(বাঁ দিকে) শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, কৌশানী মুখোপাধ্যায় (ডান দিকে)। ছবি: সংগৃহীত।
শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় দ্বিতীয় বার বিয়ের পিঁড়িতে! এখানেই গল্পের শুরু। কোনও খ্যাতনামীকে নয়, দ্বিতীয় বিয়েতে তিনি নিমন্ত্রণ জানিয়েছেন নিজের স্ত্রী জিনিয়া সেনকেই। কাহিনী-চিত্রনাট্যকারও বিষয়টি নিয়ে সরব। তিনি সমাজমাধ্যমে লিখেছেন, “যখন উনি নিজেই আমাকে ওঁর বিয়েতে নিমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন।” জিনিয়া কি গিয়েছিলেন? জানতে আনন্দবাজার অনলাইন যোগাযোগ করেছিল তাঁর সঙ্গে। তিনি জানান, তিনি যাননি।
কেন যাননি জিনিয়া? কষ্ট হবে বলে? না কি, নির্বিঘ্নে যাতে বিয়েটা হয় তার জন্য? প্রশ্ন রাখা হয়েছিল তাঁর কাছে। সঙ্গে সঙ্গে শিবপ্রসাদের স্ত্রীর পাল্টা প্রশ্ন, “স্বামীর দ্বিতীয় বিয়ে দেখতে কোন মেয়ের ভাল লাগে? সেই কষ্ট থেকে যাইনি।” তিনি এখানেই থামেননি। যোগ করেছেন, “বছরে তিন-চারটে বিয়ে করবে শিবু। আমাকে তা সহ্য করতে হবে? কতখানি মানসিক যন্ত্রণা ভাবুন তো!”
প্রথম স্ত্রীকে বিচ্ছেদ না দিয়েই কেন দ্বিতীয় বিয়ে করলেন প্রযোজক-পরিচালক-অভিনেতা?
মোচড় এখানেই। এ বছরের পুজোয় উইন্ডোজ় প্রযোজনা সংস্থার উপহার ‘বহুরূপী’। নব্বইয়ের দশকের ব্যাঙ্ক ডাকাতি ছবির প্রেক্ষাপট। যাঁকে ঘিরে গল্প সেই অপরাধীর ভূমিকায় শিবপ্রসাদ। তাঁর বিপরীতে কৌশানী মুখোপাধ্যায়। শুক্রবার প্রকাশ্যে ছবির প্রথম গান ‘শিমুল পলাশ’। সেখানেই কৌশানীকে বিয়ে করেছেন শিবপ্রসাদ। যা নিয়ে কপট দ্বৈরথে বাস্তবের স্বামী-স্ত্রী শিবপ্রসাদ-জিনিয়া। গ্রাম বাংলার বিয়ের এই গানটি লিখেছেন, সুর দিয়েছেন, গেয়েছেন ননীচোরা দাস বাউল। তাঁর সঙ্গে গানটিতে সুর দিয়েছেন এবং গেয়েছেন বনি চক্রবর্তী। গেয়েছেন শ্রেষ্ঠা দাসও। গানে মাটির গন্ধ ধরে রাখতে বাংলার কিছু বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে। যেমন, দোতারা, দুপকি, ধামসা, মাদল, খমক।
