জুন মালিয়া
রাজনৈতিক সৌজন্যের পক্ষে তিনি। নিজে জানিয়েছেন, ভোটগণনার দিন গণনা কেন্দ্রে বিরোধী প্রার্থী সমিত দাসের সঙ্গে তাঁর সহাবস্থানের কথা। তা হলে শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়, পায়েল সরকার, তনুশ্রী চক্রবর্তী মদন মিত্রকে সৌজন্য দেখিয়ে কী ভুল করলেন? আনন্দবাজার ডিজিটালের কাছে মুখ খুললেন জুন মালিয়া
প্রশ্ন: দিলীপ ঘোষের গড়ে ১৫টি আসনের ১৩টি আপনার দখলে। কেমন লাগছে?
জুন: ভীষণ ভাল লাগছে। দলও খুশি আমার উপর। আমি নিজেই নিজের জয়ে প্রচণ্ড আনন্দিত। আগেই বলেছিলাম, দিলীপ ঘোষের গড় ভীষণ শক্ত ঠাঁই। তার উপর ২০১৯-এ লোকসভায় কিছুটা বিপর্যস্ত হয়ে গিয়েছিল দল। সেখানে এই ফলাফল করতে পারব ভাবতেই পারিনি। এর জন্য ধন্যবাদ জানাব মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। যিনি মেদিনীপুর (পশ্চিম) অধিবাসীদের প্রচুর উন্নয়ন করেছেন। তাই সবাই আমার উপর ভরসা রাখতে পেরেছিলেন। অঞ্চলের মেয়েরা ঢেলে ভোট দিয়েছেন আমায়।
প্রশ্ন: কে জিতলেন? ‘আর্যর মা’ না জুন?
জুন: (হাসি) আমার ২টো সত্তাই কাজ করেছে বলে মনে হয়। কারণ, প্রচারে গিয়ে দেখেছিলাম স্থানীয় মহিলারা আমার ২টো সত্তাকেই পছন্দ করেন। তাঁরা চান, আমি দুই পেশাতেই সাবলীল থাকি।
প্রশ্ন: এ বারের সার্বিক ফলাফল প্রত্যেক দলের কাছেই অপ্রত্যাশিত...
জুন: প্রচুর ভোটদাতা নীরবে ব্যালট বক্সে তাঁদের মতামত জানিয়েছেন। শুধুই বাংলা বা বাঙালি ভোট দেয়নি এ বার। সবাই মিলে এই জয় ছিনিয়ে এনেছেন। বংলার দিকে গোটা বিশ্ব তাকিয়ে ছিল। আমি বলব, মানুষের দোয়া, প্রার্থনা, আশীর্বাদ, শুভেচ্ছা, ভালবাসা এক সঙ্গে মিলে গিয়ে এই ফল প্রকাশিত হয়েছে।
প্রশ্ন: কিন্তু রাজ্যজুড়ে হিংসা, এটা কাম্য ছিল?
জুন: একটু সময় দিন। সব শান্ত হয়ে যাবে। অবস্থা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে। আর কয়েক দিনের মধ্যে সেটাও থেমে যাবে। তবে বিজেপি তো হিংসা বন্ধ করার দল নয়।
প্রশ্ন: বিজেপি নিজের দলের সদস্যদেরই এখন কটূক্তি করছে! তথাগত রায়...
জুন: (থামিয়ে দিয়ে) জানি, শুনেছি। একটা কথাও বলব না। ওদের ঝামেলা ওরা বুঝে নিক। খারাপ ফল করে মাথাখারাপ হয়ে গিয়েছে ওদের। যে যাঁকে পারছেন দোষারোপ করছেন।
প্রশ্ন: কঙ্গনা রানাউত ‘দিদি’কে রাবণ বলে ফেললেন!
জুন: ওঁকে আমি ধর্তব্যের মধ্যেই আনি না। এ টুকু বলতে পারি, ওঁর মাথা, মন সবটাই খারাপ হয়ে গিয়েছে। কঙ্গনার এক্ষুণি ভাল কোনও মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে যাওয়া উচিত।
প্রশ্ন: কাঞ্চনা মৈত্র কিন্তু ‘সংযত প্রার্থী’ হিসেবে হিরণ চট্টোপাধ্যায় আর আপনার উদাহরণ দিয়েছেন...
জুন: তাই?
প্রশ্ন: আপনার প্রশংসাও করেছেন...
জুন: সম্মান দিলে সম্মান পাওয়া যায়। দলমত নির্বিশেষে পারস্পরিক শ্রদ্ধা, সম্মান, সৌজন্যবোধ থাকা উচিত। এটাই আমার বিশ্বাস। সেই বিশ্বাস থেকেই বিজেপি প্রার্থী সমিত দাসের সঙ্গে বসে ভোট গণনা দেখেছি। আমাদের কোনও অসুবিধে হয়নি। আমরা যে যার দলকে বলেছিলাম সংযত থাকতে। । গণতন্ত্রবিরোধী আচরণ না করতে। এটাই সবার মেনে চলা উচিত।
প্রশ্ন: শ্রাবন্তী, পায়েল, তনুশ্রী এই সৌজন্য দেখাতে গিয়েই ‘নগরীর নটী’ আখ্যা পেলেন!
জুন: ওঁদের নিয়ে একটাও কথা বলব না। কারণ, ওঁদের ছোট থেকে বড় হতে দেখেছি। ওঁরা আমায় নিজের দিদির মতো সম্মান করেন। আমিও ‘ছোট বোন’ বলেই জানি। বিরোধী রাজনীতিবিদ হিসেবে নয়, আমরা একে অন্যের সহ-অভিনেতা। তাছাড়া, আমি ওই দিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলাম না। আমার দলের নেতারাও কোনও মন্তব্য করেননি। আমারও তাই কিছু বলা সাজে না। তবে কাঞ্চনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাতে চাই। আমাকে সম্মান দেওয়ার জন্য।
প্রশ্ন: শপথ নেওয়া মানেই কোমর বেঁধে কাজে নামা। জুন তৈরি?
জুন: একদম। সবার আগে অতিমারি নিয়ে পদক্ষেপ করবে দল। ‘দিদি’ শপথ নিয়ে ইতিমধ্যেই হাল ধরেছেন। বাংলা আবার করোনামুক্ত হবে। আমারও নিজস্ব কিছু ভাবনা আছে এই নিয়ে। শপথ নিয়ে আলোচনায় বসব মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে। মানুষের বিপদের দিনে তাদের পাশে দাঁড়াব না তো কখন দাঁড়াব?
প্রশ্ন: অভিনেত্রী জুনের আগামী পরিকল্পনা কী?
জুন: আপাতত অভিনয় নিয়ে কিচ্ছু ভাবছি না। নতুন ভূমিকা, নতুন কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকতে চাই। ‘দিদি’ অনেক দায়িত্ব দিয়েছেন। সে গুলো পূরণ করতে হবে। পাশাপাশি অভিনয়ও করব। ভাল চরিত্র, ভাল ছবি কেন ফিরিয়ে দেব?