওষুধ খেয়েই গাড়িতে উঠলে হবে না। যদি বমি হয়ে যায়, তা হলে আরও একটি ওষুধ খেতে হবে।
এ ছাড়া গাড়িতে ওঠার সময় ভর পেট খাওয়া বা খালি পেটে থাকা কোনওটাই ঠিক নয়। ভাজাভুজি বা মশলাদার খাবার খেয়ে উঠলেও সমস্যা বাড়তে পারে।
গাড়িতে বসে মোবাইল দেখা, বই না পড়াই ভাল। চোখ বন্ধ করে বিশ্রাম করলেও কাজ হবে।
টোটকা
বমি বন্ধ করার জন্য অনেকে অনেক রকম পরামর্শ দেন। যেমন, মুখে লবঙ্গ রাখা, লেবু পাতা বা কর্পূরের ঘ্রাণ নেওয়া ইত্যাদি। তবে বমির সমস্যা যাঁদের হয়, তাঁরা যদি গাড়ির জানলাটা খানিক খোলা রাখেন, তা হলে বাইরের হাওয়ায় স্বস্তিবোধ করবেন। পাহাড়ে গিয়ে এ ধরনের সমস্যা হলে মাঝেমধ্যে গা়ড়ি থেকে নেমে রাস্তায় ৫ মিনিট করে বিশ্রাম নিলেও শরীর ভাল লাগবে।