দ্রুত ক্যালোরি ঝরাতে হাঁটার চেয়ে ভাল ব্যায়াম আর নেই। ছবি: সংগৃহীত।
বিয়েবাড়িতে গিয়ে দুটো টসটসে গরম গোলাপ জাম খেয়ে ফেলেছেন? তার পরেই মন খুঁতখুঁত করছে এ বার কী হবে! খেয়ে তো ফেললেন, সেই ক্যালোরি ঝরবে কী ভাবে? মেদ ঝরাতে সব রকম চেষ্টা করে যাচ্ছেন। খাওয়াদাওয়ায় লাগাম টেনেছেন। কিন্তু এক আধদিন একটু অনিয়ম হয়েই যায়। বিশেষ করে মিষ্টি খাব না খাব না, করেও দেখবেন একটা দুটো হাতে উঠেই আসছে। বন্ধুদের সঙ্গে সান্ধ্য আড্ডায় হোক বা অনুষ্ঠান বাড়িতে গিয়ে, গরম গোলাপ জাম দেখলে কার না খেতে ইচ্ছে করে! তখন আর ডায়েটের কথা অত মাথায় থাকে না। চিকিৎসকেরা বলছেন, ইচ্ছে হলে খান, তবে এর পরে কিছুটা কসরতও করে নিন। বেশি নয়। দুটো গোলাপ জামের ক্যালোরি পোড়াতে কিছুটা হাঁটাহাঁটি করলেই হবে।
জিমে যাওয়ার সময় যাঁদের নেই, অথবা ট্রেডমিলে দৌড়তে আলস্য লাগে, তাঁদের জন্য প্রাতঃভ্রমণ আদর্শ। হৃদরোগের চিকিৎসক সুধীর কুমার জানাচ্ছেন, প্রযুক্তির কল্যাণে অফিস যেমন উঠে এসেছে ড্রয়িং রুমে, লিফট যেমন কেড়ে নিয়েছে ধীর পায়ে উপরে ওঠার সিঁড়ি, তেমনই পায়ে হাঁটার বদলে লোকজন এখন টোটো, রিকশাতে চড়তেই বেশি অভ্যস্ত। হাঁটার একান্ত প্রয়োজন হলে ঘরে ট্রেডমিলে হাঁটেন। কিন্তু সকালে তাজা হাওয়ায় যদি খালি পায়ে ঘাসের উপর হাঁটা যায়, তা হলে তার থেকে ভাল ব্যায়াম আর কিছু হয় না। আসলে হাঁটার উপকারিতা এতটাই যে, শুধু হেঁটেই দূরে রাখা যায় বিভিন্ন অসুখবিসুখ। শুরুতে ১০ মিনিট টানা হাঁটার চেষ্টা করুন। তার পর সময় বাড়ান ধীরে ধীরে, শরীর বুঝে। ১০ মিনিট থেকে ১৫ মিনিট, তার পর ২০ মিনিট, শরীর ঝরঝরে লাগতে শুরু করলে ৩০ মিনিট।
চিকিৎসকের মতে, যদি দুটো গোলাপ জামের ক্যালোরি ঝরাতে হয়, তা হলে অন্তত ৩০ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা হাঁটতেই হবে। শুরুটা ধীর পায়ে শুরু করবেন, তার পর হাঁটার গতি বাড়াতে হবে। একটা গোলাপ জামে কম করেও ১৫০ থেকে ২০০ ক্যালোরি থাকে। তার মানে সেই হিসেবে দুটো গোলাপ জাম মানেই ৩০০ থেকে ৪০০ ক্যালোরি। যদি ৩০ মিনিট জোরে জোরে হাঁটা যায় তা হলে ২০০ থেকে ৩০০ ক্যালোরি পুড়বেই। আর যদি ১ ঘণ্টা হাঁটা যায়, তা হলে উপকার বেশি।
এখন অনেকেই বলবেন, সারা দিন অফিস, হাঁটব কখন? অথবা বাড়ি বসে কাজ করতে হচ্ছে, হাঁটব কোথায়? এই কখন এবং কোথায়ের সমাধান আপনার হাতেই আছে। বাড়ি বসে কাজ করছেন যাঁরা, তাঁরা দুপুরের খাওয়ার পরে বা কাজের ফাঁকে সামান্য বিরতি নিয়ে হাঁটুন। বাড়ির ছাদে, লনে, বা সামনের রাস্তায় কিছুটা হেঁটে নিন। বদ্ধ জায়গায় হাঁটার থেকে খোলা জায়গায় একটানা হাঁটা ভাল।
খুব ধীর গতিতে হাঁটলে হাঁটার উপকার সঠিক ভাবে পাওয়া যায় না। তার চেয়ে একটু জোরে হাঁটাই ভাল। তবে খেয়াল রাখতে হবে, হাঁটাটা যেন দৌড়নো না হয়ে যায়। প্রতিদিন ৩০ মিনিট হাঁটলে উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি অনেকাংশে কমে। শরীরে রক্ত সঞ্চালন ভাল হয়। হৃদরোগের সম্ভাবনা কমে যায়। রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতেও হাঁটা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। হাঁটলে মনও ভাল থাকে। মানসিক চাপ কমে। হাত ও পায়ের পেশি সচল থাকে, ফলে অস্থিসন্ধির ব্যথাবেদনাও কমে যায়।