Bird Flu

বার্ড ফ্লু মানুষের জন্য কতটা ভয়ের? কারা আক্রান্ত হতে পারেন? জরুরি পরামর্শ দিলেন চিকিৎসকেরা

বার্ড ফ্লু নিয়ে আতঙ্ক বেড়েছে। পাখিদের শরীরে যে রোগ হত, তা কি এ বার মানুষেরও হতে পারে? সবচেয়ে বড় প্রশ্ন এটাই।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ জুন ২০২৪ ১৬:০০
Bird Flu in India, all about the new strain, symptoms and treatment

বার্ড ফ্লু ভাইরাস মানুষের জন্য কতটা বিপজ্জনক, জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।

বার্ড ফ্লু ভাইরাস কি মানুষের শরীরেও হানা দিতে পারে? এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন সেটাই। পশ্চিমবঙ্গে বছর চারেকের একটি শিশু সংক্রমিত হওয়ার পর থেকে আতঙ্কটা যেন কয়েক গুণ বেড়ে গিয়েছে। করোনাভাইরাসের স্মৃতি মিলিয়ে যায়নি। তাই আরও এক জাঁদরেল ভাইরাস এসে মানুষের শরীরেই থাবা বসাবে, এটা ভাবলেই বুক দুরুদুরু করছে। হাঁস, মুরগির খামারে বার্ড ফ্লু ভাইরাস ছড়ায়, এটাই জানা ছিল এত দিন। মাঝেমধ্যে পরিযায়ী পাখিদের মৃত্যুর খবরও যে সামনে আসে না, তা নয়। এ বার কি তবে মানুষ?

Advertisement

‘বার্ড ফ্লু’ ভাইরাস প্রচণ্ড ছোঁয়াচে, তাতে কোনও সন্দেহই নেই। খামারে একটি হাঁস বা মুরগির শরীরে ভাইরাস ঢুকলে, কিছু দিনেই খামারের পর খামারে মড়ক লেগে যায়। আবার পরিযায়ী পাখিরাও সেই দূর দেশ থেকে ভাইরাস বয়ে নিয়ে আসে। তাদের সংস্পর্শে এসেও ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে দাবানলের মতো। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অনির্বাণ দলুই জানাচ্ছেন, বার্ড ফ্লু ভাইরাস নতুন নয়। বছরের এক-একটা সময়ে ভাইরাসের বাড়বাড়ন্ত হয়। বার্ড ফ্লু-কে বলা হয় ‘অ্যাভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা’। অর্থাৎ, পাখিদের থেকে যে ভাইরাস ছড়ায়। পাখিরা এই ভাইরাসের বাহক। কিন্তু মানুষের শরীরেও এই ভাইরাসের সংক্রমণ হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়।

বার্ড ফ্লু আসলে হল ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস। আর মানুষ ইনফ্লুয়েঞ্জাতে আক্রান্ত হয়ই। কাজেই বার্ড ফ্লু আক্রান্ত পাখির সংস্পর্শে এলে মানুষের শরীরেও ভাইরাস ঢুকতে পারে যে কোনও সময়ে। আর এই ভাইরাস খুবই ছোঁয়াচে। চিকিৎসক জানাচ্ছেন, এক জন মানুষের শরীরে ভাইরাস ঢুকলে, তার থেকে আরও পাঁচ জনের সংক্রমণ ছড়াতে পারে। আক্রান্তের হাঁচি, কাশি, থুতু-লালা, মলমূত্রের মাধ্যমে সুস্থ মানুষের শরীরেও চট করে ঢুকে যেতে পারে ভাইরাস।

বার্ড ফ্লু কাদের শরীরে ঢোকার ভয় বেশি?

হাঁস, মুরগির খামারে যাঁরা কাজ করেন অথবা পাখির কাঁচা মাংস বিক্রি করেন, তাঁদের ভয় বেশি, এমনটাই জানাচ্ছেন রাজ্যের আরও এক জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ সুবর্ণ গোস্বামী। বাড়ির পোষা পাখিরও সংক্রমণ হতে পারে। কাজেই যাঁদের বাড়িতে পাখি আছে, তাঁদেরও সতর্ক থাকতে হবে। পশু চিকিৎসকেরাও ঝুঁকির বাইরে নন। অসুস্থ পশু বা পাখির চিকিৎসা করতে গিয়ে যে কোনও সময়ে ভাইরাস ঢুকতে পারে শরীরে। সে দিকেও সতর্ক থাকা দরকার।

