অতিরিক্ত ঘাম হয়? ছবি: সংগৃহীত।
গরমের এখন কোথায় কী! তাতেই ঘেমে-নেয়ে একেবারে যাচ্ছেতাই অবস্থা। ডিয়োডোর্যান্ট, অ্যান্টিপার্সপিরেন্ট— চৈত্রের রোদ কাউকেই খুব একটা মান্যিগন্যি করছে না। স্নান করে বেরিয়েও সারা শরীর থেকে অনবরত বারিধারা ঝরে চলেছে। শুধু কি তা-ই? পায়ের পাতা, হাতের তালুও বাদ যাচ্ছে না। তবে সকলের ঘামের পরিমাণ এক রকম নয়। চিকিৎসকেরা বলছেন, গরমকালে ঘাম হওয়া অস্বাভাবিক নয়। তবে অতিরিক্ত ঘাম, যাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় ‘হাইপারহাইড্রোসিস’ বলা হয়, তার চরিত্র আলাদা।
অতিরিক্ত ঘাম বা হাইপারহাইড্রোসিস কিন্তু সকলের হয় না। এই সমস্যা খানিকটা জিনগতও বটে। কাদের এই ধরনের সমস্যা হয়? অতিরিক্ত ঘাম হলেই বা কী করণীয়? চর্মরোগ চিকিৎসক দেবযানী চক্রবর্তী বললেন, “সকলের এই ধরনের সমস্যা হয় না। যাঁদের সিম্প্যাথেটিক স্নায়ুতন্ত্র অতিসক্রিয়, তাঁদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ঘামার প্রবণতা দেখা দিতে পারে। এ ছাড়া অতিরিক্ত ওজন, ডায়াবিটিস, থাইরয়েড হরমোনের সমতা বিঘ্নিত হলেও অতিরিক্ত ঘাম হয়।”
অতিরিক্ত ঘামছেন কি না বুঝবেন কী করে?
মল, মূত্র ত্যাগ করার মতোই ঘাম হওয়া শারীরবৃত্তীয় একটি প্রক্রিয়ার মধ্যেই পড়ে। ঘাম হওয়ার জন্য পরিবেশগত কিছু ফ্যাক্টর অবশ্যই দায়ী। পাশাপাশি, জীবনযাপন, মানসিক চাপ, শারীরিক সক্রিয়তার উপরেও ঘামার পরিমাণ নির্ভর করে। কিন্তু হাইপারহাইড্রোসিস হলে বিশেষ কোনও কারণ ছাড়াই ঘাম হতে পারে। এই কারণে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত ঘরে বসেও অনেকে ঘামেন। গরমে, রোদে বাইরে বেরোলে ঘাম হবেই। কিন্তু তা যদি অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায় কিংবা মুহূর্তে পোশাক ভিজে যায়, সে ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই ভাল।
অতিরিক্ত ঘামের অস্বস্তি থেকে মুক্তি পেতে আজকাল অনেকেই বোটক্সের সাহায্য নেন। যে সব স্নায়ু স্বেদগ্রন্থিকে উদ্দীপিত করে, সেগুলি অবরুদ্ধ করে দেওয়াই বোটক্সের মূল কাজ। বাহুমূল, হাতের তালু, পায়ের পাতায় ঘাম হওয়া রোধ করতে এই ধরনের চিকিৎসা দারুণ কাজ করে। তবে এই চিকিৎসাপদ্ধতি বেশ ব্যয়সাপেক্ষ। সে ক্ষেত্রে নিয়মিত স্নান করলে, অ্যান্টিপার্সপিরেন্ট ব্যবহার করলে, স্নানের জলে এসেনশিয়াল অয়েল মিশিয়ে নিলেও সমস্যার কিছু মাত্রায় সমাধান হয়।
এ ছাড়া, হাইপারহাইড্রোসিস রুখতে গেলে ডায়েটের দিকেও নজর দেওয়া প্রয়োজন। অতিরিক্ত তেলমশলা দেওয়া খাবার, ক্যাফিন, অ্যালকোহল থেকেও ঘামের পরিমাণ বাড়তে পারে। মানসিক চাপ কিংবা উদ্বেগের কারণেও ঘাম হয়। তা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে নিয়ম করে ধ্যান বা মেডিটেশন করতে পারলে ভাল হয়।