খুদের চকোলেটের বায়না সামাল দেবেন কী ভাবে? ছবি: সংগৃহীত।
ছোটরা চকোলেট, লজেন্স খাবে, সেটাই তো স্বাভাবিক। ক্রিম দেওয়া পেস্ট্রি দেখলে বায়না করাটাও সাধারণ বিষয়। কিন্তু ভাত, ফলের বদলে খাবারের তালিকার সিংহভাগ জুড়ে যদি চিনি যুক্ত এই ধরনের খাবার থাকে, তা হলে তা চিন্তার বিষয়। পুষ্টিবিদ অর্পিতা ঘোষদেব বলছেন, ‘‘চকোলেটে প্রচুর চিনি বা সিম্পল কার্বোহাইড্রেট থাকে। কারও জন্যেই সিম্পল কার্বোহাইড্রেট ও অতিরিক্ত নুন দেওয়া খাবার স্বাস্থ্যকর নয়। চকোলেটের একটা নেশা তৈরি হয়।’’ তিনি আরও বলেন, "শিশুর শরীরের জন্য শর্করার প্রয়োজন অবশ্যই, কিন্তু চকোলেট বা পেস্ট্রি বা লোভনীয় খাবার তো পরিমাণ মেপে কেউ খায় না। শিশুদের বাড়তি ক্যালোরির দরকার হয়। তবে কতটা খেলে শরীরের কাজে লাগবে, কতটা বাড়তি, তা এ ভাবে পরিমাপ করাও যায় না। সবচেয়ে বড় সমস্যা, এই ধরনের খাবারে জিভ এক বার অভ্যস্ত হয়ে গেলে, তখন শিশু অন্য খাবার খেতে চাইবে না। চকোলেট হোক বা পেস্ট্রি একদিন খেলে বা মাঝে মধ্যে একটু খেলে যে মারাত্মক ক্ষতি হয়ে যাবে, এমন নয়। কিন্তু তা যদি নিত্যদিনের অভ্যাসে পরিণত হয়, তা হলে ক্ষতিকর।’’ পুষ্টিবিদের মতে, কখনও স্কুল থেকে ফেরার পথে সন্তানকে খুশি করতে মা চকোলেট দিচ্ছেন, কখনও আবার কারও বাড়িতে গেলে কেউ দিচ্ছেন, কখনও খুদেকে ভোলাতে চকোলেট, লজেন্সের লোভ দেখানো হচ্ছে। তা থেকেই চকোলেট, পেস্ট্রি খাওয়াটা এক সময় অভ্যাসে পরিণত হতে পারে। পাশাপাশি, মনো-সমাজকর্মী মোহিত রণদীপ বলছেন, শিশুর অন্যায় জেদকে প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না। বরং তাকে বোঝানো প্রয়োজন।
কী ভাবে শিশুকে সামলানো যেতে পারে?
