Puja Release 2024

এই প্রথম নন্দনে পুজোর বাংলা ছবি নেই! মিঠুন-বিতর্ক এড়াতেই হল পেল না ‘টেক্কা’, ‘বহুরূপী’ও?

সোহমের অভিযোগ, “একা নন্দন কী করবে? শহরের বাকি পরিবেশক, হল মালিকেরাও তো মিঠুনদার ছবিকে ভাল শো টাইম, প্রেক্ষাগৃহ দিলেন না!”

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০২৪ ১৬:৫৯
Image Of Puja Release 2024

নন্দনে কেন নেই পুজোর বাংলা ছবি? গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

এই প্রথম নন্দনে পুজোর বাংলা ছবি নেই! এমনিতেই আরজি কর-কাণ্ড-সহ নানা কারণে এ বছরের পুজোয় বাংলা ছবির সংখ্যা অন্যান্য বছরের তুলনায় কম। একাধিক ছবিমুক্তির সম্ভাবনা তৈরি হয়েও শেষ পর্যন্ত প্রেক্ষাগৃহে রাজত্ব চালাচ্ছে নন্দিতা রায়-শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের ‘বহুরূপী’, দেব-সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ‘টেক্কা’, মিঠুন চক্রবর্তী-সোহম চক্রবর্তীর ‘শাস্ত্রী’। খবর, সারা বাংলায় তিনটি ছবির ফলাফল ভাল। অথচ, তিনটি ছবির একটিও সরকারি প্রেক্ষাগৃহ নন্দন বা রাধা স্টুডিয়ো-য় নেই! কেন?

Advertisement

এই প্রেক্ষিতে উঠে আসছে একাধিক কারণ। প্রথম এবং প্রধান কারণ, অনীক দত্তের পর মিঠুন চক্রবর্তীর ছবি কোনও সরকারি প্রেক্ষাগৃহে জায়গা না পাওয়া। ঘটনার সূত্রপাত মিঠুন-দেব অভিনীত ছবি ‘প্রজাপতি’ দিয়ে। যদিও সুমন ঘোষের ‘কাবুলিওয়ালা’ নন্দনে দেখানো হয়েছে। সেই ছবিতে মুখ্য অভিনেতা ছিলেন তিনিই। শাসক দলের বিধায়ক-অভিনেতা সোহম চক্রবর্তী ‘শাস্ত্রী’ ছবির প্রযোজক। মিঠুনও সম্প্রতি বিনোদন দুনিয়ার সর্বোচ্চ সম্মান পেয়েছেন। তা সত্ত্বেও কেন তাঁর ছবি নন্দনে নেই? প্রশ্ন তুলেছে টলিপাড়া। এ-ও শোনা যাচ্ছে, আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে বাংলা বিনোদন দুনিয়ার ডাকা মিছিলে হেঁটেছেন শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। আর্টিস্ট ফোরামের ডাকা সমাবেশ মঞ্চে বিরোধী শিবিরের রূপা গঙ্গোপাধ্যায়ের পাশে বসে কথা বলতে থাকতে দেখা গিয়েছে শাসক দলের সাংসদ দেবকে। এই কোপেই কি নন্দনে জায়গা পেল না তাঁদের ছবিও? অথচ, এর আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারে বারে জানিয়েছেন, বিনোদন দুনিয়া সব সময় রাজনীতির ঊর্ধ্বে থাকবে।

সমস্ত সম্ভাবনা ছাপিয়ে উঠে আসছে যে বক্তব্য তা এই, মিঠুনের ছবিকে নন্দন বা রাধায় না দেওয়াকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যেই বিতর্ক তৈরি হয়েছে। যার উপরে প্রথম আলোকপাত করেছিল আনন্দবাজার অনলাইন। সেই বিতর্ক ধামাচাপা দিতেই কি বাকি দু'টি ছবিও নন্দন, রাধা স্টুডিয়ো-য় জায়গা পেল না? যাতে শাসক দলের নিরপেক্ষ ভাবমূর্তি জনমানসে তৈরি হয়। অন্য এক সূত্রের দাবি, আগামী ৪ ডিসেম্বর শুরু হবে কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব। পুজোর পরেই নন্দনে শুরু হবে মেরামতি ও সংস্কারের কাজ। সেই জন্য পুজোর ছবি নেওয়া হয়নি। তবে, খোঁজখবর করে অন্য তথ্যও পাওয়া যাচ্ছে। যেমন, সাম্প্রতিক আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে একাধিক মিছিল নন্দন চত্বর থেকেই শুরু হয়েছিল। পুজোর মধ্যে নন্দন খোলা থাকলে সম্ভাব্য কোনও জমায়েত যাতে আর না হয়, তার জন্যই নাকি এই পদক্ষেপ রাজ্য সরকারের। উল্লেখ্য, অষ্টমী থেকে বন্ধ থাকবে নন্দন।

এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক টলিপাড়ার এক পরিবেশক বলেছেন, ‘‘নন্দনে ৯০০টি আসন। টিকিটের দামও সাধারণ দর্শকের হাতের মুঠোয়। এ রকম একটা প্রেক্ষাগৃহে পুজোর ছবি দেখানো হলে মুনাফা অনেকটাই বাড়তে পারত। দুঃখের বিষয়, পুজোর ছবিগুলো নন্দনে জায়গাই পেল না!’’ এ দিকে নন্দন সূত্রে খবর, তিনটি ছবিই জমা পড়েছিল। ছবিগুলি নির্বাচিতও হয়। কিন্তু কোনও এক অজ্ঞাত কারণে ছবিগুলিকে শো দেওয়া হয়নি।

বিষয়টি নিয়ে কথা বলার জন্য নন্দন কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি আনন্দবাজার অনলাইন কথা বলেছিল তিন পরিচালক প্রভাত রায়, হরনাথ চক্রবর্তী, প্রেমেন্দু বিকাশ চাকীর সঙ্গে। তিন পরিচালকই জানিয়েছেন, এ বিষয়ে তাঁরা কিছুই জানেন না। যা বলার বলবেন নন্দন কর্তৃপক্ষ। নন্দনের তরফে শর্মিষ্ঠা বন্দ্যোপাধ্যায় আগেই জানিয়েছিলেন, তিনি বিষয়টি নিয়ে কিছুই বলবেন না। উল্লেখ্য, গত বছরেও নন্দনে পুজোর ছবি শো পেয়েছিল।

এ বারের পুজোর বাংলা ছবিগুলোর আরও একটি বিশেষত্ব, তিনটি ছবির প্রযোজকই তাঁদের ছবিতে অভিনয় করেছেন। সেই প্রযোজক-অভিনেতারা বিষয়টি নিয়ে কী ভাবছেন?

প্রযোজক দেব অধরা। শিবপ্রসাদের দাবি, তিনি সঠিক কারণ সম্বন্ধে কিছুই জানেন না। ফলে, এ বিষয়ে মন্তব্য করতে নারাজ। অন্য দিকে, সোহম ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন। তাঁর অভিযোগ, “অবশ্যই নন্দনের নির্দিষ্ট এক দল দর্শক রয়েছেন। তাঁরা ছবি দেখার প্রতীক্ষায়। কিন্তু একা নন্দন কী করবে? শহরের বাকি পরিবেশক, হল মালিকেরাও তো মিঠুনদার ছবিকে ভাল শো টাইম, প্রেক্ষাগ়ৃহ দিলেন না! এই অন্যায়ের বিচার কে করবে?”

Advertisement
আরও পড়ুন