১ মার্চ। এক পাঁচ তারা হোটেলে আনুষ্ঠানিক ভাবে ভারতীয় জনতা পার্টিতে যোগদান করেছিলেন শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়। দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বিজেপি-র পতাকা তুলে দিয়েছিলেন অভিনেত্রীর হাতে। ধবধবে সাদা সালোয়ারের সঙ্গে হাসিমুখে তিনি পরে নিয়েছিলেন পদ্মফুলের উত্তরীয়।
নরেন্দ্র মোদীর আদর্শে আস্থা রেখেছিলেন। বলেছিলেন, “আমার মনে হয়েছিল, রাজ্যের মানুষের মঙ্গলের জন্য কাজ করতে হলে এই দলেই যোগ দিতে হবে।” রাজনীতিতে হাতেখড়ির পরেই নির্বাচনে দাঁড়ানোর টিকিট পেয়েছিলেন তিনি। বেহালা পশ্চিমের মতো গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে পদ্ম শিবিরের প্রার্থী হন শ্রাবন্তী। বিপরীতে তৃণমূলের পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মতো পোড় খাওয়া রাজনীতিবিদ।
প্রচারে কোনও খামতি রাখেননি। বিলাসবহুল গাড়ি থেকে পথে নামেন নায়িকা। মুখে চেনা হাসি। পরনে সুতির শাড়ি, সালোয়ার। হাত জোড় করে পৌঁছে গিয়েছিলেন ঘরে ঘরে। আবদার মতো নিজস্বী তোলা থেকে মাটির ভাঁড়ে চা খাওয়া, প্রচারের জন্য বাদ রাখেননি কিছুই। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। প্রচুর ব্যবধানে হেরে যান শ্রাবন্তী।
এর পর থেকেই আর সক্রিয় রাজনীতিতে দেখা যায়নি তাঁকে। এ প্রসঙ্গে কথা উঠলেও, তা সচেতন ভাবেই এড়িয়ে গিয়েছেন তিনি। নির্বাচনের হারের পরেই দলের সঙ্গে বাড়তে থাকে দূরত্ব। যোগদানের মাত্র ন’মাসের মাথায় বিজেপি ছাড়লেন শ্রাবন্তী। টুইটে লেখেন, ‘বাংলার উন্নয়নের জন্য বিজেপি আন্তরিক নয়। বাংলার জন্য কাজ করার মনোভাবের অভাব রয়েছে তাদের।’
দল ছাড়তেই শুরু গুঞ্জন-জল্পনা। নিন্দা-সমালোচনা-কটাক্ষ নতুন করে ঘিরেছে তাঁকে। কিন্তু বিতর্কের সঙ্গে শ্রাবন্তীর পথ চলা বহু দিনের। একাধিক বিয়ে, ঘনঘন প্রেমের গুঞ্জন— শ্রাবন্তীর ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে চর্চা নেহাত কম নয়।
মাত্র ১০ বছর বয়সে প্রথম ক্যামেরার সঙ্গে আলাপ। স্বপন সাহার ‘মায়ার বাঁধন’ ছবিতে অভিনয় করেন শ্রাবন্তী। এর পর টেলিফিল্ম। সেই সূত্রেই আলাপ পরিচালক রাজীব বিশ্বাসের সঙ্গে। কাঁচা বয়সেই তাঁর প্রেমে পড়েন শ্রাবন্তী। কাউকে না জানিয়েই মাত্র ১৬ বছর বয়সে বিয়ে করেন রাজীবকে। তার পরেই ছেলে অভিমন্যু আসে তাঁদের জীবনে।
সন্তান-সংসার সামলেই কাজে ফেরেন শ্রাবন্তী। ২০০৩ সালে রবি কিনাগীর ‘চ্যাম্পিয়ন’-এ নায়িকা হিসেবে আত্মপ্রকাশ। বিপরীতে জিৎ। এর পর টানা কাজ। রাজীবের একাধিক ছবিতেও অভিনয় করেন।
টলিউডের ‘সুখী দম্পতি’-র তালিকায় তাঁদের নাম ছিল। তবে সম্পর্কে ফাটল ধরেছিল অনেক আগেই। ১৩ বছর সংসার করে ২০১৬ সালে বিচ্ছেদ। শোনা যায়, রাজীব বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে জড়ানোয় আলাদা হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন শ্রাবন্তী।
কিন্তু নায়িকার জীবনে প্রেম ফিরেছে বারবার। এ বার শ্রাবন্তীর জীবনে বসন্ত নিয়ে আসেন এক মডেল। নাম কৃষ্ণ ব্রজ। অপেক্ষা না করে ২০১৬ সালেই ধুমধাম করে তাঁকে বিয়ে করেন শ্রাবন্তী। কিন্তু সেই দাম্পত্যও এক বছরের বেশি টিকল না। গুঞ্জন, স্বামীর যৌন চাহিদা নিয়ে সংশয় ছিল তাঁর।
প্রেমের প্রতি আস্থা হারাননি এর পরেও। দেখেছেন সংসার গড়ার স্বপ্ন। তখনই নায়িকার জীবনে প্রবেশ রোশন সিংহের। তখন তিনিএক নামী এয়ারলাইন্সের কেবিন ক্রু সুপারভাইজার। ২০১৯-এ চণ্ডীগড়ে পঞ্জাবি মতে বিয়ে করেন তাঁরা। সেই সুখও ক্ষণস্থায়ী। আবার এক বছরের মধ্যেই তাসের ঘরের মতো হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে শ্রাবন্তীর সংসার। শুরু হয় দোষারোপ-পাল্টা দোষারোপের পালা। আপাতত বিচ্ছেদের জন্য আদালতের দ্বারস্থ নায়িকা।
এই আইনি জটিলতার মাঝেই প্রেম আসে তাঁর জীবনে। প্রেমিক তাঁরই প্রতিবেশী। ব্যবসায়ী অভিরূপ নাগচৌধুরী। আপাতত নতুন প্রেমেই বুঁদ নায়িকা। শোনা যায়, অভিরূপের বাড়িতেই বেশির ভাগ সময় কাটান শ্রাবন্তী। জন্মদিনে হিরে বসানো প্ল্যাটিনামের আংটি উপহার দিয়েছেন তাঁকে। প্রেমিকের পরিবারের সঙ্গেও তাঁর ঘনিষ্ঠতা চোখে পড়ার মতো।
গত অগস্ট মাসে প্রেমিকের সঙ্গে উড়ে গিয়েছিলেন মলদ্বীপে। নীল জলের মাঝে বিলাসবহুল রিসর্টে সময় কাটিয়েছেন শ্রাবন্তী। সঙ্গী হয়েছিলেন ছেলে অভিমন্যু এবং তাঁর প্রেমিকা দামিনী ঘোষ।
ছেলের সঙ্গে আগাগোড়াই তাঁর বন্ধুত্ব। সব সিদ্ধান্তেই শ্রাবন্তীর পাশে থেকেছেন অভিমন্যু।
অভিমন্যুর সম্পর্ক নিয়েও অবগত নায়িকা। সময় কাটান ছেলের প্রেমিকার সঙ্গেও। দিন কয়েক আগেই ছেলের সঙ্গে পালন করেছেন দামিনীর জন্মদিন। সব বিতর্ক, কটাক্ষ পেরিয়ে পরিবার আর মনের মানুষকে নিয়েই মজে শ্রাবন্তী।