কী ভাবে করবেন অর্ধচন্দ্রাসন? চিত্রাঙ্কন: শৌভিক দেবনাথ।
অফিসে দীর্ঘ ক্ষণ চেয়ার-টেবিলে বসতে হয়। কম্পিউটার বা ল্যাপটপে ঘাড় গুঁজে কাজ করেন। পিঠ, কোমর টান টান করে বসতে বললেও সব সময়ে তা খেয়াল থাকে না। আবার বাড়িতেও বেশির ভাগ সময়ে বিছানায় পেট মুড়ে বসে থাকেন। পিঠ, কোমরে ব্যথা হলে শরীর এলিয়ে দেন বিছানায়। তাতে সাময়িক আরাম হয়। রাতটুকু কেটে যায়। কিন্তু ব্যথা-বেদনা নিরাময় হয় না।
চিকিৎসকেরা বলছেন, দীর্ঘ দিন এই ভাবে বসার অভ্যাস হলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় মেরুদণ্ডটি আক্ষরিক অর্থেই আর সোজা নেই। পিঠ বেঁকে কুঁজো হয়ে গিয়েছে। সেখান থেকে আবার আগের পরিস্থিতিতে ফিরে যেতে হলে শরীরচর্চা ছাড়া উপায় নেই। যোগ প্রশিক্ষকেরা বলছেন, আসনেই এই সমস্যার সমাধান আসান হয়ে যেতে পারে। নিয়মিত অর্ধচন্দ্রাসন অভ্যাস করলে কুঁজো পিঠ, বক্র মেরুদণ্ড ঋজু হবে সহজেই।
সংস্কৃত ‘অর্ধ’ অর্থাৎ অর্ধেক, ‘চন্দ্র’ মানে চাঁদ। সুতরাং, এই আসন করার সময়ে দেহের ভঙ্গি এমন হবে, যেন দেখলে মনে হয়, তা আসলে এক ফালি চাঁদ।
কী ভাবে করবেন?
· প্রথমে ম্যাটের উপর টান টান হয়ে দাঁড়ান। দু’পায়ের মধ্যে বিশেষ ব্যবধান রাখার প্রয়োজন নেই। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক থাকবে।
· এ বার শ্বাস নিতে নিতে কোমর থেকে দেহের উপরিভাগ প্রথমে বাঁ পাশে প্রসারিত করুন। এমন ভাবে শরীরটাকে হেলিয়ে দেবেন, যেন বাঁ হাত দিয়ে মাটি স্পর্শ করতে পারেন।
· বাঁ হাতের তালু মাটি স্পর্শ করার সঙ্গে সঙ্গেই ডান পা মাটি থেকে ধীরে ধীরে দেহের একপাশে তুলতে শুরু করুন।
· ডান পা তত ক্ষণ পর্যন্ত উপরের দিকে উঠবে, যত ক্ষণ না বাঁ হাতের তালু মাটি স্পর্শ করে। বাঁ হাত এবং পা বাদ দিলে গোটা শরীর যেন এক সরলরেখায় থাকে। বাঁ হাত মাটি পর্যন্ত না পৌঁছলে ফোমের ব্লকের সাহায্য নিতে পারেন।
· এ বার ডান হাতটি প্রসারিত করুন আকাশের দিকে। এমন অবস্থানে ডান হাত রাখতে হবে, যেন বাঁ হাতের সঙ্গে তা এক সরলরেখায় থাকে।
· এই অবস্থানে থাকুন ১০ সেকেন্ড। এই ভঙ্গি রপ্ত করে ফেলতে পারলে ধীরে ধীরে সময় বাড়িয়ে ২০ সেকেন্ড পর্যন্ত করা যেতে পারে।
· এ বার ফিরে আসতে হবে আগের অবস্থায়। কিছু ক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে একই ভাবে অন্য পায়ে অভ্যাস করুন এই ভঙ্গিটি।
কেন করবেন?
শরীর, মন চনমনে থাকে। দেহের ভারসাম্য ধরে রাখার ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। ঊরু, গোড়ালি, পায়ের পাতার জোর বৃদ্ধি পায়। হ্যামস্ট্রিং মজবুত হয়। বুক, কাঁধ, কোমর, নিতম্বের পেশি স্ট্রেচ করতে সাহায্য করে। মেরুদণ্ডের গঠন ঠিক করার পাশাপাশি স্নায়ুতন্ত্রেরও খেয়াল রাখে এই ব্যায়াম।
সতর্কতা:
যাঁদের পেটে হার্নিয়া, আলসার জাতীয় সমস্যা রয়েছে, তাঁরা এই আসন করবেন না। অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় এই আসন অভ্যাস করা নিষিদ্ধ।