ঋতুস্রাবের সময় ধরা পড়ে হিমোফিলিয়ার লক্ষণ। ছবি: সংগৃহীত।
শরীরের কোনও অংশে কেটে গেলে কিছু ক্ষণ পর ওই কাটা জায়গায় রক্ত নিজে থেকেই জমাট বাঁধতে শুরু করে। রক্ত জমাট বাঁধার প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন ধরনের প্রোটিন কাজ করে। শরীরে এই সব প্রোটিনের অভাব হলে রক্তক্ষরণের রোগ হতে পারে। যাকে বলে ‘ব্লিডিং ডিজ়অর্ডার’। এই অসুখে আক্রান্তদের শরীরে কোথাও কেটে রক্ত সহজে জমাট বাঁধে না, রক্তক্ষরণ হতেই থাকে। সাধারণত রক্তে ‘অ্যান্টি হিমোফিলিক গ্লোবিউলিন’ না থাকলে মানুষ হিমোফিলিয়ার শিকার হন।
হিমোফিলিয়া মূলত জিনবাহিত রোগ। সব মানুষের মধ্যেই এক্স ক্রোমোজ়োম থাকে। মেয়েদের মধ্যে থাকে দুটো এক্স ক্রোমোজ়োম। আর ছেলেদের থাকে একটি এক্স ও একটি ওয়াই ক্রোমোজ়োম। এক্স ক্রোমোজ়োম রোগের ত্রুটিযুক্ত জিনের ফলে হিমোফিলিয়া হয়। কোনও ছেলে যদি বংশগত ভাবে এই ত্রুটিযুক্ত জিন পায়, তা হলে তাঁর হিমোফিলিয়া হবে। মেয়েদের মধ্যে এই রোগ খুব একটা দেখা যায় না। তবে কয়েকটি বিশেষ ক্ষেত্রে মেয়েরাও এই রোগের বাহক হতে পারেন। মেয়েদের ক্ষেত্রে এক্স ক্রোমোজোমে এই ত্রুটিপূর্ণ জিন থাকলে সে ‘হিমোফিলিয়া ক্যারিয়ার’ বা বাহক হবে। পরে তাঁর পুত্রসন্তান হলে সে হিমোফিলিয়ায় আক্রান্ত হবে। যদি কন্যাসন্তান হয়, তা হলে সে হবে বাহক। তাই একে বলা হয় ‘এক্স লিঙ্কড ডিজ়অর্ডার’।
হিমোফিলিয়ার লক্ষণ
কেটে গেলে রক্ত বন্ধ না হওয়া, পড়ে গিয়ে পেশিতে প্রচণ্ড ব্যথা হওয়া, মাথায় আঘাত লাগার সঙ্গে সঙ্গে ফুলে যাওয়া, ফোলা ভাব কমতে সময় নেওয়া— এ সবই হিমোফিলিয়ার লক্ষণ। এ ছাড়া মল-মূত্রের সঙ্গে রক্তক্ষরণ, মাঝেমাঝে নাক থেকে রক্তপাত, মাড়ি থেকে রক্তপাত, কিংবা সঙ্গমের সময়ও যদি অতিরিক্ত রক্তপাত হয়, সতর্ক হোন। মহিলাদের শরীরে ঋতুস্রাবের সময় হিমোফিলিয়ার বেশ কয়েকটি লক্ষণ ধরা পরে। এক ঘণ্টা অন্তর অন্তর প্যাড বদলানোর প্রয়োজন হওয়া, শরীরে আয়রনের ঘাটতি, সাত দিনেরও বেশি সময় ঋতুস্রাব হওয়া, ঋতুস্রাবের সময় চাকা চাকা রক্তপাত হিমোফিলিয়ার লক্ষণ হতে পারে। এই লক্ষণ দেখেও অনেক মহিলা তেমন গুরুত্ব দেন না, তাতেই সমস্যা বেড়ে যায়। এই লক্ষণগুলি দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে এক জন অভিজ্ঞ হেমাটোলজিস্টের সঙ্গে পরামর্শ করুন।