Anupam Roy Interview

একটা ঘটনায় প্রতিষ্ঠানকে বিচার করা অনুচিত, বিয়ে নিয়ে বিতৃষ্ণা নেই, জন্মদিনে অনুপম-উপলব্ধি

বুধবার, ২৯ মার্চ অনুপম রায়ের জন্মদিন। জন্মদিনে প্রেম, বিয়ে, গান, জীবন নিয়ে আনন্দবাজার অনলাইনের সঙ্গে খোলামেলা আড্ডা দিলেন গায়ক।

Advertisement
সম্পিতা দাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ মার্চ ২০২৩ ০৯:০১
Singer Anupam Roy Interview on his 41th birthday dgtl

যে সময়টা ব্যর্থতা এসেছে কী ভাবে নিজেকে সামলেছেন অনুপম? ছবি: অনুপম রায়ের ফেসবুক থেকে।

সদা মিতভাষী তিনি। সাফল্য পেয়েছেন, তবু জাহিরে বিশ্বাসী নন। সচেতন ভাবেই বিতর্ক এড়িয়ে চলেন। ব্যক্তিগত জীবন নয়, বরং কাজের মাধ্যমে পরিচিতি পেতে চান শিল্পী অনুপম রায়। বুধবার, ২৯ মার্চ শিল্পীর ৪১তম জন্মদিন। তার আগে আনন্দবাজার অনলাইনের সঙ্গে সঙ্গীত, প্রেম, বিয়ে, জীবন নিয়ে আলাপচারিতায় অনুপম রায়।

প্রশ্ন: শুভ জন্মদিন! উইকিপিডিয়া বলছে ৪০-এ পা দিলেন?

Advertisement

অনুপম: ধন্যবাদ! তবে ৪০ নয়, ৪১-এ পা দিলাম এ বার।

প্রশ্ন: জীবনের এই চার দশক পার করে জন্মদিনের উপলব্ধি কী?

অনুপম: উপলব্ধির সংখ্যা বেশ অনেকটা। তবে যেটা আমার মনে হয়, যা আমার জীবন দিয়ে বুঝলাম, সেটা হল— পৃথিবীতে বিচার বলে কোনও কিছুর অস্তিত্ব নেই।

প্রশ্ন: আপনার সঙ্গে তেমন কোনও অবিচার হয়েছে? যার ফলে এমন উপলব্ধি?

অনুপম: না, আমি তো খুব ক্ষুদ্র। পৃথিবীর ইতিহাস ও মানুষের যে ইতিহাস, সেটা দেখার পরই এমন ধারণা তৈরি হয়েছে।

Singer Anupam Roy Interview on his 41th birthday dgtl

জন্মদিনে প্রেম, বিয়ে, গান, জীবন নিয়ে আনন্দবাজার অনলাইনে খোলামেলা আড্ডায় অনুপম। ছবি: অনুপম রায়ের ফেসবুক থেকে।

প্রশ্ন: এমন কোনও একটা কাজ যা প্রত্যেক জন্মদিনে করে থাকেন?

অনুপম: (স্মিত হাসি) প্রতি বছর জন্মের তিথি দেখে মা পায়েস খাওয়ান। এটাই ছোটবেলা থেকে হয়ে আসছে, নড়চড় হয়নি। ৪০ বছর ধরে পেয়ে এসেছি। এ বছরও তেমনই পরিকল্পনা।

প্রশ্ন: জন্মদিনে বিশেষ কারও শুভেচ্ছাবার্তার প্রত্যাশায় থাকেন?

অনুপম: না, কারও প্রত্যাশায় থাকি না। জন্মদিনটা আসলে মা-বাবার। আমাকে পৃথিবীতে আনার সব থেকে বড় কৃতিত্ব তাঁদের।

প্রশ্ন: অনুপম তো শুধু গাইয়ে নন, সুরকার, লেখক অনেকগুলো পরিচয়। কিন্তু আপনার নিজের ভাল লাগা কোনটা?

অনুপম: আসলে বলাটা মুশকিল। প্রথমে তো কবিতা লিখেছিলাম, তাই শব্দটাই আসে প্রথম। তার পর সুর। আসলে আমি গান বাঁধার লোক। কথা দিয়ে, সুর দিয়ে সবটা নিয়ে কাজ করতে চাই। শুধু সুর কিংবা শুধুই শব্দ দিয়ে কাজ করলে তৃপ্তি পাই না। যদিও হিন্দিতে তেমনটাই করতে হয়। তবে আমি নিজে যখন পুরোটা করতে পারি, পূর্ণতা আসে।

প্রশ্ন: জীবনে সাফল্য তো দেখছেন, কিন্তু যে সময়টা ব্যর্থতা এসেছে কী ভাবে নিজেকে সামলেছেন?

