তাপপ্রবাহ বাড়ছে ক্রমশ। ছবি: সংগৃহীত।
উষ্ণতার পারদ ক্রমশ চড়ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে তীব্র অস্বস্তি। দিনের বেলায় রাস্তায় পা রাখলেই ঝলসে যাচ্ছে চোখমুখ। আবহাওয়া দফতর জানাচ্ছে, গরম নাকি আরও বাড়বে। বেশ কিছু জেলায় তাপপ্রবাহের সতর্কতাও রয়েছে। অত্যধিক গরমে তাই নাজেহাল কমবেশি সকলেই। তীব্র গরমে অস্বস্তি যেমন রয়েছে, তেমনই অনেকে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। ডায়েরিয়া, বমি, হজমের গোলমাল তো লেগেই আছে। তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে ঝুঁকি বাড়ছে আরও বেশ কিছু অসুখের। মাত্রাতিরিক্ত গরম থেকেই হানা দিচ্ছে নানা ধরনের অসুস্থতা। চিকিৎসক সুবর্ণ গোস্বামীর কথায়, ‘‘যা গরম পড়েছে, তাতে সুস্থ থাকা সত্যিই একটা বড় চ্যালেঞ্জ। তবে সুস্থ তো থাকতেই হবে। তার জন্য প্রথমেই রোদ এড়িয়ে চলতে হবে। কারণ, এই প্রখর রোদের তাপ থেকেই বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি বাড়ছে।’’ গ্রীষ্মের মরসুম শুরুর সময় থেকেই ‘হিট ওয়েভ’ সবচেয়ে আশঙ্কার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই তাপপ্রবাহ থেকে কোন রোগগুলির ঝুঁকি বা়ড়ছে? জানাচ্ছেন চিকিৎসক।
হিট পিডিমা
গরমে অনেকের হাত-পা ফুলে যায়। চিকিৎসা পরিভাষায় যাকে ‘হিট পিডিমা’ বলে। অনেকেরই হয় এমন। বিশেষত পা বেশি ফুলে যায়। কখনও আবার হাত এবং পা একসঙ্গে ফুলে যায়। এই রোগেরও বিশেষ কোনও ওষুধ নেই। বিশ্রাম নিলে, বেশি করে জল খেলে আর উঁচু বালিশের উপর পা তুলে রাখলে দ্রুত সেরে ওঠা যায়।
হিট ক্র্যাম্প
গরমে কায়িক পরিশ্রম বেশি হলে কিংবা দীর্ঘ ক্ষণ শরীরচর্চা করলে ‘হিট ক্র্যাম্প’ হতে পারে। এমন হলে কাঁধ, ঘাড় এবং ঊরুর পেশিতে টান ধরে। বেশি করে জল খেলে অবশ্য স্বস্তি মেলে। তবে শুধু জল না খেয়ে ওআরএস কিংবা নুন-চিনির জল খেলে বেশি উপকার হয়। সেই সঙ্গে বিশ্রাম নিলে আর রোদ এড়িয়ে চললেই টান ধরা কমে যাবে।
হিট টিটানি
অত্যধিক তাপপ্রবাহে অনেক সময় হাত-পা বেঁকে যায়। হাত-পায়ের সাড় চলে যায়। হাত আর পা ভাঁজ করতেও বেগ পেতে হয়। এই ধরনের সমস্যাকে ‘হিট টিটানি’ বলে। এমন হলে প্রাথমিক ভাবে বিশ্রাম নেওয়া জরুরি। সেই সঙ্গে হাত-পা মালিশ করতে পারলে ভাল। পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিলে আর পরিমাণমতো জল খেলেই ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠা যায়।
হিট সিঙ্কোপ
মাথা ঘুরে যাওয়া, চোখমুখে অন্ধকার দেখা— প্রচণ্ড রোদে বেরোলে অনেক সময়ে এমন কিছু শারীরিক সমস্যা হয়। এগুলিকেই ‘হিট সিঙ্কোপ’ বলে। দীর্ঘ ক্ষণ আগুনের ধারে থাকলেও এমন হতে পারে। এমন হলে সঙ্গে সঙ্গে ঠান্ডা জলে স্নান করে নেওয়া জরুরি। কিংবা বরফজল দিয়ে গা-হাত-পা মুছে নিতে পারলে ভাল। অবশ্যই বেশি করে জল খেতে হবে। না হলে যে কোনও সময় এমন হতে পারে।
হিট স্ট্রোক
গরমের সময়ে সবচেয়ে ঝুঁকি থাকে হিট স্ট্রোক হওয়ার। এই স্ট্রোক হলে শরীর অত্যধিক শুকিয়ে যায়। ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়। শরীরের ভিতরটা গরম হয়ে যায়। কিন্তু হাত-পা ঠান্ডা থাকে। হৃৎস্পন্দনের গতি কমে যায়। শ্বাসপ্রশ্বাস নিতে সমস্যা হয়। কারও ক্ষেত্রে খিঁচুনি উঠতে পারে। ভুল বকা কিংবা সাময়িক ভাবে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়াও হিট স্ট্রোকের লক্ষণ। এমন হলে রোগীকে ভাল করে স্নান করিয়ে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।
ঘামাচি
ঘামাচি গরমের সবচেয়ে বড় সমস্যা। কিন্তু অনেকে বিষয়টিকে ততটাও গুরুত্ব দেন না। ঘামাচি কমাতে অধিকাংশেই ট্যালকম পাউডার ব্যবহার করেন। তাতে হিতে বিপরীত হয়। পাউডারের কারণে ঘর্মগ্রন্থিগুলিতে সংক্রমণ হয়। তখন চিকিৎসকের কাছে ছুটতে হয়। তবে আগে থেকেই বিষয়টি নিয়ে সচেতন হলে বাড়াবাড়ি হওয়ার সুযোগ থাকে না।