Cancer Risk

শুধু তামাক কিংবা গুটখা নয়! দেওয়ালের রং, মোমবাতি কিংবা কার্পেট থেকেও কর্কট রোগ হয়

‘কার্সিনোজেনিক’ বা ক্যানসার হতে পারে, এমন অনেক জিনিস নির্দ্বিধায় জীবন থেকে বাদ দিয়েছেন। কিন্তু বাড়ির জিনিস থেকেও যদি ক্যানসার হানা দেয়, তা হলে তো ভারী বিপদ।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৮:৪৪
Five items in homes that can cause cancer

গেরস্থালির কোন কোন জিনিস থেকে ক্যানসার হতে পারে? ছবি: সংগৃহীত।

‘নিশ্চিন্ত আর থাকা গেল না রে তোপসে!’

Advertisement

এত দিন জানতেন পান, বিড়ি, সিগারেট বা অতিরিক্ত পরিমাণে মদ্যপান করলে ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। দিন কয়েক আগে একটি গবেষণা প্রমাণ করে দিল, পানীয় জল, দুধ, প্যাকেট কিংবা বোতলজাত খাবারের মধ্যে প্লাস্টিকের সূক্ষ্ম কণা মিশে থাকে। সেই পানীয়ের মাধ্যমে রক্তবাহিকায় মিশছে বিসফেনল। যা শরীরের জন্য আসলে ‘বিষ’-ই। তা-ও না হয় মেনে নেওয়া যায়। কিন্তু গেরস্থালির জিনিস, অর্থাৎ নিত্য দিন যেগুলি বাড়িতে ব্যবহার করা হয়, সেই সমস্ত জিনিসের মধ্যেও নাকি ক্যানসারের বীজ লুকিয়ে রয়েছে। এ তো একেবারে লোহার বাসর ঘরে কালকেউটে প্রবেশ করার মতো অবস্থা!

মানুষ এখন আগের তুলনায় অনেক বেশি সচেতন। তামাক, গুটখা, নেশার দ্রব্য দূরে থাক। ‘কার্সিনোজেনিক’ বা ক্যানসার হতে পারে এমন অনেক জিনিস নির্দ্বিধায় জীবন থেকে বাদ দিয়েছেন। কিন্তু বাড়ির জিনিস থেকেও যদি ক্যানসার হানা দেয়, তা হলে তো ভারী বিপদ।

চিকিৎসকেরা বলছেন, যে কোনও প্রকারে শরীরে টক্সিনের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়তে থাকে। শুধু খাবার নয়, শ্বাসপ্রশ্বাসের মাধ্যমেও শরীরে নানা ধরনের দূষিত পদার্থ প্রবেশ করে। যে কারণে শরীরে টক্সিনের মাত্রা বাড়তে থাকে। বাড়ির নিত্য ব্যবহারের এমন অনেক জিনিস রয়েছে, যেগুলির মধ্যে ক্ষতিকর রাসায়নিক মিশে থাকে। পরোক্ষ ভাবে হলেও তা ক্যানসারের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

গেরস্থালির কোন কোন জিনিস ক্যানসারের বীজ বহন করে?

১) দেওয়ালের রং:

ঘরের দেওয়ালে নতুন রং করার পর তার ভোলই বদলে যায়। নতুন রঙের গন্ধ কিন্তু অনেকেরই ভাল লাগে। তবে চিকিৎসকেরা বলছেন, রঙের মধ্যে এমন সব বিষাক্ত রাসায়নিক থাকে, যেগুলি ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়িয়ে তোলে। বেঞ্জিন, টলুয়েন এবং ইথাইলবেঞ্জিনের মতো রাসায়নিক থাকে এই ধরনের রঙের মধ্যে। এ ছাড়া সীসার মতো ধাতুর অস্তিত্বও মেলে রঙে। এই সমস্ত পদার্থ শ্বাসপ্রশ্বাসের মাধ্যমে শরীরে মেশে। শ্বাসযন্ত্রেরও ক্ষতি করে। এমনকি ফুসফুসের ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

২) প্লাস্টিকের জিনিস:

