কুণাল মিত্র
একটা সময় আমি আর কুণাল মিত্র ছোট পর্দার জনপ্রিয় জুটি ছিলাম। কুণালের থেকে আমি বয়সে অনেকটাই ছোট। কিন্তু কাজ করতে করতে বন্ধুত্ব হয়ে যায়। সেই থেকেই তুই-তোকারি। ‘প্রতিবিম্ব’-সহ একাধিক ধারাবাহিকে আমি আর কুণাল স্বামী-স্ত্রী। টানা ৩০০ পর্ব এ ভাবেই অভিনয় করছি। দর্শকেরা তাই দেখে একটা সময়ের পরে ভাবতে শুরু করলেন, আমরা বাস্তবেও স্বামী-স্ত্রী। তার উপরে আমাদের পদবিও এক। সবার ধারণা আরও বদ্ধমূল হল!
খুব ভালমানুষ ছিল কুণাল। চলে গিয়েছে বলে বলছি না। তখন ইন্ডাস্ট্রি একটা পরিবার ছিল। সবাই সবার পাশে। সবাই সবার দুঃখে কাঁদছে। বিপদে ঝাঁপিয়ে পড়ছে। বৃষ্টির দিনে হুজুগে মেতে খিচুড়ি-ইলিশ মাছ ভাজা রান্না হয়ে গেল। এ ওকে অভিনয় নিয়ে পরামর্শ দিচ্ছে। একই ভাবে আমরা সবাই সবাইকে আগলাতামও। কুণালই যেমন। ভাল-মন্দ যা দেখত বা বুঝত, মুখের উপরে বলে দিত। আবার শ্যুটের ফাঁকে বসে আড্ডাও দিত। অথচ আমাদের কিন্তু প্রেম ছিল না! কী ভীষণ সুপুরুষ ছিল কুণাল। তেমনই ভরাট গলা। অথচ সবেতেই সংযত। কোনও দিন দেখিনি সেটে ওর একগাদা অনুরাগিনী এসেছে বা তেমন কিছু ঘটেছে। আমিও অবশ্য পরের বিষয়ে খুব কম কৌতূহলী।
শেষের দিকে এই কুণালেরই কী ভারিক্কি চেহারা! খুব কি মদ্যপান করত? জানি না। তবে প্রচণ্ড খাওয়াদাওয়া করত, এটা শুনেছি। অনেকেই হয়তো এর সঙ্গে এখন ‘অবসাদ’ শব্দটা জুড়ে দেবেন। বলতে পারেন, আজকের দিনে অবসাদে কে না ভোগেন? শিল্পীদের অনুভূতি তো আরও তীব্র! সেই জায়গা থেকে কুণালেরও অবসাদ থাকা অস্বাভাবিক নয়। আর শিল্পীমন যত কষ্ট পাবে, ততই সে দুঃখের দৃশ্য পর্দায় সহজে জীবন্ত করতে পারবে। তার অভিনয়কে সত্যি ভেবে দর্শক কাঁদবে। হয়তো তেমনই কিছু ছিল ওরও। তাই মাত্র ৪৩-য়েই ফুরিয়ে গেল!
দেখতে দেখতে ১৩ বছর পার। কুণাল মিত্রকে আর কারও মনে নেই। সকালে জয়জিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় আর ভাস্বর চট্টোপাধ্যায় কুণালের ছবি পোস্ট করেছেন ফেসবুকে। কেমন আছেন ওর স্ত্রী? দুই সন্তান কত বড় হল? কেউ খোঁজ রাখেন না। আধুনিক টলিউড এমনই। আজ যাঁরা আমায় কাজ দেন না, কাজের কথা বলে বাদ দিয়ে দেন, জানানোর প্রয়োজনও বোধ করেন না, কাল আমি মরলে হয়তো তাঁরাই চোখ মুছে বলবেন, শ্রীলেখা মিত্রকে কেউ ঠিকমতো ব্যবহারই করতে পারল না। আমি নিশ্চিত, কাল আমি মরলে পরশু দিনই সবাই ভুলে যাবে শ্রীলেখা মিত্রকে।