ট্রোলিং প্রসঙ্গে কী বললেন পরিচালক অরিন্দম শীল? ছবি: সংগৃহীত।
‘ব্যোমকেশ’, ‘শবর’, ‘মিতিনমাসি’— গোয়েন্দা মানেই তাঁর হোমগ্রাউন্ড। থ্রিলারে হাত পাকিয়েছেন পরিচালনার শুরুর দিক থেকেই। এ বার তাঁর ঝুলিতে গেল ফেলুদাও। সত্যজিৎ রায়ের সৃষ্টিকেই নিজের মতো করে সাজিয়ে নিয়েছেন তিনি। সময়কাল বদলেছে। গল্পে নারীচরিত্রের আবির্ভাব ঘটেছে। পর্দায় একাধিক অভিনেতাকে ফেলুদা চরিত্রে দেখার পর দর্শক এ বার ফেলুদা চরিত্রে দেখছেন পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় এবং তোপসের ভূমিকায় ঋতব্রত মুখোপাধ্যায়কে। সব মিলিয়ে একদম নতুন মোড়ক। তা দেখে বেশ কিছু দর্শকের যেমন কৌতূহল তৈরি হয়েছে, তেমনই এক দল মানুষের তীব্র খারাপ লাগা তৈরি হয়েছে। টিজ়ার বেরোনোর পর থেকেই সমাজমাধ্যম তোলপাড়। চারদিক থেকে ধেয়ে আসছে কটাক্ষ।
অভিনেতা পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় অবশ্য এ বিষয়ে আনন্দবাজার অনলাইনকে আগেই জানিয়েছেন, তাঁরা এ নিয়ে প্রস্তুত ছিলেন। ফেলুদা নিয়ে বাঙালি স্বাভাবিক ভাবেই আবেগপ্রবণ। তাই তেমন একটি চরিত্রে অভিনয় করতে গেলে কিছু নেতিবাচক আলোচনার জন্য প্রস্তুত থাকতেই হয়। তবে পরিচালক অরিন্দম শীল এ বিষয়ে কতটা বিব্রত? প্রশ্ন রেখেছিল আনন্দবাজার অনলাইন। তিনি বললেন, ‘‘আমি বিব্রত নই একেবারেই। তবে অশিক্ষা আমি নিতে পারি না। অশিক্ষিত হওয়া দোষের নয়। অনেকেই হয়তো সেই সুযোগ পান না। তবে অনেক মানুষ রয়েছেন, যাঁরা অর্থের অভাবে হয়তো যোগ্য শিক্ষাটুকু পান না। আমার তাঁদের জন্য কষ্ট হয়। কিন্তু যাঁরা কিছু না জেনে, কিছু না পড়ে, সবজান্তা ভাব করে ঘুরে বেড়ান, সমাজে একটা স্টেটমেন্ট তৈরি করতে চান, তাঁদের আমার সত্যিই পোষায় না। একটা প্রজেক্ট করার পিছনে যে কত বিনিদ্র রাত কেটেছে, কত পরিশ্রম গিয়েছে, তা বোধ হয় এঁরা জানেন না।’’
‘গ্যাংটকে গণ্ডগোল’-এর গল্প অবলম্বনে তৈরি হয়েছে ‘সাবাশ ফেলুদা’। অনেকেরই অভিযোগ, কেন বার বার ফেলুদা-ব্যোমকেশ নিয়েই এত ছবি হচ্ছে। পরিচালকরা নতুন কিছু ভাবছেন না কেন? অরিন্দমের সাফ উত্তর, ‘‘ফেলুদা নিয়ে এত নস্ট্যালজিয়া বলেই কিন্তু প্রযোজকরা এত বড় পরিসরে কাজ করার জন্য এগিয়ে আসেন। নতুন কোনও গোয়েন্দা গল্প নিয়ে কাজ করলে আমি এই বাজেট পেতাম না। তবে এত বড় প্রজেক্টে কাজ করার চ্যালেঞ্জ নেওয়ার জন্যও ধক লাগে।’’
পরিচালক বিশ্বাস করেন, যে কোনও নতুন জিনিসই ধীরে ধীরে গৃহীত হয়। নতুন জিনিসের প্রতি মানুষের একটি স্বাভাবিক অনীহা থাকতেই পারে। তবে তিনি আশা করছেন, ওটিটি প্ল্যাটফর্মে যে হেতু নবীনদের ভিড় বেশি, তাঁরা ধীরে ধীরে নতুন ফেলুদাকেও মেনে নিতে পারবেন। পরমব্রতকে অনেক দর্শক ট্রেলার দেখেই মেনে নিতে পারেননি। তাঁদের কথায়, ‘‘পরম ফেলুদা হিসাবে বেমানান।’’ কিন্তু পরিচালক তাঁর অভিনেতার উপর ১০০ শতাংশ ভরসা করেন। তিনি জানালেন, একটা সময়ের পর তিনি পরমব্রতকে নির্দেশ দেওয়া ছেড়ে দিয়েছিলেন। তিনি নিজের মতো ঠিক বুঝে নিতেন, কী ভাবে অভিনয় করতে হবে। এর আগে পরমব্রত নিজেও একটি ফেলুদা সিরিজ় পরিচালনা করেছিলেন। কিন্তু এ বার তিনি তাঁর পরিচালক সত্তাকে একদমই সেটে নিয়ে যাননি। পুরোটাই অরিন্দমের উপরেই ছেড়েছিলেন। তাই পরিচালক-অভিনেতার তালমিলে কোনও অসুবিধা হয়নি।
সদ্য ‘জ়ি ফাইভে’-এ মুক্তি পেয়েছে ‘সাবাশ ফেলুদা’। সিরিজ় দেখার আগেই অনেক সমালোচনার ঝড় উঠেছে। কিন্তু দেখার পর দর্শক নতুন ফেলুদাকে নিজেদের মনে জায়গা দিচ্ছেন, তা দেখার জন্য গোটা টিমই অপেক্ষা করছে।