নিরীহ দেখতে প্লাস্টিক যে ক্যানসারের কারণ, তা আজ অজানা নয়। ঘরোয়া দূষণের অন্যতম উৎস হল প্লাস্টিকের বিভিন্ন দ্রব্যের অবাধ ব্যবহার। জল রাখার জন্য, খাবার রাখার জন্য প্লাস্টিকের তৈরি নানা সামগ্রী আমরা প্রায়শই ব্যবহার করি। কিন্তু প্লাস্টিকে বিসফেনল যৌগ থাকে। এই যৌগ খাদ্যদ্রব্য ও জলের সংস্পর্শে এসে সেগুলিকে দূষিত করে। এর ফলে প্রস্টেটের মতো অঙ্গের ক্ষতি হতে পারে, গর্ভবতী মহিলাদের ভ্রূণেরও ক্ষতি হয়। প্লাস্টিককে পলি কার্বনেটে রূপান্তরিত করেও নানা রকম প্লাস্টিকের দ্রব্য ব্যবহৃত হয়। এর জন্য বিপিএ (বিপিএ বা বিসফেনল এ। এই যৌগ মূলত পলিকার্বনেট প্লাস্টিকের অন্যতম উপাদান) যৌগটির ব্যবহার করা হয়। বিপিএ আমাদের শরীরে বিভিন্ন খাদ্যবস্তু ও জলের মাধ্যমে প্রবেশ করে। সাধারণ কোনও প্লাস্টিকের বোতলে গরম জল রাখলে বা প্লাস্টিকের পাত্রে মাইক্রোওয়েভে খাবার তৈরি করলে অথবা পাত্রগুলিকে ডিটারজেন্টে ধুলে বিপিএ মুক্ত হয়। পরে খাবার ও পানীয়ের মধ্যে দিয়ে বিপিএ মানবদেহে প্রবেশ করতে পারে। বিপিএ-র জন্য স্তন ও প্রস্টেট ক্যানসারের মতো রোগ হতে পারে।

৩) নন-স্টিকের বাসন:

ইদানীং নন-স্টিক বা ‘টেফলন’-এর পরত দেওয়া দেওয়া বাসনে রান্না করার চল বেড়েছে। কারণ, এতে কম তেলে রান্না করা যায়। তেল কম খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভাল। কিন্তু এই টেফলন অতিরিক্ত তাপে গলে যায়। খাবারের সঙ্গে মিশে তা বিষে পরিণত হয়। যা ক্যানসারের আরও একটি কারণ। বিভিন্ন গবেষণায় তার প্রমাণ মিলেছে।

৪) মোমবাতি:

ভ্যাপসা ঘরের ভোল পাল্টে দিতে পারে সুগন্ধি মোবাতি। এই ধরনের মোমবাতি কিন্তু রাসায়নিক দিয়ে তৈরি। আগুনের তাপে রাসায়নিক থেকে যে ধরনের গ্যাস নির্গত হয়, তা শ্বাসপ্রশ্বাসের মাধ্যমে শরীরে মেশে। শরীরে টক্সিনের পরিমাণ বাড়তে থাকে। ঘরে সুগন্ধি ধূপ জ্বালালেও এই রকম সমস্যা দেখা দিতে পারে।

৫) কার্পেট:

ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে মেঝেতে কার্পেট পেতে রাখার চল রয়েছে অনেক বাড়িতেই। ‘ক্যালিফোর্নিয়া ডিপার্টমেন্ট অফ টক্সিক সাবস্ট্যানসেস কন্ট্রোল’-এর দেওয়া তথ্য বলছে, মেঝেতে পাতার এই কার্পেট বা রাগ্‌স ‘পার- অ্যান্ড পলিফ্লুয়োরোয়ালকাইল’ বা ‘পিএফএএস’-এর উৎস। এই ‘পিএফএএস’ হল এমন এক ধরনের সিন্থেটিক রাসায়নিক, যা ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেকাংশে বাড়িয়ে দেয়। বেশির ভাগ কার্পেটের মধ্যেই এই ধরনের রাসায়নিক থাকে।

আরও পড়ুন
Advertisement