‘হুইসপার্স অফ ফায়ার অ্যান্ড ওয়াটার’ ছবির একটি দৃশ্য। ছবি: সংগৃহীত।
আশপাশের পরিচিত ভূভাগের সঙ্গে অঞ্চলটির পার্থক্য রয়েছে। যত দূর চোখ যায়, শুধুই রুখু জমি এবং আগুন। তার আড়ালেই গড়ে উঠেছে এক অন্য সমাজ, অন্য রাজনীতি। কলকাতার ছেলে পরিচালক লুব্ধক চট্টোপাধ্যায়ের প্রথম কাহিনিচিত্রের প্রেক্ষাপট কয়লা খনি অঞ্চল। এক জন সাউন্ড ইন্সটলেশন শিল্পী ধানবাদের ঝরিয়া কয়লাখনি অঞ্চলে গিয়ে পড়ে এবং কী ভাবে তার জীবন বদলে যায়, তা এই ছবির উপজীব্য। ছবির নাম ‘হুইসপার্স অফ ফায়ার অ্যান্ড ওয়াটার’। দেশ-বিদেশের একাধিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শনের পর এ বার কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবে ভারতীয় ভাষার ছবির প্রতিযোগিতা বিভাগে দেখানো হচ্ছে ছবিটি।
এর আগে তথ্যচিত্র এবং স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবি তৈরি করেছেন লুব্ধক। কিন্তু এই ছবির নেপথ্যে ভাবনা কী? পরিচালক বললেন, ‘‘২০১৭ সালে একটা তথ্যচিত্রের কাজে খনি অঞ্চলের সঙ্গে আমার প্রথম পরিচিতি। ওখানে যেতে যেতে ওই সমাজটাকে খুব কাছ থেকে দেখেছি। এক জন বহিরাগত হিসেবে আমার সামনে একটা অন্য দুনিয়া উপস্থিত হয়েছিল। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাও এই ছবিতে জায়গা পেয়েছে।” পরিচালক জানালেন, বিবিধ শব্দের চারিত্রিক গতিবিধিও তাঁর এই ছবিটি তৈরির নেপথ্যে অন্যতম অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছিল। লুব্ধকের কথায়, ‘‘একটা বিস্তীর্ণ ভূভাগের ক্রমাগত পরিবর্তনের দলিল এই ছবি। শব্দ দিয়েও যে অভিজ্ঞতা এবং গল্প বলা যায়, তা এই ছবিটা দেখলে দর্শক বুঝতে পারবেন।”
ছবিতে অভিনয় করেছেন সাগ্নিক মুখোপাধ্যায়, অমিত সাহা, রোহিনী চট্টোপাধ্যায়, সৈকত চট্টোপাধ্যায়, দীপক হালদার। তথাকথিত ‘বড়’ শিল্পী নেই। এই প্রসঙ্গে লুব্ধকের যুক্তি, ‘‘এঁরা প্রত্যেকেই শক্তিশালী অভিনেতা। আমি নিজে চিত্রনাট্যের দাবি মেনে কাস্টিং করার পক্ষপাতী। এই ছবির ক্ষেত্রেও সেটাই চেষ্টা করেছি।” পরিচালক জানালেন, ছবিটির ভাষা মূলত হিন্দি এবং বাংলা। ইংরেজিও রয়েছে। ছবিটির প্রযোজক বৌদ্ধায়ন মুখোপাধ্যায়, মোনালিসা মুখোপাধ্যায়, শাজি ম্যথিউ এবং অরুণা ম্যথিউ।
২০২১ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে ছবির শুটিং সেরেছেন। চলতি বছরেই লোকার্নো চলচ্চিত্র উৎসবে ছবির ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার হয়েছে। দেখানো হবে কেরালা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবেও ছবিটি। কিন্তু কলকাতায় ছবির প্রদর্শন পরিচালকের কাছে বাড়তি প্রাপ্তি। লুব্ধক বললেন, ‘‘আমাদের টিমের সিংহভাগই কলকাতার। তাই প্রথম ছবি নিজের শহরের দর্শকদের দেখানোর একটা অন্য রকম ভাললাগা কাজ করছে।”
আপাতত এই ছবিটি নিয়ে ব্যস্ত পরিচালক। ঝরিয়া অঞ্চলের মানুষদের নিয়ে ‘ডান্সিং ইন দ্য ফায়ার’ নামে একটি তথ্যচিত্র তৈরি করছেন লুব্ধক। পাশাপাশি তাঁর পরবর্তী কাহিনিচিত্রের চিত্রনাট্য নিয়ে কাজ শুরু করেছেন তিনি।