‘ব্যোমকেশ ও দুর্গরহস্য’ ছবির ট্রেলার প্রকাশ উপলক্ষে একই মঞ্চে উপস্থিত দুই ব্যোমকেশ শিবিরের সদস্যরা। — নিজস্ব চিত্র।
বলিউড এবং দক্ষিণী ইন্ডাস্ট্রির ঐক্যের একাধিক উদাহরণ নিয়ে নিরন্তর আলোচনা চলতেই থাকে। এ দিকে অন্যের সাফল্যে বাঙালির গা জ্বলে! শোনা যায়, টলিপাড়ায় নাকি ঐক্যের নাম-গন্ধ নেই। বৃহস্পতিবার নিন্দকদের কি বাংলা ইন্ডাস্ট্রি পাল্টা জবাব দিল? অন্তত ‘ব্যোমকেশ ও দুর্গরহস্য’ ছবির ট্রেলার প্রকাশ অনুষ্ঠান দেখে অনেকেই মনে করছেন সেই কথা।
ব্যোমকেশ নিয়ে দেব এবং সৃজিত— এই দুই শিবিরের মধ্যে টক্কর নিয়ে বিগত কয়েক মাসে বিস্তর জলঘোলা হয়েছে। এক দিকে বড় পর্দায় ব্যোমকেশ হিসাবে হাজির হচ্ছেন দেব। অন্য দিকে, ব্যোমকেশের একই কাহিনি অবলম্বনে ওয়েব সিরিজ় পরিচালনা করেছেন সৃজিত মুখোপাধ্যায়। সম্প্রতি শোনা গিয়েছিল, দুই শিবিরে আলোচনার পর সৃজিত তাঁর সিরিজ়ের মুক্তি পিছনোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তার পর দেব ঘোষণা করেছিলেন, সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের পরিচালনায় তিনি ছবি করতে চলেছেন। ফলে অনেকেই ভেবেছিলেন বিবাদ কিছুটা হলেও মিটেছে। এই পর্যন্ত ঠিক ছিল। কিন্তু দেবের ব্যোমকেশ ছবির ট্রেলার প্রকাশ করছেন সৃজিত অ্যান্ড কোং! এই চমক অনেকের কাছেই অপ্রত্যাশিত। এ রকমই বিরল মুহূর্ত তৈরি করল দুই ব্যোমকেশের টিম।
বৃহস্পতিবার বিকালে বাইপাসের ধারের এক হোটেলে দেব অভিনীত এবং বিরসা দাশগুপ্ত পরিচালিত ‘ব্যোমকেশ ও দুর্গরহস্য’ ছবির ট্রেলার প্রকাশের মুহূর্ত। এ দিকে সঞ্চালক মঞ্চে ডেকে নিলেন ‘বিরোধী’ শিবিরের কুশীলবদের! একে একে মঞ্চে হাজির হলেন সৃজিত মুখোপাধ্যায়, অনির্বাণ ভট্টাচার্য, সোহিনী সরকার এবং প্রযোজক শ্রীকান্ত মোহতা। দেবের ব্যোমকেশের ট্রেলার প্রকাশ্যে এল তাঁদেরই হাত ধরে। মঞ্চে তত ক্ষণে দেবের সঙ্গে উপস্থিত রুক্মিণী মৈত্র, অম্বরীশ ভট্টাচার্য এবং পরিচালক বিরসা। সৃজিত বলছিলেন, ‘‘এই যে বলা হয় আমাদের মধ্যে ঝগড়া, এর অনেকটাই ভুল। আসলে আমরা একটা পরিবারেরই অংশ, এই বার্তাটা পৌঁছে দেওয়াটা খুবই প্রয়োজন।’’ তাই ‘দশম অবতার’-এর শুটিং ফ্লোর থেকে দেবের ডাকে সাড়া দিয়ে হাজির হয়েছিলেন পরিচালক। এরই সঙ্গে মঞ্চ থেকেই সৃজিত ঘোষণা করলেন, ‘‘এ বার থেকে ‘অন মাই ওন টার্মস হ্যাশ ট্যাগটা পাল্টে হয়ে গেল অন আওয়ার ওন টার্মস।’’ দুই শিবিরকে এক ছাদের নীচে আনার অভিনব উদ্যোগ নিয়েছেন দেব। বলছিলেন, ‘‘শুরু থেকেই প্রচুর কথা কানে আসছিল। সেটা কিন্তু সিনেমার জন্য খারাপ। তাই আজকে এই প্রয়াস। আমরা যে একটা পরিবার, এই মঞ্চে প্রত্যেকের উপস্থিতি সেটাই প্রমাণ করছে। এর বেশি কিছুই নয়।’’
বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে এ রকম ঘটনা সচরাচর ঘটে না যেখানে একই গল্প নিয়ে দুই মাধ্যমে কনটেন্ট তৈরি হচ্ছে। শুধু তাই নয়, প্রায় কাছাকাছি সময়েই মুক্তি পাবে দুই ব্যোমকেশ। দেবকে ব্যোমকেশ হিসাবে কেমন লাগছে আর এক ব্যোমকেশ অনির্বাণের? অভিনেতা বললেন, ‘‘যখন থেকে দেব ব্যোমকেশ হচ্ছে শুনেছি, তখন থেকেই কৌতূহল বাড়ে। দেবের মাধ্যমে একদম আলাদা একটা ব্যোমকেশ পেতে চলেছেন দর্শক।’’ ‘একতাই বল’— এই মন্ত্রে বিশ্বাসী রুক্মিণী বললেন, ‘‘ব্যোমকেশের যেমন একটা পরিবার আছে, ইন্ডাস্ট্রিকেও একটা পরিবারের মতোই হাতে হাত মিলিয়ে এগিয়ে চলতে হবে।’’ অম্বরীশ যেমন মজা করে বললেন, ‘‘কী মুশকিল, সব বিতর্ক যে মিটে গেল! এ বার কে কী করে দেখা যাক।’’ এই ব্যোমকেশ পর্ব আগামী দিনে ইন্ডাস্ট্রিকে অনুপ্রাণিত করতে পারে কি না, তা সময়ই বলবে।