Vidya Balan on Gautam Haldar Death

‘পুজোয় নতুন ছবির গল্প শুনলাম, বাকিটা শোনা হল না’! গৌতমের শেষযাত্রায় আবেগঘন বিদ্যা

শুক্রবার সকালে হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত হন চিত্রপরিচালক গৌতম হালদার। তাঁর ছবি ‘ভাল থেকো’ দিয়েই বিদ্যা বালনের অভিনয় জীবন শুরু। তাই ‘গুরু’কে বিদায় জানাতে মুম্বই থেকে ছুটে এলেন অভিনেত্রী।

Advertisement
অভিনন্দন দত্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০২৩ ২০:১৩
Vidya Balan reaches kolkata to pay her tribute to her first film director Gautam Halder  before his last rites

(বাঁ দিকে) শেষযাত্রায় পরিচালক গৌতম হালদার। বিদ্যা বালন (ডান দিকে)। —নিজস্ব চিত্র।

কয়েক সপ্তাহ আগেই সাক্ষাৎ। ভরসা দিয়েছিলেন মুম্বই গিয়ে নতুন ছবির চিত্রনাট্য শোনাবেন। তা আর হল না! তার আগেই তিনি ফাঁকি দিয়ে চলে গেলেন। বিদায় জানাতে মুম্বই থেকে ছুটে এলেন শোকাচ্ছন্ন অভিনেত্রী। না, এ রকম নজির সাম্প্রতিক অতীতে ঘটেছে বলে টলিপাড়ায় অনেকেই মনে করতে পারছেন না। এক জন টলিউডের পরিচালক। অন্য জন বলিউডের নামজাদা অভিনেত্রী। এ এক অন্য ‘কহানি’।

Advertisement

বলিউডের প্রথিতযশা অভিনেত্রী বিদ্যা বালান। তবে অভিনয় জগতে হাতেখড়ি হয়েছিল বাঙালি পরিচালকের গৌতম হালদারের হাত ধরে। পরিচালকের ‘ভালো থেকো’ ছবিটিই ছিল বিদ্যার কেরিয়ারের প্রথম ছবি। শুক্রবার সকালে হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত হন বিশিষ্ট চিত্রপরিচালক গৌতম হালদারের। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৬৭। মুম্বইয়ে থেকেও খবর পেয়ে যান বিদ্যা। ‘গুরু’কে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে ছুটে এলেন কলকাতায়।

শুক্রবার সন্ধ্যায় পরিচালকের সল্টলেকের বাসভবনের বাইরে তখন মানুষের ঢল। ৬.৪৫-এ বিদ্যা এসে পৌঁছন। তাঁর পরনে ছিল সাদা সালোয়ার-কামিজ। চোখে ছিল রাতচশমা। বাড়ির প্রবেশপথেই গৌতম-কন্যা রাইপূর্ণা হালদারকে জড়িয়ে ধরেন অভিনেত্রী। তার পর বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করেন। ৭.৩০টা নাগাদ গৌতমের মরদেহ বাড়ির বাইরে আনা হয়। তখন টিপটিপ করে বৃষ্টি শুরু হয়েছে।

সম্প্রতি, দুর্গাপুজোয় শহরে পুজো উদ্বোধন করতে এসেছিলেন বিদ্যা। সময় বার করে পৌঁছে গিয়েছিলেন পরিচালকের বাড়িতে। তখনও কি তিনি জানতেন একই পাড়ায় কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে ‘গুরু’-র শবদেহের পাশে বসে থাকতে হবে তাঁকে। অপলক দৃষ্টিতে কী ভাবছিলেন ‘কহানি’র বিদ্যা বাগচী? নিশ্চয়ই মনে মনে বলছিলেন, ‘‘ভাল থেকো গৌতমদা।’’ গৌতমের মরদেহ শেষ যাত্রায় বেরোনোর পর বেরিয়ে আসেন বিদ্যা। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘‘আজকে আমার মন সত্যিই ভেঙে গিয়েছে। কী বলব বুঝতে পারছি না!’’ পুজোর সময় প্রয়াত পরিচালকের বাড়িতে এসেছিলেন বিদ্যা। কী কথা হয়েছিল দু’জনের? বিদ্যা বললেন, ‘‘ওর পরবর্তী ছবি নিয়ে আমাদের মধ্যে কথা হচ্ছিল। নতুন একটা ছবির কিছুটা গল্প শুনিয়েছিলেন। বলেছিলেন মুম্বই গিয়ে বাকিটা শোনাবেন। কিন্তু সেটা অসম্পূর্ণ থেকে গেল।’’

শুক্রবার গৌতমকে শেষ বারের মতো শ্রদ্ধা জানতে উপস্থিত হয়েছিলেন রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত, পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তী, ব্রাত্য বসু, সোহিনী সেনগুপ্ত, চৈতি ঘোষাল, মন্ত্রী সুজিত বসু, দেবশঙ্কর হালদার-সহ আরও অনেকে। একাধিক কাজের ব্যস্ততা ছিল অভিনেত্রীর। কিন্তু সব কাজ ফেলে তিনি কলকাতায় আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।

২০০৩ সালে মুক্তি পায় গৌতম পরিচালিত ছবি ‘ভাল থেকো’। টলিপাড়ার বিশিষ্ট চিত্রনাট্যকার লীনা গঙ্গোপাধ্যায়ের লেখা ‘জন্মদিন’ গল্পটি অবলম্বনে তৈরি হয়েছিল ছবিটি। ছবিতে আনন্দীর চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন বিদ্যা। ছবিটি সেরা অডিয়োগ্রাফি, সেরা সিনেমাটাগ্রাফির জাতীয় পুরস্কার-সহ বিশেষ জুরি পুরস্কারও জিতে নেয়।২০১৯ সালে মুক্তি পায় গৌতম পরিচালিত ছবি ‘নির্বাণ’। এই ছবিতে মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন রাখি গুলজ়ার। উস্তাদ আমজাদ আলি খানের বিশেষ ঘনিষ্ঠ ছিলেন গৌতম। ১৯৯৯ সালে সরোদশিল্পীকে নিয়ে গৌতম তৈরি করেন ‘স্ট্রিংস ফর ফ্রিডম’ তথ্যচিত্রটি। সিনেমার পাশপাশি নাট্যজগতের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন গৌতম। দীর্ঘ কেরিয়ারে তিনি প্রায় ৮০টি নাটকের নির্দেশক ছিলেন। সম্প্রতি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘রক্তকরবী’ নাটকটি নির্দেশনা করেন তিনি।

আরও পড়ুন
Advertisement