অনুপম: আসলে সব সময় যে মানুষ সাফল্যই পাবে, এটা যেমন হয় না। তেমন দিনের পর দিন ব্যর্থতা থাকবে সেটাও নয়। তবে যেটা পারি সেটা হল, মেনে নিতে পারি। আমি মনে করি, সাফল্য যেন আমাকে নমনীয় করে, মাটির কাছাকাছি থাকতে সাহায্য করে। অন্য দিকে, কোনও ব্যর্থতাই যাতে আমাকে অন্ধকারে না ঠেলে দেয়, সেটা দেখার চেষ্টা করি। ব্যর্থতা যখন আসে, আশার স্বপ্ন দেখি। সাফল্য যখন আসে, তখন সর্তক হই। মনে হয়, যে কোনও সময় পড়ে যেতে পারি। এই দুইয়ের সমতা নিয়ে বাঁচতে ভালবাসি।

graphic of top 10 songs of Anupam Roy

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

প্রশ্ন: বর্তমানে শিল্পীর অস্তিত্বর জন্য সমাজমাধ্যমের গুরুত্ব ঠিক কতটা?

অনুপম: সোশ্যাল মিডিয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। আমি মনে করি, শিল্পীর শিল্পকর্মটা সব থেকে বড়। তবে এখনকার দিনে এত মানুষ এত কিছু করছেন যে, চোখে পড়ার জন্য অনেক কিছুই করতে হয়। না হলে অনেক সময় ভাল শিল্পকর্ম সঠিক কদর পায় না।

প্রশ্ন: বর্তমানে ছোট-বড় সব তারকারই সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার থাকে আপনার রয়েছে তেমন কেউ?

অনুপম: না, যতটা সমাজমাধ্যমে উপস্থিতি রয়েছে, সবটাই নিজেই করি। এই তো সে দিন অনেক কষ্ট করে একটা রিল বানিয়েছি সবে।

প্রশ্ন: এতগুলো বছরে নিজের মধ্যে কী পরিবর্তন লক্ষ করলেন?

অনুপম: এটা অন্যরা ভাল বলতে পারবেন। তবে বলতে পারি এখন অনেক বেশি ধৈর্যশীল হয়েছি, উচ্চাকাঙ্ক্ষা কমেছে। আগে জীবনের স্বপ্নগুলো ছিল ঢেউয়ের মতো। সেই ঢেউয়ের উচ্চতা ও গহ্বর কমেছে।

জন্মদিনে কি বিশেষ কারও শুভেচ্ছাবার্তার প্রত্যাশায় থাকেন অনুপম?

জন্মদিনে কি বিশেষ কারও শুভেচ্ছাবার্তার প্রত্যাশায় থাকেন অনুপম? ছবি: অনুপম রায়ের ফেসবুক থেকে।

প্রশ্ন: অনুপম তো ভীষণ চুপচাপ! কিন্তু আনন্দ হলে বহিঃপ্রকাশ করেন কী ভাবে?

অনুপম: আমার একটা খুব আনন্দের মুহূ্র্ত ছিল যখন ‘পিকু’ ছবিতে ‘বেজ়ুবান’ গানটা রাখতে সুজিত’দা (সরকার, পরিচালক) সম্মতি দেন। ভীষণ খুশি হয়েছিলাম সে দিনটা। সে দিন বন্ধুদের সঙ্গে সারা রাত গানবাজনা করি। আসলে যখন মন ভাল থাকে, আমি আশপাশে বেশি করে লোকজন চাই।

প্রশ্ন: কোন ধরনের সঙ্গীতের কাছে ফিরে ফিরে যান?

অনুপম: ছোটবেলায় রবীন্দ্রসঙ্গীতে ডুবেছিলাম। কারণে বাড়ির পরিবেশ তেমনই ছিল। সেই ছিল সঙ্গীতের সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয়। তার পর একটু বড় বয়স থেকে সিনেমার হিন্দি গান। শুনতে ভালই লাগত। তার পর যখন কবীর সুমন, নচিকেতা, অঞ্জন দত্তরা এলেন, ওগুলোই শোনা হত। আর কিছুই শুনতাম না।

প্রশ্ন: কোন শিল্পী আপনাকে ব্যক্তিগত অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে?

