Early Puberty

পছন্দের সুগন্ধি এগিয়ে আনছে কন্যার ঋতুস্রাব শুরুর সময়! আরও কিছু জিনিস ডাকছে অকাল বয়ঃসন্ধি

নিত্য ব্যবহারের জিনিসপত্রও কি সুরক্ষিত? গবেষণা বলছে, এমন কিছু রাসায়নিক মেশানো হচ্ছে, যা প্রভাব ফেলছে মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রে। বদলে যাচ্ছে হরমোনের ভারসাম্য।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৪:৫৩
Chemicals in household products might cause early periods in girls

বাড়িতে কী রাখলে এগিয়ে আসে শিশুর বয়ঃসন্ধির সময়? প্রতীকী ছবি।

কোভিড-পরবর্তী বিশ্বে নানা বদলের মধ্যে একটি হল অকাল বয়ঃসন্ধি। সময়ের আগেই হঠাৎ বড় হয়ে যাচ্ছে ছেলেমেয়েরা। শরীরে ও মনে দেখা দিচ্ছে তার লক্ষণ। ৮ বছর বয়সেই ঋতুস্রাব হয়ে যাচ্ছে। বদলে যাচ্ছে ঋতুচক্রের সময় ও ধরন। কেন হচ্ছে এমন? এর কারণ অনেক। তার মধ্যেই একটি হতে পারে ক্ষতিকর রাসায়নিকের অত্যধিক প্রভাব। সে রাসায়নিক আসতে পারে সুগন্ধি, ঘর পরিষ্কার করার সামগ্রী, কাপড় কাচার সাবান অথবা শৌচাগার কিংবা আসবাব পরিষ্কার করার সামগ্রী থেকে। এই সব রাসায়নিক খোঁচা দিচ্ছে মস্তিষ্কে। প্রভাব ফেলছে স্নায়ুতন্ত্রে। ফলে হরমোনের ভারসাম্যই বিগড়ে যাচ্ছে। যার মারাত্মক প্রভাব পড়ছে জননতন্ত্রেও।

Advertisement

আমেরিকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেল্‌থের চিকিৎসকেরা একটি গবেষণা করেছেন, যেখানে তাঁরা দাবি করেছেন যে, ঘরের কাজে ব্যবহৃত জিনিসপত্রে এমন কিছু রাসায়নিক মেশানো হচ্ছে, যা সরাসরি মস্তিষ্কে প্রভাব ফেলছে। ওই সব রাসায়নিকের কারণেই বয়ঃসন্ধি এগিয়ে আসছে ছেলেমেয়েদের। ‘এন্ডোক্রিনোলজি’ নামে একটি গবেষণামূলক পত্রিকায় এই প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে।

সুগন্ধি, ডিটারজেন্ট অথবা নরম পানীয়ে ব্যবহৃত রাসায়নিক ‘এন্ডোক্রিন ডিসরাপশন’-এর জন্য দায়ী, এমনটাই জানালেন কলকাতার বাইপাসের একটি বেসরকারি হাসপাতালের স্ত্রীরোগ চিকিৎসক মল্লিনাথ মুখোপাধ্যায়। ‘এন্ডোক্রিন ডিসরাপশন’ হল হরমোনের ভারসাম্যের বদল, যে কারণে শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়াগুলিই অনিয়মিত হয়ে যায়। শরীরের প্রতিটি কাজের নেপথ্যেই কোনও না কোনও হরমোন আছে। সেগুলি একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় নির্গত হয় এবং শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়াগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করে। যদি কোনও কারণে এই হরমোনগুলির নিঃসরণে সামঞ্জস্য না থাকে, তখনই বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেবে। তার মধ্যে যদি পুরুষ ও স্ত্রী যৌন হরমোন, যেমন টেস্টোস্টেরন, ইস্ট্রোজেন, প্রোজেস্টেরনের ভারসাম্য নষ্ট হয়, তখন তার রেশ পড়বে জননতন্ত্রের উপরেও। ঘরের কাজে ব্যবহৃত সামগ্রীর রাসায়নিক এই ক্ষতিটাই করছে।

মল্লিনাথ বুঝিয়ে বললেন, “পুরুষদের হরমোন টেস্টোস্টেরনের একটি অংশ হল ফেরোমন, যা পুরুষদের প্রতি মহিলাদের আকর্ষণের অন্যতম একটি কারণ। ঘর্মগ্রন্থি, লালা, প্রস্রাব এবং দেহরসের মধ্য দিয়ে এটি বাইরে আসে। এখনকার যে সুগন্ধিগুলি তৈরি হয়, তাতে কিছু পরিমাণে ফেরোমন মিশিয়ে দেওয়া হয়। সে কারণেই গন্ধের প্রতি আকর্ষণ জাগে। এখন যদি দিনের পর দিন এমন সুগন্ধি শিশুরাও মাখতে থাকে, তা হলে সময়ের আগেই তাদের হরমোনগুলির ক্ষরণ শুরু হয়ে যাবে। তখন বয়ঃসন্ধি এসে যাবে অসময়েই।” উদাহরণ দিয়ে চিকিৎসক বললেন, একটি সময়ে আতর ব্যবহার করা হত। আতরের সুগন্ধ ছড়ানোর কারণ প্রাকৃতিক। যত বেশি ঘাম হবে, ততই আতরের উপাদান ভেঙে বাষ্পীভূত হবে এবং চারদিকে ছড়িয়ে পড়বে। কিন্তু এখনকার সুগন্ধি বা প্রসাধনীতে এমন রাসায়নিক ব্যবহার করা হচ্ছে, যা ঘর্মগ্রন্থিগুলিকে বন্ধ করে দিচ্ছে। ফলে রাসায়নিক বাইরে না বেরিয়ে শরীরের ভিতরেই থেকে যাচ্ছে এবং রোমকূপ থেকে ধীরে ধীরে শরীরের ভিতরে চলে যাচ্ছে এবং জমা হচ্ছে। এখন রাসায়নিক যত বেশি তীব্র হবে, ততই তার ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে শরীরে।

কাপড় কাচার সাবান, মেঝে পরিষ্কারের অ্যাসিডে ব্লিচ, ২-বিউটোক্সিইথানল থাকে, যা কিডনি ও লিভারের অসুখের কারণ। এই রাসায়নিকগুলি মানুষের শরীরের জন্য বিষ। হরমোনগ্রন্থিগুলির ক্ষতি করে। আবার মাজন, হ্যান্ড স্যানিটাইজ়ার, মেকআপ, ডিয়োডরেন্টে থাকে ট্রাইক্লোসান নামে এক ধরনের রাসায়নিক, যা হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে। ঘর পরিষ্কার করার সামগ্রীর মধ্যে ‘কোয়াট্‌স’ নামক একটি রাসায়নিক থাকে, যা হাঁপানি এবং শ্বাসযন্ত্রের জটিল রোগ ‘সিওপিডি’-র সমস্যা বাড়িয়ে তোলে। এই ‘কোয়াট্‌স’ থাকতে পারে স্যানিটাইজ়ার, শিশুদের জন্য তৈরি ওয়াইপ্‌স ও বিভিন্ন প্রসাধনীতেও। তাই সব সময়ে ঘর পরিষ্কারের জিনিস, প্রসাধনী বা সুগন্ধি কেনার সময়ে সেই সব সামগ্রী কী উপাদানে তৈরি, তা যাচাই করে নিতে হবে। একমাত্র ভেষজ উপাদানে তৈরি জিনিসপত্রই কেনা ভাল। না হলেই অসুখবিসুখ বাড়বে।

আরও পড়ুন
Advertisement