দ্বিতীয় বার বিয়ে করলেন! খুশি? আনন্দবাজার অনলাইন যোগাযোগ করেছিল ছবির নায়কের সঙ্গেও। দরাজ হাসি হেসে তাঁর দাবি, “পর্দার বলুন!” তার পর জানালেন, শুরুতে একটু অস্বস্তি কাজ করেছে তাঁর। কারণ, কৌশানীর সঙ্গে প্রথম কাজ। শুরুতে তাই রসায়ন ঠিকমতো ফুটছিলও না। শিবপ্রসাদের দাবি, “বলতে পারেন, আমাকে প্রায় মারতে বাকি রেখেছিলেন পরিচালক নন্দিতা রায়। কিছুতেই প্রেমের দৃশ্যে সাবলীল হতে পারছি না। জিনিয়া ওই জন্যই আসেনি। বাকিরা সমানে আমাকে সহজ করতে মজা করেছেন, ‘শিবুদা, তোমার স্ত্রী ধারেপাশে নেই। তুমি মন দিয়ে প্রেম করো, বিয়ে করো।’” সকলের সমর্থন পাওয়ার পরেই অভিনয়ে সহজ হলেন? ছবির নায়কের দাবি, নন্দিতা রায় তাঁকে আর কৌশানীকে ডেকে বোঝানোর পর দৃশ্যগুলো জীবন্ত হয়েছে।
রোম্যান্টিসিজ়ম তখনই আসে, যখন গানের ভাষা, সুরে ঠিক ততটাই প্রেম থাকে, যুক্তি শিবপ্রসাদের। সেই জায়গা থেকেই তাঁর দাবি, ‘‘আজ বসন্তের গায়েহলুদ, কাল বসন্তের বিয়া, শিমুল-পলাশ সাজবে আজি নাকে নোলক দিয়া’’ গানের এই পঙ্ক্তি তাঁর মন তৈরি করে দিয়েছে। বাকিটা তাঁর থেকে আদায় করে নিয়েছেন কৌশানী স্বয়ং! পর্দায় যাতে তাঁদের প্রেমিক-প্রেমিকা কিংবা দম্পতি হিসাবে বাস্তব মনে হয় তার জন্য নায়িকা নিজের অনুভূতি নিংড়ে দিয়েছিলেন। যার জেরে সমানতালে নায়কও নিজেকে উজাড় করে দিয়েছিলেন। শিবপ্রসাদের কথায়, “বাংলার নানা জায়গায় ধাপে ধাপে গানটির শুটিং হয়েছে। প্রেম থেকে পরিণয়ের প্রত্যেকটা যাপন নিখুঁত ভাবে ফুটিয়ে তোলা হবে। দুর্ঘটনার পর তখন সদ্য শুটিংয়ে ফিরেছি। নৌকোয় প্রেম করতে হবে। একটি দৃশ্যে মাটিতেও বসতে হবে। যা আমার করা বারণ।” নায়ক চিকিৎসকের নির্দেশ না মেনেই প্রত্যেকটা শট দিয়েছেন। যাতে দৃশ্য বাস্তব হয়।
প্রকাশিত গানের দৃশ্য বলছে, বেশি মনোযোগ নাকি কৌশানীকে সিঁদুর পরানোর সময় ছিল?
ফের জিনিয়ার কপট রাগ, “আমাকে বলা হয়েছে, শিবু নাকি সত্যি সিঁদুর পরায়নি! নন্দিতাদি অনুমতি দেননি। আগেই কৌশানীর সিঁথিতে সিঁদুর ছিল। শিবু শুধুই অভিনয় করেছে।”এ-ও দাবি জানান, এই প্রশ্ন শিবপ্রসাদকেও করা উচিত। একই প্রশ্ন ছবির নায়ককে করা হলে, ফের হেসে ফেলেছেন তিনি। সিলমোহর দিয়েছেন জিনিয়ার কথায়। জানিয়েছেন, সত্যিই তিনি সিঁদুর পরাননি।
শিবপ্রসাদের একের পর এক বিয়ে তাঁর স্ত্রীকে তো মানসিক ভাবে কষ্ট দিচ্ছে... কথা ফুরনোর আগে যাবতীয় দুষ্টুমি ভুলে হেসে ফেলেছেন জিনিয়া। বলেছেন, “নিজের স্বামীর বিরুদ্ধে আর কি মিটু অভিযোগ আনব?” তার পরেই ফের খুনসুটির মেজাজে। জানিয়েছেন, শিবপ্রসাদের পথে নাকি তিনিও হাঁটবেন। অভিনেতা স্বামীকে ছাড়বেন না। কিন্তু বছরে তিন-চারটে বিয়ে তিনিও করবেন!