অনুপম: আমি পিঙ্ক ফ্লয়েডের দ্বারা ভীষণ অনুপ্রাণিত। এক-একটা গানের দাঁড়িকমা পর্যন্ত মুখস্থ। গত পাঁচ-ছয় বছর ধরে আমেরিকান সঙ্গীতশিল্পী জেমস টেলরের গান শুনছি। ভীষণ ভাল লাগে। তবে শুধু গান নয়, সিনেমা, বই সবই আমার জীবনে প্রভাব ফেলেছে। আসলে শিল্পকে পুঁজিবাদী সমাজ কখনই মানতে পারেনি। শিল্পের কাছে মানুষকে নতজানু হতে হয়েছে বিশেষ বিশেষ সময়ে।

প্রশ্ন: জীবনে কোনও আফসোস রয়েছে?

অনুপম: আমি সারা জীবন অঙ্ক করেছি, গানটা অনেক পরে শুরু করেছি। সেটা এক দিক থেকে যেমন আফসোস। তেমনই আবার মনে হয়, জীবনে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সময়টাও নিশ্চয়ই কোনও না কোনও ভাবে আজকের এই মানুষটাকে গড়ে তুলেছে। নিশ্চয়ই একটা অবদান রয়েছে। তবে ৪১ বছরে এসে মনে হয়েছে, সে অর্থে আফসোস বলতে, জীবনে যদি একটু ফাঁকি দিতে পারতাম তা হলে ভাল হত। বাইরে যদি বন্ধুদের সঙ্গে আরও একটু ফুর্তি করতে পারতাম। অনেক কিছুই হয়তো মিস্‌ করে গিয়েছি।

প্রশ্ন: ইন্ডাস্ট্রির অন্দরে সত্যি কি কোনও লবি রয়েছে?

অনুপম: সবাই একা এসেছি, একাই যেতে হবে। আমি কোনও লবিতে নেই। আমার সঙ্গে সকলের সম্পর্ক ভাল। তবে আগের চেয়ে পার্টি একটু কম হচ্ছে।

প্রশ্ন: সচেতন ভাবে বিতর্ক এড়িয়ে চলেই বলেই কি কোনও লবিতে নেই?

অনুপম: আমার কাজই যেন আমার পরিচয় হয়। বিতর্কে থেকে পরিচয় তৈরি করায় আমি বিশ্বাসী নই।

প্রশ্ন: অনুপম রায় কি ভবিষ্যতে কোনও গানের স্কুল খুলবেন? এখন তো জনপ্রিয় শিল্পীদের অনেকেরই প্রতিষ্ঠান রয়েছে...

অনুপম: না, আসলে আমি এমন কোনও অ্যাকাডেমিতে নিজে শিখতে যেতে চাই। আমি ছাত্র হওয়াটা ভীষণ উপভোগ করি, আমার জানার খিদেটা রয়েছে।

প্রশ্ন: প্রায় এক বছর হল আপনার বিবাহবিচ্ছেদের, বিয়ের উপর আস্থা রয়েছে এখনও?

অনুপম: আসলে এটা কোন মানুষটা কেমন, তার উপর নির্ভর করে। সব মানুষকে যে বিয়ে করতে হবে এমনটা নয়, যে বিয়ে করতে চায় করতেই পারে। তবে বিয়ে নিয়ে আমি স্থবির। বিয়ে নামক প্রতিষ্ঠানের প্রতি কোনও বিতৃষ্ণা নেই।

প্রশ্ন: আর প্রেমের উপর?

অনুপম: কোনও একটা ঘটনা দিয়ে গোটা প্রতিষ্ঠানটাকে বিচার করা যায় না। আমার জীবনের ছোট একটা হেরে যাওয়া দিয়ে গোটা জীবনটাকে বিচার করা যায় না। সেটা মনে হয় নেতিবাচক হয়ে যাবে। সম্পর্কে বিশ্বাস রাখি, শ্রদ্ধা করি।

প্রশ্ন: ফের কি ঘর বাঁধার পরিকল্পনা রয়েছে?

অনুপম: এই মুহূর্তে সেটা ভাবার পরিস্থিতিতে নেই।

আরও পড়ুন
Advertisement