কী খাচ্ছেন বুঝে খান। ছবি: সংগৃহীত।
যত দোষ বাইরের খাবারের! ৫৬.৪ শতাংশ শারীরিক অসুস্থতার মূলে রয়েছে অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার অভ্যাস। ‘ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ’ (আইসিএমআর)-এর সাম্প্রতিক গবেষণায় উঠে এসেছে এমনই তথ্য। প্রয়োজনীয় পুষ্টির অভাবেই নানা ধরনের শারীরিক সমস্যা বাসা বাঁধছে শরীরে। আর পুষ্টির অন্যতম উৎস হল খাবার। সেখানেই গলদ থেকে যাচ্ছে। তার ফলে শরীর জুড়ে ক্রনিক রোগের ছড়াছড়ি। ডায়াবিটিস, কোলেস্টেরল, ইউরিক অ্যাসিডের মত রোগ থাবা বসাচ্ছে দৈনন্দিন যাপনে।
দ্রুত গতির জীবনে অনিচ্ছা সত্ত্বেও বাইরের খাবারের উপর নির্ভরশীল হতে হয়েছে বাধ্য হয়ে। বাইরের খাবারের মুখরোচক স্বাদে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে জিভ। মনখারাপ হোক কিংবা উৎসবের দিন— উদ্যাপনের অঙ্গ তেল-মশলায় মাখামাখি রেস্তরাঁর খাবার। সাময়িক কোনও সমস্যা বিশেষ হয় না বলেই, এই ধরনের খাবারের প্রতি ঝোঁক এত বেড়ে গিয়েছে। শুধু যে অল্প বয়সিরা ভাজাভুজির প্রতি অনুরক্ত তা নয়, সব বয়সের মানুষই এই ধরনের খাবার খেতে পছন্দ করেন এবং নিয়মিত খান। বিপদ দানা বাঁধছে সেখান থেকেই। ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউ অফ নিউট্রিশন’ জানাচ্ছে, বাইরের খাবার যত বেশি শরীরে যাবে, রক্তচাপের মাত্রাও সেই হারে বৃদ্ধি পাবে। রক্তচাপের হাত ধরে হার্টের অসুখও বাসা বাঁধে শরীরে। অকালমৃত্যুর আশঙ্কাও ঝেড়ে ফেলা যায় না।
কিন্তু সুস্থ থাকা কঠিন নয় একেবারেই। বাইরের খাবার খাওয়া কমিয়ে দিলেই রোগবালাই অনেকটাই দূরে চলে যাবে। সুস্থ থাকতে ঘন ঘন চিকিৎসকের কাছেও যেতে হবে না। কোনও- কোনও ক্ষেত্রে খেতে হবে না ওষুধও। শুধু স্বাস্থ্যকর খাবার খেলেই প্রায় ৬০ শতাংশ ‘ক্রনিক’ রোগ আপনাকে আর ছুঁতে পারবে না।
বাইরের খাবারে স্বাদ আছে, রসনা তৃপ্তি আছে কিন্তু কোনও স্বাস্থ্যগুণ নেই। অথচ শরীর সুস্থ থাকে ভিটামিন, অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট, খনিজ পদার্থ ও মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টের গুণে। এই উপাদানগুলি যে খাবারে থাকে, সেগুলি সবচেয়ে কম খাওয়া হয়। বাইরের প্রক্রিয়াজাত খাবার, তেলেভাজা শরীরে এই উপাদানগুলির ঘাটতি তৈরি করে। তাতেই ধীরে ধীরে কঠিন অসুখের দিকে এগিয়ে যায় শরীর। তাই সুস্থ থাকতে বাইরের খাবার খাওয়ার প্রবণতা কমিয়ে আনতে হবে।
অসুস্থতা বয়স মানে না। যে কোনও বয়সে, যে কোনও রোগ হতে পারে। সম্প্রতি তারই প্রমাণ দিল ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউ অফ নিউট্রিশন’ (এনআইএন)। বয়স প্রৌঢ়ত্বের কাছাকাছি পৌঁছলে কোলেস্টেরলের ঝুঁকি থাকে। এই ধারণা যে ভুল তা দেখিয়ে দিল ‘এনআইএন’। ৫-৯ বছর বয়সি প্রায় ৩৪ শতাংশ শিশু উচ্চ কোলেস্টেরলে ভুগছে, জানাচ্ছে গবেষণা। খাওয়াদাওয়ায় রাশ না টানলে এই সংখ্যাটি আরও বাড়তে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছে ‘এনআইএন’। শাকসব্জি, ডাল, ফল, মাছ, দুধ— এই ধরনের খাবার বেশি করে খেতে বলছেন পুষ্টিবিদেরা। ইতিমধ্যেই যা ক্ষতি হয়েছে, তা পূরণ করা সম্ভব নয়। তবে স্বাস্থ্যকর খাবার খেলে খানিকটা হলেও বিপদ এড়ানো সম্ভব।