‘অপরাজিতা’ ছবির পোস্টার।
বাবা-মেয়ের সম্পর্ক এমনও হয়? এক ছাদের নীচে বসবাস। বছরের পর বছর ধরে কোনও কথা নেই!
যোগাযোগের মাধ্যম বলতে একটা ডায়েরি। সেখানেই প্রতি দিন দিনলিপির মতো ফুটে ওঠে বাবা-মেয়ের ছকে বাঁধা বাক্যালাপ। দেখতে দেখতে ডায়েরির পাতা ভরে ওঠে। কিন্তু মন ভরে কি? বিশেষ করে যে মেয়ে মা-হারা?
এই নিয়েই রোহন সেনের আগামী ছবি ‘অপরাজিতা’। ‘এ ভাবেই গল্প হোক’-এর পরে ফের সম্পর্কের গল্প তাঁর ছবিতে। এ বার রোহনের ছবির বিষয় বাবা-মেয়ের নষ্ট সম্পর্ক। পর্দায় বাবা-মেয়ের চেনা ছক ভাঙতে চলেছেন শান্তিলাল মুখোপাধ্যায়-তুহিনা দাস। ছবিতে ‘অপরাজিতা’র প্রেমিক দেবতনু চক্রবর্তী। শান্তিলালের চিকিৎসক বন্ধুর চরিত্রে রানা বসু ঠাকুর। এ ছাড়া, গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন ছবির প্রযোজক অমৃতা দে। ছবিতে তাঁর কণ্ঠে একটি গানও শোনা যাবে। একটি গান থাকছে অনুপম রায়ের কণ্ঠে। গানের দায়িত্বে কৃষ্ণেন্দু রাজ আচার্য। প্রযোজনায় কিছুক্ষণ এন্টারটেনমেন্ট প্রাইভেট লিমিটেড
শীত-উৎসবের গন্ধ গায়ে মেখে শুক্রবার প্রকাশ্যে এল ছবির পোস্টার। ‘অপরাজিতা’ তুহিনা দাসের প্রথম ঝলক। সাক্ষী একমাত্র আনন্দবাজার অনলাইন।
তুহিনার সঙ্গে এই প্রথম কাজ শান্তিলালের। তাও এমনই এক গল্পে, যেখানে বাবা-মেয়ে একে অন্যের অসহযোগী। কেন রাজি হলেন এই ধরনের ছবিতে কাজ করতে? আনন্দবাজার অনলাইনকে উত্তর দিতে গিয়ে কি স্নেহ ঝরে পড়ল ‘অপরাজিতা’র বাবার কথায়? শান্তিলালের মতে, ‘‘রোহনের প্রথম ছবিতেও অভিনয় করেছিলাম। ও আমার ছেলে ঋতব্রতর বয়সী। দ্বিতীয় ছবির বিষয় যখন শোনাল, একটু অবাক হয়েছিলাম। এত কম বয়সে এত পরিণত ভাবনা দেখে। তখনই মনে হল, এই ছবিতে অভিনয় করা উচিত।’’
পাশাপাশি অভিনেতা এ-ও জানিয়েছেন, এই ধরনের ভিন্ন ধারার চরিত্র তিনি পাননি। তাই ‘না’ বলার কোনও কারণও দেখেননি। একই ভাবে উচ্ছ্বাস চাপা থাকেনি তুহিনাকে ঘিরেও। শান্তিলালের দাবি, ‘‘ছোট থেকে তুহিনাকে চিনি। প্রায়ই কাজে-অকাজে দেখা হয়। কথা হয়। কিন্তু পর্দা ভাগ করা হয় না। রোহনের ছবিতে সেই সুযোগ আসতেই লুফে নিয়েছি।’’ ‘বাবা’র দাবি, কাজের সূত্রে ‘মেয়ে’র সঙ্গে অনেকগুলো ভাল দিন এক সঙ্গে কাটানো গেল।
অপর্ণা সেনের ‘ঘরে বাইরে আজ’, অরিত্র সেনের সিরিজ ‘দময়ন্তী’ তাঁকে প্রচুর খাটিয়েছে। চরিত্র হয়ে উঠতে গিয়ে অনেক পড়াশোনা, পরিশ্রম করেছেন তুহিনা। ‘অপরাজিতা’র জন্য তাঁকে কী কী করতে হল? পরক্ষণেই জবাব- ‘‘কিছু না! শুধু বুঝতে হয়েছিল বাবা-মেয়ের সম্পর্ক খারাপ হলে কতটা খারাপ হতে পারে। তাতে এক জন মেয়ে কতটা কষ্ট পেতে পারে। অফিস ফেরত প্রেমিকের সঙ্গে সাক্ষাতের পরে দিনের শেষে বাড়ি ফিরে কতটা একা হয়ে যেতে পারে সেই মেয়ে! মা-হারা মেয়ের জীবনটা দায়িত্ব পালন করতে করতে কতটা পানসে হয়ে উঠতে পারে!’’