১. পেস্ট্রি, চকোলেটের জন্য বায়না করলে ফল বা বিভিন্ন ধরনের বাদামের সঙ্গে চকোলেটের একটা টুকরো কুচিয়ে দেওয়া যেতে পারে। একসঙ্গে পুরো চকোলেট খাওয়ার চেয়ে এ ভাবে পরিমাণ অন্তত কমানো যাবে বলেই পরামর্শ পুষ্টিবিদের। তবে তিনি মনে করেন, ছোট থেকে এই ধরনের খাবারের অভ্যাস যাতে না হয়, সেই চেষ্টাই করা দরকার। শিশুর বায়না সামলাতে চকোলেট বা পেস্ট্রির জায়গায় শিশুর পছন্দসই কিছু রাখা যেতে পারে। ঘরেই অল্প তেলে আলু ভাজা, পাঁপড়, বাদাম ভাজা সাধারণত শিশুরা পছন্দ করে। খুদের মিষ্টি পছন্দের হলে গুড় ও বাদাম দিয়ে চাক বানিয়ে দিতে পারেন, সাদা তিলের লাড্ডু তৈরি করে রাখতে পারেন। চকোলেটের তুলনায় তা ভাল, বলছেন পুষ্টিবিদ।
২. শিশু বায়না করলেই হাতের কাছে চকোলেট বা পছন্দের খাবার ক্ষতিকর হলে তা দেওয়া যাবে না, বলছেন মনো-সমাজকর্মী মোহিত রণদীপ। তাঁর পরামর্শ, এ ক্ষেত্রে শিশুকে কেন খাবারটি খাওয়া উচিত নয়, তা বোঝাতে হবে। অনেক সময় সেই কাজটি অভিভাবকরা করেন না। সেটা শুধু মুখের কথায় নয়। বেশি চকোলেট খেলে কী কী ক্ষতি হতে পা্রে, সেটা তার মতো করে উদাহরণ দেখিয়ে বোঝানো দরকার। পেস্ট্রি বেশি খেলে কেন শরীর ভাল থাকবে না, সেটা সে বুঝতে পারলে নিজেই বায়না কমিয়ে দেবে। বিষয়টি সহজ নয়, কিন্ত চেষ্টা করলে সে নিশ্চয়ই বুঝবে।
যে সময় খুদে মিষ্টি বা চকোলেটের জন্য বায়না করছে, সেই সময় যদি অন্য ভাবে ভুলিয়ে দেওয়া যায়, তাতেও তার মিষ্টি খাওয়ার পরিমাণ কমানো যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে ভুলিয়ে দেওয়া যেতে পারে তাকে খেলায় ব্যস্ত রেখে, ঘুরতে নিয়ে গিয়ে। তবে শিশুকে ভোলানোর জন্য মোবাইল দেওয়ার পক্ষপাতী নন মনো-সমাজকর্মী। বরং তাঁর কথায়, শিশুর জেদ অন্যায় মনে হলে তাকে প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না। স্পষ্ট করে দিতে হবে, এখন তাঁকে চকোলেট দেওয়া যাবে না। তবে পরে নিশ্চয়ই দেবেন। কবে দেবেন, সে কথা বলেও শিশুকে আশ্বস্ত করা যায়। তবে অভিভাবককেও কথা দিয়ে কথা রাখতে হবে।
৩. বড় বড় রেস্তরাঁতেও খাবার সাজিয়ে-গুছিয়ে পরিবেশন করা হয়। খুদে কিছু বোঝে না, এমনটা না ভেবে বরং কী ভাবে তাকে স্বাস্থ্যকর খাবার সুন্দর ভাবে পরিবেশন করা যায়, ভাবতে পারেন। মোহিতের কথায়, খাবার অনেক সময় শিশুর কাছে সুস্বাদু হয় না বলেই খায় না। এ ছাড়া তাকে যদি সুন্দর ভাবে খাবার সাজিয়ে দেওয়া যায়, তাতে কাজ হতে পারে। যেমন ডিমের পোচ, তার সঙ্গে সরু করে গাজর কেটে নাক, চেরি বা কালো আঙুর কেটে দুটো চোখ আর শসা দিয়ে মুখ করে দিলেই কিন্তু খুদে তা দেখে আগ্রহী হয়ে উঠবে। রুটিতে অনীহা থাকতে পারে। কিন্তু যদি বিটের রস বা পালংয়ের রস দিয়ে আটা মেখে রঙিন রুটি বা পরোটা পরিবেশন করা যায়, খুদে আকৃষ্ট হবে। তবে শুধু দেখতে ভাল হলেই হবে না, খাবারের স্বাদ ভাল হওয়াও জরুরি।
৪. বড়দের দেখেই খুদে ভাল অভ্যাস রপ্ত করতে পারে। বাড়িতে যদি রেস্তরাঁর খাবারের বদলে বাবা-মাকে সে স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে দেখে, ধীরে ধীরে সেটাই শিখবে। দিনে এক থেকে দু’বার অন্তত যদি সকলে একসঙ্গে বসে খাওয়ার অভ্যাস চালু করা যায়, তা হলে বাকিরা কী খাচ্ছেন, সে ব্যাপারে খুদে কৌতূহলী হবে।