বিবাহবার্ষিকীতে মুখ খুললেন টোটার স্ত্রী। ছবি: সংগৃহীত।
টলিপাড়া থেকে বলিউড পর্যন্ত এখন তাঁর অনুরাগী। অভিনয়ের পাশাপাশি তাঁর সুস্থ সবল চেহারা ও নৃত্যশৈলীতেও মজেছে বহু অনুরাগীর মন। কিন্তু তাঁর মন কেবল স্ত্রীর কাছেই। স্ত্রীর সঙ্গে কাটিয়ে ফেললেন ২৫ বছর। সেই উপলক্ষে বিশেষ পোস্ট করলেন টোটা রায়চৌধুরী।
কলেজ জীবন থেকে আলাপ দু’জনের। প্রথমে বন্ধুত্ব, তার পর প্রেম। সেখান থেকেই বিয়ে। তার পরে পেরিয়ে গিয়েছে অনেকগুলি বসন্ত। বহু নায়িকার সঙ্গে জুটি বেঁধেছেন। হয়তো, চোখের দেখায় ক্ষণিকের ভাল লাগাও তৈরি হয়েছে। জানিয়েছিলেন টোটা নিজেই। কিন্তু মনে থেকে গিয়েছে চিরকালীন প্রেম। অভিনেতার কথায়, “চোখে অনেককে ভাল লাগে, হৃদয় শুধুই স্ত্রীর।” কঠিন সময়ে শক্ত করে হাত ধরে ছিলেন স্ত্রী শর্মিলি। কর্মজীবনেও নানা ওঠাপড়ার অভিজ্ঞতা হয়েছে। কিন্তু কখনও পাশ থেকে সরে যাননি স্ত্রী। বরং প্রতি মুহূর্তে শক্তি জুগিয়েছেন তিনিই।
টোটার সঙ্গে দাম্পত্যের সমীকরণ কেমন ছিল, তা নিয়ে শুক্রবার ২৫তম বিবাহবার্ষিকী উপলক্ষে আনন্দবাজার অনলাইনের কাছে মুখ খুললেন শর্মিলি। তিনি বলেছেন, “টোটা বরাবরই নিয়ম-নিষ্ঠা মেনে চলে। ওর অভিধানে কড়া কিছু নীতি রয়েছে, যা ও মেনে চলে। এই জন্যই ওকে সবচেয়ে ভাল লেগেছিল। ও মানুষ হিসেবেও সৎ। আমার শ্বশুরমশাইকেও দেখেছি। তিনিও মানুষ হিসেবে সৎ। নিজের কাজের প্রতি নিষ্ঠাবান। নিজের পরিবারকে খুব ভালবাসেন। টোটাও তেমন। এগুলো দেখেই প্রেমে পড়েছিলাম।”
শুরুতে মডেলিং করতেন শর্মিলি। হয়তো অভিনয়ের ইচ্ছেও ছিল। টোটার সংসার সামলাতে গিয়েই কি সে সবে দাঁড়ি? দাম্পত্যে অভিনেতা কি খুব আধিপত্য দেখান? বিয়ের ২৫ বছরে এসে কী উপলব্ধি অভিনেতা-ঘরনির? শর্মিলি অভিনেতা স্বামীর মতোই অকপট। বললেন, “টোটা বিয়ের আগে এক বার বলেছিল, ‘সংসারটাও সামলাতে হবে। সে ক্ষেত্রে তোমায় হয়তো যে কোনও একটি দিক বেছে নিতে হতে পারে’।” তিনি সংসারকেই প্রাধান্য দিয়েছেন। তাঁর কথায়, “এখনকার মতো ততটাও পেশাজীবন নিয়ে সচেতন ছিলাম না। মনে হয়েছিল, এক জন অভিনয় দুনিয়ায় থাকুক। অন্য জন সংসার, সন্তান সামলাক।” এই জায়গা থেকেই তিনি শুধুই ঘরনি। যদিও একেবারে হাত গুটিয়ে বসে থাকার মেয়ে নন শর্মিলি। তিনি পারিবারিক গয়না বিপণির প্রধান শিল্পী। ওঁর তত্ত্বাবধানে গয়নার নকশা তৈরি হয়।
টোটাকে টলিপাড়ার ‘হার্টথ্রব’ও বলা হয়। কিন্তু আসলে কেমন তিনি? টোটার স্ত্রীর কথায়, “ওকে বাইরে থেকে দেখে একটু বেশিই উচ্ছ্বল মনে হয়। কিন্তু ও একদমই তেমন নয়। ভিতরের মানুষটা খুবই ঘরোয়া।” কলেজ জীবনে কি ‘রোম্যান্টিক’ ছিলেন টোটা? শর্মিলি বলেন, “কলেজে এক বন্ধুর মাধ্যমে আমাদের আলাপ। তখন আমি সদ্য মডেলিং শুরু করেছি। টোটাও একটি মাত্র ছবি করেছে তখন। আমি ভেবেছিলাম, ছেলেটা হয়তো রঙ্গরসিকতা (ফ্লার্ট) করতে পারে। কিন্তু একদমই তা নয়। পুরো উল্টো। বাইরে ও দেখায়, খুব ‘স্মার্ট’। কিন্তু ভিতরের মানুষটা অন্য রকমের। ভিতর থেকে ও কিন্তু খুব কড়া মানুষও নয়। ওর এক সময়ে সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার ইচ্ছে ছিল। সেখান থেকে কিছু কড়া নিয়মশৃঙ্খলা ওর মধ্যে ঢুকে পড়েছিল।”
নিজের কন্যাকেও কিছু নিয়ম মেনে চলতে শিখিয়েছেন টোটা। কন্যা এখন বেঙ্গালুরুতে কর্মরতা। শর্মিলির কথায়, “মেয়েকেও ও শিখিয়েছে, ‘এমন কিছু করবে না, যার জন্য মাথা হেঁট হয়ে যায়'।” বলিউডেও নিজের জায়গা তৈরি করে নিয়েছেন টোটা। প্রচারের আলো তাঁকে ঘিরে থাকে। এমন খ্যাতির কেন্দ্রে থাকা নায়কের স্ত্রী হওয়ার অনুভূতিও জানালেন শর্মিলি। হাসতে হাসতে টোটা-জায়া বলেন, “কিছুটা তো চাপের বটেই। কিন্তু নায়ক আর কোথায়! এখনও তো ও লড়াই করে যাচ্ছে। এই জগৎটাই এমন। কখনও খ্যাতি জাঁকিয়ে বসে। আবার কখনও নিমেষে খ্যাতি উধাও হয়ে যায়। তখন কিন্তু কেউ মনে রাখে না। টানা দু’বছর কোনও কাজ না থাকলে, মানুষ কিন্তু ভুলে যায়। তখন এক জন অভিনেতার মনে প্রশ্ন ওঠে, ‘সত্যিই কি মানুষ আমাকে ভালবাসে? না কি ক্ষণিকের হুজুগ?’”
টোটাকে কখনওই তারকা বা নায়ক হিসাবে দেখেননি শর্মিলি। তাঁর চোখে, টোটা একজন নিষ্ঠাবান অভিনেতা। কাজের জগতে পিছিয়ে পড়লে কী করেন টোটা? প্রশ্ন করতেই শর্মিলি বলেন, “ও কাজ ভালবাসে। নিজের শরীরকে ও মন্দির মনে করে। তাই শরীরচর্চা বাদ যায় না। এ ছাড়া বই পড়ার অভ্যাস রয়েছে ওর। ওর ঘর ভর্তি বই। বিভিন্ন দেশের ছবি দেখতেও ও ভালবাসে।”