Srijit Mukherjee

বক্স অফিসের জন্য আমি নিজের ঘরানা ছেড়ে ফ্যামিলি ড্রামা তৈরি করতে পারব না: সৃজিত

টলিউডের ‘ফার্স্ট বয়’। কিন্তু বক্স অফিসের কথা ভেবে কোনও দিন ছবি করেন না। তা হলে কোনও দিনই ছক ভাঙতে পারতেন না সৃজিত মুখোপাধ্যায়। তবে এই পুজোয় ‘দশম অবতার’ নিয়ে কি চাপে রয়েছেন তিনি?

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০২৩ ১৫:১৬
Srijit Mukherji speaks about his upcoming pujo release Dawshom Awbotaar which is a double prequel of baishe srabon and vinci da

প্রসেনজিৎ-সৃজিত। ছবি: সংগৃহীত।

‘দ্বিতীয় পুরুষ’ দেখে অভিমান হয়েছিল প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের। প্রবীর রায়চৌধুরীকে নিয়ে এত সংলাপ। অথচ, সে-ই ছবিতে নেই। তখন থেকেই প্রবীরকে কী করে ফিরিয়ে আনা যায়, তা নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করেন পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়। ‘দশম অবতার’-এর মূল ভাবনাও বেশ পুরনো। দুই মিলিয়ে প্রবীর আর পোদ্দারের প্রত্যাবর্তনের পরিকল্পনা তৈরি হয়। আর সেখান থেকেই সৃষ্টি বাংলার প্রথম কপ ইউনিভার্স। যা এই পুজোয় মুক্তি পাবে। তবে সফল ফ্র্যাঞ্চাইজ়ির সিকুয়েল বানানো কি আর কঠিন? না কি পুরনো ভুলগুলো শুধরে নেওয়ার একটা নতুন সুযোগ? আনন্দবাজার অনলাইনকে বুঝিয়ে বললেন সৃজিত মুখোপাধ্যায়।

Advertisement

পরিচালকের উত্তর, ‘‘পুরনো ভুলগুলো শুধরে নেওয়ার সুযোগ তো বটেই। তবে আগে যেগুলো জোরের জায়গা ছিল, সেগুলো আরও ধারালো করার সুযোগও বটে।’’ পরিচালকের কথার প্রমাণ পাওয়া যায় ছবির ট্রেলার দেখলেই। আগের ছবিগুলোর সব ‘হিট’ সংলাপ রয়েছে নস্ট্যালজিয়া উস্কে দেওয়ার জন্য। প্রত্যেকটা সংলাপই প্রসেনজিতের কথায়, ‘‘সংলাপেই হাততালি।’’ তবে পরিচালক মনে করেন ইউনিভার্স বা মাল্টিভার্স তৈরি করার সময় অন্য একটা মজা আরও বেশি থাকে পরিচালকের মাথায়। তিনি বললেন, ‘‘নিজের পুরনো প্রিয় চরিত্রগুলো নিজেদের মধ্যে কথা বলছে। যেন একটা রিইউনিয়ন।’’

হলিউড-বলিউডে ইউনিভার্সের রমরমা এখন। বিশ্ব জুড়ে যে ছবিগুলো সবচেয়ে বেশি ব্যবসা করছে, সেগুলো এই ছক ভেঙেই তৈরি হচ্ছে। এ বছর বাংলায় এখনও অবধি হিটের সংখ্যা হাতেগোনা। ইন্ডাস্ট্রির কথা ভেবেই কি এই ধরনের ছবির ভাবনা? সৃজিত অবশ্য বললেন, ‘‘মাল্টিস্টারার ছবি আমি আগেও করেছি। এটা নতুন কিছু নয় আমার জন্য। এর জন্য যা প্রয়োজন, তা হলে একটা ভাল ব্যালান্সড স্ক্রিপ্ট। যেটা পড়ে কোনও অভিনেতা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগবে না। কারও যেন মনে না হয় যে তাঁর কিছুই করার নেই। আমার এই ছবির চিত্রনাট্য পড়ে চার জনেই (প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, অনির্বাণ ভট্টাচার্য, যিশু সেনগুপ্ত এবং জয়া আহসান) কিন্তু একবারে ‘হ্যাঁ’ বলে দিয়েছিল। কারণ চার জনেরই আলাদা জায়গা আছে। ‘রাজকাহিনী’, ‘জ়ুলফিকর’, ‘এক যে ছিল রাজা’, ‘শাহজাহান রিজেন্সি’— আমি কিন্তু প্রথম থেকেই বার বার বহু অভিনেতাকে একসঙ্গে করেছি। এটা খুবই ভুল ধারণা যে, বাংলায় বড় অভিনেতারা একসঙ্গে কাজ করবে না। তবে তেমন চিত্রনাট্য দিতে হবে।’’

