কিছুতেই সুচন্দ্রার মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না দেবজ্যোতি। ছবি: সংগৃহীত।
অভিনয় করার স্বপ্ন নিয়েই এত পথ এসেছিলেন। সে পথে দাঁড়ি পড়ল পথদুর্ঘটনায়। শুটিং সেরে বাড়ি ফেরার পথে বাইক থেকে ছিটকে পড়ে লরির চাকায় পিষে গিয়ে মৃত্যু হয় ৩০ বছরের অভিনেত্রী সুচন্দ্রা দাশগুপ্তের।
স্বামী দেবজ্যোতি সেনগুপ্তের সঙ্গে শেষ বার তাঁর কথা হয়েছিল শনিবার সন্ধ্যায়। জানিয়েছিলেন, রাতে ফিরে কথা বলবেন। ফিরতেন অবশ্য পানিহাটির পৈতৃক বাড়িতে। বিটি রোড থেকে নিজের বাড়ি কাছে হওয়ায় সে দিন আর নরেন্দ্রপুরে শ্বশুরবাড়িতে ফেরার পরিকল্পনা ছিল না সুচন্দ্রার। কিন্তু ফেরা হল না বাবার কাছেও। অপেক্ষার প্রহর গুনতে গুনতে মাঝরাত অবধি দেখে থানায় ফোন করেছিলেন দেবজ্যোতি।
খড়দহ থানা থেকে বরাহনগর থানায় যোগাযোগ করে জানা যায়, পথদুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে সুচন্দ্রার। সেই খবর পেয়ে হাত-পা অবশ হয়ে যায় দেবজ্যোতির। সুচন্দ্রার বাবা প্রণবও দুচিন্তায় ডুবেছিলেন, তাঁকেও খবরটি জানান দেবজ্যোতি। নরেন্দ্রপুর থেকে বরাহনগর থানায় আসেন তিনি। প্রণব চলে আসেন আগেই। বিশ্বাস করতে পারেন না, তবু পুলিশের বিবরণে স্বামী এবং পিতা পাশাপাশি দাঁড়িয়ে শুনে যান দুর্ঘটনার ইতিবৃত্ত।
কিছুতেই স্ত্রীর মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না দেবজ্যোতি। তিনি আইটি সেক্টরে কর্মরত। মৃত্যুর দিন সন্ধ্যায় সুচন্দ্রা তাঁকে ফোনে বলেছিলেন, “এখন শটে আছি, তোমার সঙ্গে রাতে ফিরে কথা বলব।” সেটুকুই পাথেয় দেবজ্যোতির। স্ত্রীর সঙ্গে সেই শেষ কথা। বলতে বলতে কেঁদে ফেললেন তিনি।
শোকে পাথর প্রণব। দশম শ্রেণিতে পড়াকালীনই মাতৃহারা হয়েছিলেন সুচন্দ্রা। তার পর থেকে বাবাই ছিলেন তাঁর সব। একা হাতে মেয়েকে মানুষ করেছিলেন প্রণব। জানান, শৈশব থেকেই অভিনয়ের প্রতি টান ছিল সুচন্দ্রার। তাই অল্প দিন চাকরি করে ছেড়ে দিয়েছিলেন শুধুমাত্র অভিনয়ে মনোনিবেশ করতে চান বলেই।
তিনি জানালেন, শনিবার রাত পৌনে ১২টা থেকে তিনি এবং দেবজ্যোতি ফোন করার চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন সুচন্দ্রাকে, ফোন ধরেননি অভিনেত্রী। কাজে ব্যস্ত রয়েছেন ভেবে তাঁরা আর বিরক্ত করেননি। অনেক রাত অবধি সুচন্দ্রা ফোন না করায় শেষে তাঁরা থানায় ফোন করেন।
দেবজ্যোতি জানান, ২০২১ সাল থেকে অভিনয় শুরু করেন সুচন্দ্রা। মাঝে চাকরিও করেন অল্প সময়। তবে কয়েক বছর হল অভিনয় নিয়েই বাঁচতে চাইতেন। সারা দিনই ব্যস্ততায় কাটত শুটিং, নাটক, থিয়েটার, রিহার্সাল ইত্যাদি নিয়ে। কাজকেই বেশি গুরুত্ব দিতেন।
শ্বশুরবাড়ি নরেন্দ্রপুরে হলেও সোদপুরে বাবার কাছে থেকেই কলকাতায় যাতায়াত করতেন সুচন্দ্রা। বেশ কয়েকটি সিরিয়ালে দেখা গিয়েছে তাকে। ‘গৌরী এলো’ সিরিয়ালে ছোট এক চরিত্রে তাঁকে দেখা গিয়েছিল। অভিনেত্রী হিসাবে আরও কাজের সুযোগ পাওয়ার জন্য অডিশনও দিচ্ছিলেন।
শুধুমাত্র অসতর্ক ট্র্যাফিকের বলি হয়ে সম্ভাবনাময়ী, উদ্যমী অভিনেত্রীর মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না তাঁর সহকর্মীরাও। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বাইকে হেলমেট পরেই বসেছিলেন সুচন্দ্রা। হঠাৎ সামনে সাইকেল পড়ায় ব্রেক কষে বাইকটি। তাতে টাল সামলাতে না পেরে ছিটকে পড়েন সুচন্দ্রা। দ্রুত গতিতে আসা এক লরি তাঁকে পিষে দিয়ে যায়। ঘটনায় সমাজমাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পরিচালক শিলাদিত্য মৌলিক।