মৃত্যু ছিনিয়ে নিয়েছে দুই মহীরুহ শিল্পীকে। পর্দায় তবু দম্পতি হয়েই রয়ে গেলেন সৌমিত্র-স্বাতীলেখা।
দুঃখ এসেছে, এসেছে রাগ-অভিমান-ক্ষোভ। তবু হাতে হাত, পাশে থাকা। আজীবন। রবি ঠাকুরের পংক্তিই যেন এই পাশে থাকার অর্থ বলে দেয়— ‘কত দুঃখ আছে, কত অশ্রুজল- /প্রেমবলে তবু থাকিয়ো অটল।’ সেই কথাই ভরসার সুরে বেজে উঠল 'বেলাশুরু'-র সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের কণ্ঠে। ‘বেলাশুরু’ থেকে ‘বেলাশেষে’। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় এবং স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত জুড়ে রইলেন জীবনের প্রতিটি বেলায়।
‘বেলাশুরু’র শ্যুটিং চলছে তখন। পরিচালক নন্দিতা-শিবপ্রসাদের কাছে সৌমিত্র জানতে পারলেন তাঁকে স্বাতীলেখার চুল আঁচড়ে দিতে হবে। শুনে কী বলেছিলেন তিনি? শিবপ্রসাদ বললেন, “সৌমিত্রদা দৃশ্য জেনে বলেছিলেন, ‘জীবনে কোনও দিন দীপার চুলই আঁচড়ে দিলাম না! এখানে স্বাতীলেখার চুল আঁচড়াতে হবে?’ শিবপ্রসাদের মনে আছে ওই দৃশ্য শ্যুট হওয়ার পরে স্বাতীলেখা বলেছিলেন, জীবনে এত যত্ন করে কেউ কোনও দিন তাঁকে চুল আঁচড়ে দেয়নি। এ শুধু নিতান্তই চুল আঁচড়ানোর মতো কেজো দৃশ্য নয়। নরম হাতে স্ত্রীর চুলে চিরুণি চালানোয় জড়িয়ে থাকা মায়াই যেন স্পষ্ট করে দেয় বিয়ে থেকে আজীবনের সম্পর্ক হয়ে ওঠার সফর।
মৃত্যু ছিনিয়ে নিয়েছে দুই মহীরুহ শিল্পীকে। পর্দায় তবু দম্পতি হয়েই রয়ে গেলেন সৌমিত্র-স্বাতীলেখা। চিরকালের মতো। সৌজন্যে পরিচালক জুটি নন্দিতা রায়-শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। ‘বেলা শেষ’-এর পরে তাঁদের ছবি ‘বেলা শুরু’তে শেষ বারের মতো পর্দায় ফিরে আসছেন প্রয়াত দুই শিল্পী।
‘বেলা শেষে’ দেখেছিল প্রৌঢ়া স্ত্রী স্বাতীলেখাকে স্বাবলম্বী করে তুলতে স্বামী সৌমিত্রর ইচ্ছাকৃত আলাদা থাকার লড়াই। অনুভব করেছিল সেই আলাদা থাকার পরতে পরতে জড়িয়ে থাকা অনুচ্চারিত ভালবাসার টান। দীর্ঘকাল একে অন্যের অভ্যাস হয়ে থাকাকে নতুন করে অনভ্যাস হিসেবে গড়ে তুলতে পদে পদে হোঁচট খাওয়া বৃদ্ধ দম্পতি নাড়া দিয়ে গিয়েছিলেন দর্শক মনে।
‘বেলা শুরু’তে আরও বৃদ্ধ হয়ে পড়া সেই দম্পতির একে অন্যকে আঁকড়ে ধরার ইঙ্গিত দিয়ে যায় প্রচার ঝলক। সৌমিত্রর দরাজ গলায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পংক্তিতে ধরা থাকে দাম্পত্যের সারসত্য। প্রয়াত সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের জন্মদিনে তাঁকেই উৎসর্গ করে ছবির ঘোষণা করল শিবপ্রসাদ-নন্দিতার প্রযোজনা সংস্থা উইন্ডোজ প্রোডাকশন্স। ছবির মুক্তি আগামী ২০ মে।