‘এক্স= প্রেম’, ‘শেরদিল’, ‘সাবাশ মিথু’র মতো শেষ কিছু ছবি বক্স অফিসে সে ভাবে সাফল্যের মুখ দেখেনি। এ বার টলিউডের ‘ফার্স্ট বয়’ও তা হলে চাপে রয়েছেন? প্রশ্ন শুনেই সৃজিত বললেন, ‘‘প্রত্যেক পরিচালকের আলাদা দর্শক আর মাপকাঠি থাকে। আমরা তো কোনও ক্লাসরুমে নেই। এই সব ‘ফার্স্ট বয়’-এর তকমা নিয়ে আমি একদমই ভাবি না। ‘এক্স= প্রেম’ বেশি মানুষ দেখেননি। পরে ওটিটি-তে দেখে অনেকে প্রশংসা করেছেন। তার আগে করোনার সময় ৫০ শতাংশ সিট নিয়েও ‘কাকাবাবু প্রত্যাবর্তন’ ভালই করেছিল। তবে আশা করছি, সব দিক দেখলে এ বারের ছবি থেকে একটু বেশি প্রত্যাশা রাখা যায়। তবে বাংলায় সব ছবিকে একসঙ্গে ভাল করতে হবে। এই পুজোয় সেই জায়গাটা রয়েছে। চারটে ছবিই ভাল চললে আমাদের জোরের জায়গা তৈরি হবে।’’ বক্স অফিসে জোরের জায়গা তৈরি করার তাগিদেই কি আরও ‘লার্জার দ্যান লাইফ’ ছবি করার তাগিদ? সৃজিতের স্পষ্ট উত্তর, ‘‘আমি তো কোনও দিন সেফ খেলিনি। ইদানীং ফ্যামিলি ড্রামা খুব চলছে। যাকে চেম্বার্ড ড্রামাও বলা যায়। যেখানে মূল চরিত্রের বয়স হয়তো ৫০ বা ৬০-এর উপরে। তাই দেখা যাচ্ছে, বাংলা ছবির দর্শকের বয়সও সেই রকমই। কিন্তু তাঁরা তো একা সিনেমা হল-এ যেতে পারবেন না। তাই পরিবারের বাকিরাও যাচ্ছেন। এই মডেলটা কাজ করছে। কিন্তু তা বলে তো আমি আমার ঘরানা থেকে সরে আসতে পারি না। আই উইল নেভার প্লে ইট সেফ এভার। আমি আমার মতো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে যাব। নিজের মতো ছবি বানিয়ে যাব। লোকে বলে কমবয়সিরাই আমার মূল দর্শক। কিন্তু সমস্যা হল, কমবয়সিরা কিন্তু প্রৌঢ় দর্শকদের মতো অতটা লয়্যাল নয়। তারা খুব শিফ্‌ট করে। কারণ, তাঁদের হাতে অনেক বিকল্প। তাই তাঁদের ধরে রাখাটাই চ্যালেঞ্জ। কিছু ছবি যদি তাঁদের ধরতে না পারে, তাতে আমি আশ্চর্য হই না। কিন্তু কিছু ফ্যামিলি ড্রামা চলছে বলেই যে আমি সেটাই শিফ্‌ট করে যাব, সেটা আমি করব না। আমি বিবিধ বিষয় নিয়ে ছবি করব। কিন্তু নিজের জ়োনে করব।’’

‌সৃজিতের পুজোয় জো়ড়া ছবি মুক্তি। ‘দশম অবতার’ ছাড়াও একই দিনে হইচই-এ মুক্তি পাচ্ছে তাঁরা পরিচালিত ‘দুর্গ রহস্য’। তার পর দেবের সঙ্গে তাঁর পরবর্তী ছবি এবং পরবর্তী ফেলুদা নিয়ে কাজ শুরু করবেন তিনি। আপাতত বাংলার কাজ নিয়েই বেশি ব্যস্ত সৃজিত। মুম্বইয়ে কি আপাতত তা হলে আর কাজ করছেন না তিনি? জানালেন, কিছু কাজের কথা চলছে। কিন্তু সেগুলো হয়তো পরের বছরের শেষে দিকে ধরবেন। আপাতত বাংলা ছবিতেই বেশি মন দিচ্ছেন তিনি। কারণ, সৃজিতে কথায়, ‘‘বাংলায় টাকা বা অন্য রিসোর্স কম থাকতে পারে। কিন্তু শৈল্পিক স্বাধীনতা অনেক বেশি।’’

Advertisement
আরও পড়ুন