উপসর্গ মৃদু না-ও হতে পারে। ছবি: সংগৃহীত
দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম ওমিক্রনের খোঁজ পাওয়া যায়। তারপর থেকে করোনার এই নতুন রূপ নিয়ে নানা গবেষণা চলছে। কিছু গবেষণাপত্র ইঙ্গিত দিয়েছিল, ওমিক্রন হলে ডেল্টা প্রজাতির বিরুদ্ধে প্রতিরোধক্ষমতা গড়ে উঠতে পারে। কিন্তু সেই যুক্তি কতটা সত্যি, তা নিয়ে দুনিয়াজুড়ে বিভিন্ন চিকিৎসা মহলে সন্দেহ উঠতে না উঠতেই ফ্লুরোনা এবং ডেল্টাক্রনের আবির্ভাব। কারও ফ্লু এবং করোনা একসঙ্গে হচ্ছে, কারও শরীরে ওমিক্রন এবং ডেল্টা একসঙ্গে পাওয়া গিয়েছে। এতেই প্রমাণিত যে এই ভাইরাসের গতিবিধি আমরা এখনও বুঝতে পারিনি।
তবে ডেল্টার তুলনায় ওমিক্রনের উপসর্গ যেহেতু বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মৃদু, তাই অনেকেই ভাবছেন একবার হয়ে গেলে ক্ষতি কি? এমন কিছু অসুবিধা তো হবে না। উপরন্তু এর জন্য যা অ্যান্টিবডি তৈরি হবে শরীরে, হতে পারে ভবিষ্যতে আর করোনা হল না। ইউরোপ-আমেরিকায় অনেকের মধ্যে এই চিন্তাধারা খুব বেশি করে কাজ করছে। এতটাই যে, দেখা যাচ্ছে অনেকে বেপরোয়া হয়ে চাইছেনও, যাতে তাঁদের ওমিক্রনের সংক্রমণ হয়ে যায়। কিন্তু এই উন্মাদনার কোনও মানে নেই। বরং উল্টে এর ফলে মারাত্মক ক্ষতিও হয় যেতে পারে। জেনে নিন সেগুলি কী।
ওমিক্রন সাধারণ ঠান্ডা লাগা নয়
জ্বর, খুশখুসে কাশি, নাক দিয়ে জল পড়া, গলা ব্যথা, শরীরে ব্যথা ইত্যাদি ওমিক্রনের উপসর্গ হিসাবে দেখা দিচ্ছে। অনেকেই এই লক্ষণগুলিকে সাধারণ ঠান্ডা লাগা বা মৃদু উপসর্গ হিসাবে ধরে নিচ্ছেন। এটা ঠিক যে ওমিক্রনে আক্রান্ত রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি করানো বা মৃত্যুর ঝুঁকি ডেল্টার চেয়ে এখনও পর্যন্ত কম। তবে তার মানে এই নয় যে, ওমিক্রন কোনও দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা তৈরি করবে না। যেকোনও মুহূর্তে এটি ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করতেই পারে। তার জন্য আগে থেকেই সচেতন হওয়া প্রয়োজন।
উপসর্গ মৃদু না-ও হতে পারে
আপাতদৃষ্টিতে ওমিক্রনের উপসর্গগুলি খুব মৃদু মনে হওয়ায় অনেকেই ওমিক্রনকে হালকা ভাবে নিচ্ছেন। প্রাথমিক ভাবে ওমিক্রনের উপসর্গগুলি বাড়াবাড়ি রকমের কিছু নয় বলে মনে হলেও সকলের ক্ষেত্রে কিন্তু বিষয়টা এক নয়। টিকাকরণ হয়ে গিয়েছে এমন ব্যক্তির যদি কোনও অটোইমিউন রোগ থাকে বা কোনও কারণে তাঁর শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে, কিংবা তাঁর বয়স ৬৫-এর বেশি হয়, তা হলে ওমিক্রনের প্রভাবও ততটা মৃদু না-ই থাকতে পারে। কমবয়সিদের ক্ষেত্রেও এমনটা হতে পারে যদি কারও অজান্তেই তাঁর শরীরে কোনও গুরুতর সমস্যা বা রোগ থেকে থাকে।
বাচ্চাদের মধ্যে সংক্রমণ ছড়াচ্ছেন
প্রাপ্তবয়স্কদের দুটি টিকা নেওয়া থাকলেও বাচ্চাদের কিন্তু এখনও টিকাকরণ শেষ হয়নি। ১৫ বছরের কমবয়সিদের এখনও টিকাকরণ শুরুও হয়নি। ওমিক্রনকে হালকা ভাবে নেওয়ার আগে মাথায় রাখুন, বাড়ির খুদে সদস্যদের কথা। আপনার অসচেতনতার কারণে তারা সংক্রামিত হতে পারে। করোনা-স্ফীতির এই পর্যায়ও প্রচুর বাচ্চা প্রতিদিন সংক্রমিত হচ্ছে। ফলে ওমিক্রনকে প্রাথমিক ভাবে কম সক্রিয় মনে হলেও এই সংখ্যাটা কিন্তু যথেষ্ট উদ্বেগজনক।
স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে
আগের দু’বারে তুলনায় এই বারে হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যাটা শতাংশ হারে অনেক কম। মৃদু উপসর্গের কারণে অধিকাংশ মানুষই বাড়িতে নিভৃতবাসে আছেন। এটা যেমন খানিকটা হলেও আশাব্যঞ্জক তেমনি, অসচেতনতার কারণে মুহূর্তে ওমিক্রন হয়ে উঠতে পারে ভয়ঙ্কর। মৃতুর হার কম হলেও মৃত্যুর সংখ্যাটা হঠাৎ করে বৃদ্ধি পেতেই পারে। ইতিমধ্যেই দেশের বহু স্বাস্থ্যকর্মী সংক্রমিত। আবার এমন অনেকেই রয়েছেন যাঁদের উপসর্গ মাঝারি, কিন্তু বাড়িতে দেখার কেউ নেই। তাঁরা হয়তো হাসপাতালে ভর্তি হতে চাইবেন। কিন্তু তাতে অন্য রোগীদের জন্য হাসপাতালে বেড পাওয়া সমস্যা হয়ে উঠতে পারে। তাই ওমিক্রন স্রোতে হাসপাতালগুলি স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার আশঙ্কাও থেকে যায়। সতর্ক থাকাটা ভীষণ জরুরি।