Silajit Majumder

Shilajit: পথের অবোলা পশুদের রক্ষার ভারও তো জনপ্রতিনিধিদের, বার্তা শিলাজিতের

পথকুকুর-প্রেম নিয়ে অভিনেত্রী শ্রীলেখা মিত্রের হেনস্থার প্রতিবাদ গায়কের। ভিডিয়োয় আবেদন রাখলেন জনপ্রতিনিধিদের কাছে।

Advertisement
বিভাস রায়চৌধুরী
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০২১ ১৮:৪৬
 শিলাজিৎ মজুমদার।

শিলাজিৎ মজুমদার।

'দেওঘরের স্মৃতি' রচনায় শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় লিখেছিলেন একটি পথকুকুরের কথা। স্বাস্থ্য উদ্ধারে লেখক কিছু দিন দেওঘরে ভাড়াবাড়িতে ছিলেন। সেখানেই একটি কুকুর তাঁর রোজকার সঙ্গী হয়ে ওঠে। কিছু দিন পরে লেখক যখন দেওঘরের পাট চুকিয়ে ফেরার ট্রেন ধরতে যান, হঠাৎ দেখেন কুকুরটি স্টেশনে দাঁড়িয়ে। সে যেন বিষণ্ণ। আর দেখা হবে না শরৎচন্দ্রের সঙ্গে, তা যেন বুঝতে পেরেছে কুকুরটি। ট্রেন ছাড়তেই লেখকের চোখ ফেটে জল। ভালবাসার পরম সম্পদ এই অশ্রু।

ইদানীং অবশ্য ছবিটা একেবারেই অন্য রকম। পশু-পাখি-বৃক্ষপ্রেমিক মানুষ এখন শুধু উপহাসের পাত্র নয়, তাদের উপরে আক্রমণ‌ও চলে রীতিমতো। দিন কয়েক আগে পথকুকুর-প্রেম নিয়ে প্রতিবেশীদের নিগ্রহের শিকার হয়েছিলেন শ্রীলেখা মিত্র। অভিনেত্রীর আবেগঘন ভিডিয়ো নিয়ে শোরগোল পড়েছে ফেসবুকে। সেই সূত্রেই এ বার অত্যাচারিত পশু-প্রেমিকদের পাশে দাঁড়ালেন গায়ক, অভিনেতা শিলাজিৎ মজুমদার। শ্রীলেখাকে সমর্থন জানিয়ে শিলাজিৎ একটি ভিডিয়ো আবেদন রেখেছেন জনপ্রতিনিধিদের কাছে।

Advertisement

ভিডিয়োয় শিলাজিৎ বলেছেন, "দয়া করে জন্তু-জানোয়ারদের উপর অযথা অত্যাচার করবেন না। পৃথিবীতে কোনও সভ্য দেশে মানুষ পশুদের উপর এমন অত্যাচার করে বলে আমার জানা নেই। স্বাধীনতার পর এই দেশ শাসন করার দায়িত্বে যে কাউন্সিলর, বিধায়ক, সাংসদরা এসেছেন, আসবেন, তাঁদের‌ই দায়িত্ব এটা। প্রতিবেশী পশু-প্রাণীদের উপরে অত্যাচার বন্ধ করতে না পারার ব্যর্থতা তাঁদেরও। তাঁরা কেন খেয়াল করছেন না? পাড়ায় পাড়ায় অবলা প্রাণীরা এ ভাবে নির্যাতিত হচ্ছে, কেন তাঁদের টনক নড়ছে না? যারা কুকুর বিড়াল পাখি ভালবাসে, তারাই শুধু প্রতিবাদ করে, কিন্তু সেই প্রতিবাদ কার্যকরী হয় না।"

আরও পড়ুন:
আরও পড়ুন:

শ্রীলেখা মিত্রের হেনস্থা নিয়েও সরব শিলাজিৎ। বিষণ্ণ গলায় বলেছেন, "সাধারণ কোনও নাগরিক যদি জন্তু-জানোয়ারদের উপরে অত্যাচারের প্রতিবাদ করেন, তাদের খেতে দেন বা আশ্রয় দেন, আমাদের দেশে তাঁকে শ্রীলেখা মিত্রের মতো নিগৃহীত হতে হয়। ছবিতে দেখছিলাম, একটা মানুষকে ঘিরে ধরে হেনস্থা করছে সবাই। খুবই লজ্জার ঘটনা। প্রতিবেশী প্রাণীর প্রতি সহানুভূতিশীল এক জন মানুষকে সমর্থন করা তো দূরের কথা, উল্টে তারা বলছে— 'রাস্তার কুকুর বাড়ি নিয়ে গিয়ে ভালবাসুন'! এই যে যাদের 'রাস্তার কুকুর' বলা হচ্ছে, তাদের কয়েকটাকে আমি বাড়ি নিয়ে এসে প্রতিপালন করি গর্বের সঙ্গে, আদরের সঙ্গে। কিন্তু একটা পাড়ায় যত দেশি কুকুর থাকে, তাদের সকলকে তো বাড়িতে নিয়ে এসে প্রতিপালন করা সম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে আমরা যারা ভালবাসি, তারা তাদেরকে একটু খেতে দিই, গায়ে হাত বুলিয়ে আদর করি— এটুকুই তো করতে পারি। তাতে বাধা দিচ্ছে কারা? কারা কুকুরের পায়ে বোমা বেঁধে দিচ্ছে? কেমন হয়ে যাচ্ছে মানুষের মন? নির্যাতিত পশুরা মানুষের ভাষায় কথা বলে প্রতিবাদ জানাতে পারে না বলে তাদেরকে রক্ষা করতে হবে আমাদেরই।"
ফেসবুকে শিলাজিতের এই ভিডিয়ো পোস্টে মন্তব্য এসেছে অনেক। মন্তব্য করেছেন শ্রীলেখা। কেউ উল্লেখ করেছেন পশু নির্যাতন বিরোধী আইনের কথা। এক জনের মন্তব্য— “এই অসভ্যদের 'পশুর অধম' বলা যায় না, তা হলে পশুদের অপমান করা হয়।” বিষয়টি মিমি চক্রবর্তী, সায়নী ঘোষদের মতো পশুপ্রেমী তারকা তথা জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক পদাধিকারীদের গোচরে আনার প্রস্তাব‌ও উঠেছে।

যশোহর রোডের সুপ্রাচীন গাছ বাঁচানোর আন্দোলনে যুক্ত সমাজকর্মী চিকিৎসক রাহুলদেব বিশ্বাস। এ প্রসঙ্গে বললেন, “পৃথিবী যে শুধু মানুষের নয়, অন্য পশু-পাখি-গাছদের‌ও— এই বোধটাই বর্তমান ভোগবাদী সমাজে মানুষের মন থেকে উধাও হয়ে যাচ্ছে। তার ফলেই এমন স্বার্থপরতা এসেছে। কিন্তু বাস্তব সত্য এটাই যে, অন্যান্য প্রাণীর প্রতি মানুষের মনে যদি ভালবাসা না থাকে, তা হলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হবে মানুষেরই।”
প্রায় নিস্তরঙ্গ জলে ঢিল ফেলেছেন স্পষ্টবাদী শিলাজিৎ। উঠে আসছে নানা মতামত। সকলের‌ই অপেক্ষা, জনপ্রতিনিধিরা কখন সক্রিয় হবেন।

Advertisement
আরও পড়ুন