অভিনেতা অসীম রায়চৌধুরী (বাঁ দিকে)। অমিতাভ বচ্চন (ডান দিকে)। ছবি: সংগৃহীত।
বলিউডে কাজের জন্য কলকাতার শিল্পীরা অডিশন দিতেই থাকেন। কিন্তু বলিউড যে গোলকধাঁধা! কথা হয়, অডিশন প্রশংসিত হয়, কিন্তু ভাগ্য প্রসন্ন হয় না অধিকাংশ সময়ে। কিন্তু টলিপাড়ার অভিনেতা অসীম রায়চৌধুরীর কপালে অবশ্য অন্য কিছু লেখা ছিল। হিন্দি বিজ্ঞাপনের কাজ, জানতেন। কিন্তু সেই বিজ্ঞাপনে যে স্বয়ং অমিতাভ বচ্চন এবং পূজা হেগড়ের মতো তারকারা থাকবেন, সেটা জানতেন না। জানার পরেও ভেবেছিলেন, সুযোগ হয়তো আসবে না। কিন্তু ভাগ্যদেবতা তাঁর প্রতি সুপ্রসন্ন হয়েছেন। একটি নরম পানীয়ের বিজ্ঞাপনে অমিতাভ এবং পূজার সঙ্গেই সুযোগ পেয়েছেন অসীম।
সম্প্রতি, ‘আবার বিবাহ অভিযান’ ছবিতে দর্শক অসীমকে দেখেছেন। ‘জঙ্গলে মিতিন মাসি’ এবং ‘বিনোদিনী: একটি নটীর উপাখ্যান’ ছবিতেও কাজ করেছেন। মূলত, রাজ্য সরকারের চাকুরে হলেও অভিনয়ের প্রতি ভালবাসা থেকেই ২৫ বছর ধরে নাটক এবং ছবিতে অভিনয় করেছেন। বললেন, ‘‘এর আগেও বলিউডে চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু সে বার শুটিংয়ের পরেও বিজ্ঞাপনটা সম্প্রচার হয়নি। কিন্তু সেটা যে এতটা বড় মাপে হবে, তা ভাবতেও পারিনি।’’
গত বছর অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে একটি বিজ্ঞাপনী ছবিতে অভিনয় করেছিলেন টলিপাড়ার অভিনেতা অম্বরীশ ভট্টাচার্য। এবারে সেই তালিকায় যুক্ত হল অসীমের নাম। নির্মাতাদের তরফে সবুজ সঙ্কেত পেয়েই ১৪ জুন মুম্বই পাড়ি দেন অসীম। বৃহস্পতিবার গোরেগাঁও ফিল্ম সিটিতে সকাল ৯টা থেকে শুরু হয় শুটিং। মজার বিষয়, ফ্লোরে অমিতাভ আসার আগে তাঁর ‘ডামি’ শশীকান্ত পেড়ওয়াল চলে আসেন। একপ্রস্ত রিহার্সাল করার পর ১০টার দিকে ফ্লোরে প্রবেশ করেন অমিতাভ। বৃহস্পতিবারেই অমিতাভ এবং পূজার অংশের শুটিং শেষ হয়ে গিয়েছে। শুক্রবারে বিজ্ঞাপনের বাকি অংশের শুটিং হওয়ার কথা। বিগ বি’র সঙ্গে অসীম কোনও ছবিও তোলেননি। কিন্তু কেন? শুক্রবার মুম্বই থেকে অসীম বললেন, ‘‘শুরু থেকেই আমি ঠিক করেছিলাম, আবেগপ্রবণ হব না। কারণ সেটা আমার অভিনয়ে প্রভাব ফেলতে পারে।’’ তবে পূজার সঙ্গে সেল্ফি তুলেছেন অসীম। জানালেন, অভিনেত্রীর ব্যবহারে তিনি মুগ্ধ।
একটি পরিবারকে কেন্দ্র করে সাজানো হয়েছে এই বিজ্ঞাপন। রয়েছে চারটি ছোট ছোট ঘটনা। পরিবারের দাদুর চরিত্রে অমিতাভ। নাতনি পূজা। আর পূজার কাকার চরিত্রে অভিনয় করেছেন অসীম। অমিতাভের সঙ্গে আলাদা করে কথা বলার সুযোগ পেয়েছেন? অসীমের কথায়, ‘‘আমি গিয়ে নিজের পরিচয় দিতে কলকাতা শুনে খুশি হয়েছেন। পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করতে যাব। দেখেই বলে উঠলেন, ‘এ কী করছেন!’ ওঁর সৌজন্যবোধ আমাকে মুগ্ধ করেছে।’’
অমিতাভের থেকে কী শিখলেন? অসীম বললেন, ‘‘অনেক কিছু। সাধারণত এত বড় মাপের অভিনেতারা কিউ দেন না। কিন্তু পরিচালকের অনুরোধে উনি এক টানা কিউ দিয়ে গেলেন।’’ একই শটের জন্য পাঁচ-ছ’বার টেক দিতেও নাকি অমিতাভের মধ্যে এতটুকু ক্লান্তি দেখেননি বলেই জানালেন অসীম। বললেন, ‘‘কোন শটটা কোথায় কাটা হবে, সেটাও দেখলাম তিনি জানেন। শুধু চিত্রনাট্য পড়ে নয়, দীর্ঘ অভিজ্ঞতা এবং অভিনয়কে গুলে না খেলে এটা যে কারও পক্ষে সম্ভব নয়। সেই জন্যই উনি অমিতাভ বচ্চন!’’
অমিতাভের সঙ্গে ছবি তোলার সুযোগ পাননি বলে সমায়িক ভাবে মনের মধ্যে আক্ষেপ পুষে রেখেছিলেন অসীম। কিন্তু সেই ক্ষতে কিছুটা হলেও প্রলেপ দিয়েছেন শশীকান্ত। অসীমকে তিনি বলেছেন, ‘‘ছবি না হয়,না-ই তুললেন। কিন্তু স্যরের সঙ্গে আপনার কাজটা তো থেকে যাবে। সেটা তো কেউ ছিনিয়ে নিতে পারবে না!’’ সেই প্রাপ্তিটুকু সম্বল করেই আপাতত কলকাতায় ফেরার অপেক্ষায় রয়েছেন অসীম।