এক নিঃশ্বাসে জমানো অনুভূতি উগরে দিয়েছেন অভিনেত্রী। তাঁর দাবি, বাকিটা তিনি ‘অপরাজিতা’র মতোই। তিনিও বাড়ি থেকে দূরে। তিনিও তাঁর মতো করে বাঁচেন। কাঁথির মেয়ে একলা চলতে চলতে আঘাত সামলাতে শিখে গিয়েছেন। ব্যতিক্রম, তিনি ভীষণই বাবা-ঘেঁষা! কাজ ফুরোলে বাবার সঙ্গে কথা না বলে থাকতেই পারেন না!
পাশাপাশি, এই ছবি থেকে অনেক কিছু শিখেওছেন তুহিনা। বাবা যতই খারাপ হোক, যে কোনও মেয়ের কাছে তিনিই তার জীবনের প্রথম পুরুষ। তাই বাবাকে নিয়ে বাইরের কারওর সঙ্গে কোনও আলোচনা বা সমালোচনা সে বরদাস্ত করতে পারে না। প্রয়োজনে ধমকে থামিয়ে দেয়। ঠিক যে ভাবে অপরাজিতা থামিয়েছে তার প্রেমিককে। অভিনেত্রীর দাবি, বাবা-মেয়ের এই অদ্ভুত সম্পর্কের পাশাপাশি বাবা-মেয়ের এই শাশ্বত অনুভূতি তাকে উপহার দিয়েছে এই ছবি। তাই শ্যুট শেষের বেশ কিছু দিন পরেও ‘অপরাজিতা’ হয়েই থেকেছেন তুহিনা! একই সঙ্গে তাঁর প্রার্থনা, পৃথিবীর কোনও বাবা-মেয়ের সম্পর্ক যেন এত অভিশপ্ত না হয়। মা-হারা মেয়ের জীবনে তা হলে আর কিছুই অবশিষ্ট থাকে না!
তপন সিংহের ‘কাবুলিওয়ালা’ থেকে সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ‘উমা’---- অনেক বাংলা ছবিতেই এই চিরন্তন সম্পর্ক উঠে এসেছে। 'অপরাজিতা' কোথায় আলাদা? কেন দেখবেন দর্শক? প্রশ্ন ছিল রোহনের কাছে।
পরিচালকের পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘কোথাও ডায়েরিতে দিনলিপির মতো দিন যাপিত হয় বাবা-মেয়ের? কেউ দেখেছেন, একই বাড়ির ছাদের নীচে কাটিয়েও বছরের পর বছর তাঁদের বাক্যালাপ বন্ধ? আমার ছবি সেই দিক দেখাবে। যা এর আগে কেউ দেখাননি।’’
রোহনের দাবি, ভালর পাশাপাশি খারাপটাও দেখতে হয়। তবে ভাল-খারাপের বিভেদ বোঝা যায়। ‘অপরাজিতা’ সেই দিক ছুঁতে চলেছে।
যা দেখে দর্শক ভাবতে বাধ্য হবে, বাবা-মেয়ের সম্পর্ক এমনও হয়!