আক্রান্ত পাখির দেহাবশেষ, মলমূত্র থেকে ভাইরাস দ্রুত ছড়াতে পারে। কোথাও পোলট্রির মুরগি অস্বাভাবিক কারণে মারা গেলে বা কোনও বন্য পাখির অস্বাভাবিক কারণে মৃত্যুর ঘটনা ঘটলে দেরি না করে প্রাণীসম্পদ ও জনস্বাস্থ্য দফতরে জানানো জরুরি। মৃত পাখির সংস্পর্শে যাঁরা এসেছেন, তাঁদের উপরেও নজর রাখতে হবে।

মানুষের জন্য কতটা বিপজ্জনক হতে পারে বার্ড ফ্লু?

এখনই এই ভাইরাসকে বিপজ্জনক বলতে চাইছেন না চিকিৎসকেরা। তাঁরা জানাচ্ছেন, ভারতে এখনও পর্যন্ত দুই ধরনের বার্ড ফ্লু তথা অ্যাভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের স্ট্রেন পাওয়া গিয়েছে— এইচ৫এন১ এবং এইচ৭এন৯। শিশুটির শরীরে যে প্রজাতি ছড়িয়েছে, সেটি এইচ৯এন২। এ বার যদি দেখা যায় শিশুটির পরিবার বা পাড়ার কেউ আক্রান্ত হয়েছে, তা হলে বুঝতে হবে এই প্রজাতিই ছড়াতে শুরু করেছে। কিন্তু যেহেতু তেমন কোনও খবর পাওয়া যায়নি এখনও অবধি, তাই ভয়ের বিশেষ কোনও কারণ নেই।

মানুষের শরীরে ভাইরাস ঢুকলে ইনফ্লুয়েঞ্জার মতোই উপসর্গ দেখা দেবে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক সুবর্ণ গোস্বামী। নাক-মুখ দিয়ে জল পড়া, হাঁচি-কাশি, গায়ে-হাত পায়ে ব্যথা হবে। জ্বর আসবে। শ্বাসের সমস্যা হতে পারে। গলায় ব্যথাও হতে পারে। ক্ষেত্রবিশেষে নিউমোনিয়ার লক্ষণও দেখা দিতে পারে। এই সব লক্ষণ যদি দেখা দেয় তা হলে ভাইরাল প্যানেল টেস্ট করিয়ে নিতে হবে। চিকিৎসক যদি বোঝেন শরীরে ভাইরাসের স্ট্রেন রয়েছে, তা হলে তৎক্ষণাৎ চিকিৎসা শুরু হবে। শুরুতেই রোগীকে ‘ওসেল্টামিভির’ (ট্যামিফ্লু) নামে একটি ট্যাবলেট খাওয়ানো হবে। এতেই সংক্রমণ কমবে অনেকটাই। শ্বাসের কষ্ট হলে অক্সিজেন দিতে হবে। তা ছাড়া, রোগীকে নিভৃতবাসে রাখা জরুরি। রোগীর পরিবারের লোকজনকেও নিভৃতবাসে রেখে পরীক্ষা করিয়ে দেখতে হবে সংক্রমণ কারও মধ্যে ছড়িয়েছে কিনা।

বার্ড ফ্লু নিয়ে অযথা আতঙ্ক ছড়ানোর বা খামারগুলি এখনই বন্ধ করে দেওয়ার কোনও প্রয়োজন নেই বলেই মনে করছেন চিকিৎসক অনির্বাণ দলুই। তাঁর পরামর্শ, সংক্রমণ এখনও বহু মানুষের মধ্যে ছড়ায়নি। সে আশঙ্কাও কম। কাজেই যাঁরা খামারে কাজ করেন বা খামারগুলির আশপাশে থাকেন, তাঁদের একটু সতর্ক থাকতে হবে। বাড়ির পোষা পাখি অসুস্থ হচ্ছে কিনা সেটাও খেয়াল রাখতে হবে। বার্ড ফ্লু ছড়াতে পারে ভেবে খামারগুলিতে শয়ে শয়ে হাঁস, মুরগি বা বন্য পাখি মেরে ফেলাও কাজের কথা নয়। সচেতন থাকলেই এর প্রতিকার হবে।

আরও পড়ুন
Advertisement