যিশু সেনগুপ্ত এবং শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়।
পৃথিবীর সমস্ত রঙিন পাড়া, সূর্যমুখী রং আজ যিশুর জন্য। আজ ওর জন্মদিন। সামনেই ‘বাবা বেবি ও’ ছবির ৫০ দিন পূর্ণ হবে। নায়ক নির্ভর নতুন মুখ ঘেরা এই ছবি ওর অভিনয় গুণে উইনডোজ পরিবারকে এগিয়ে দিল।
উইনডোজের সঙ্গে আরও ছবি করবে যিশু। প্রিয় নায়ককে যখন সঙ্গে পেয়েছিই, তখন একটা কথা স্বার্থপরের মতো বলতে চাইব— ও শুধু উইনডোজের সঙ্গেই যেন বেশি কাজ করে। এমনটাও বলতে ইচ্ছে করে অনেক সময়ে।
এখন বক্স অফিস যিশুকে চাইছে। বক্স অফিস বলতে আমরা রোম্যান্টিক নায়ক বুঝি। আর একটা লড়াই (অ্যাকশন)করা নায়কের মুখও বুঝি। যিশুর দুই-ই আছে। জানি না যিশুকে এ ভাবে আগে বলেছি কি না, কিংবা ওর জন্য এমন করে লিখেছি কি না। পুরুষ হিসেবে বলতে পারি যিশুর রোম্যান্টিক আবেদন সাংঘাতিক! অনেক পুরুষকে বলতে শুনেছি যিশুর রোম্যান্টিক আবেদনটাই সবচেয়ে নজরকাড়া। ভীষণ মন টানে। আর মেয়েদের কথা তো বাদই দিলাম। অল্প বয়সের মেয়ে থেকে বেশি বয়সের মহিলা, সকলের কাছে ওর একটা গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হয়েছে।
আমাদের সঙ্গে ও ‘বাবা বেবি ও’ বা ‘পোস্ত’ করেছে। ‘পোস্ত’ করার সময় দেখেছি যিশু মিমির সঙ্গে অভিনয়ের জন্য এক রকম ভাবে নিজেকে প্রস্তুত করেছে এবং তখন কত কম বয়সেই বাবা হওয়ার চ্যালেঞ্জ নিয়ে নিয়েছে। অন্য দিকে ২০২২-এ প্রায় কুড়ি বছরের ছোট শোলাঙ্কির সঙ্গে প্রেমের দৃশ্যে কাঁচা-পাকা দাড়ির যিশু যে ভাবে পর্দায় রোম্যান্টিসিজম দেখাল, তাতে শোলাঙ্কির মতো নতুন অভিনেত্রী নায়িকা হয়ে উঠল। যিশু এমনই। যেমন শাহরুখ দীপিকা পাড়ুকোনের সঙ্গে ‘ওম শান্তি ওম’ করার সময় একদম আলাদা। আবার ‘রব নে বনা দি জোড়ি’ করার সময়ে স্রেফ অভিনয়ের জোরে অনুষ্কার সঙ্গে জুটি তৈরি করে ফেলল।
যিশুও তেমন কখনও শাহরুখ, তো কখনও রণবীর কপূর। এমন এক জোরালো নায়ক, যাকে পেলে পরিচালক নতুন অভিনেত্রীকে ছবিতে নেওয়ার সাহস পায়। যাকে পেলে প্রযোজক নতুন পরিচালকদের দিয়ে কাজ করানোর আত্মবিশ্বাস পায়। এমন নায়ককেই আজ বাংলা ছবির দরকার। কারণ বাংলা ছবির লক্ষ্মীকে আনতে গেলে যিশুকে বছরে অন্তত একটা বাণিজ্যিক ছবি করতেই হবে। আশা করি আনন্দবাজার অনলাইনে যিশু আমার এই লেখা পড়বে। ও নিশ্চয়ই ভাববে বিষয়টা নিয়ে।
খুব ভাল লাগে যখন দেখি অন্য ইন্ডাস্ট্রিতেও যিশু দারুণ সব কাজ করছে। গর্ব হয় ওর জন্য। তবুও যিশুকে বলব, বাংলা ইন্ডাস্ট্রির জন্য একটু বেশি সময় দিতে। ও এমনই এক অভিনেতা, যে অনায়াসে শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কবিতা আবৃত্তি করতে পারে। ‘পোস্ত’-য় শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কবিতা ওর মুখে শুনে কবি-কন্যা আমায় ফোন করে জানিয়েছিলেন যিশুর আবৃত্তি ওঁদের কত ভাল লেগেছে।
নায়কের কাছে আমরা যা চাই, সে তা-ই করে দেখায়। যে ভাষায় নায়ক অভিনয় করবে, সেই ভাষায় যেন তার দখল থাকে। সেটা খুব জরুরি। বাংলা ভাষায় ওর দখল আছে, তা বার বার প্রমাণ করেছে যিশু।
অন্য দিকে যিশুর কাজ আর পরিবার ছাড়া অন্য কোনও বাহ্যিক বিষয়ে আগ্রহ নেই। আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে খুব বেশি বাণিজ্যিক নায়ক নেই, যে বক্স অফিসে শোরগোল ফেলতে পারে। এখন সময় হয়েছে, যিশু যেন বেশি করে বাণিজ্যিক ছবি করে যা দর্শককে টেনে আনবে।
একসঙ্গে কাজ করতে গিয়ে দেখেছি, ও নিজের চেহারা নিয়ে ভাবেনি কোনও দিন। অথচ ওর উচ্চতা বরাবর নজর কেড়েছে। বলিউডে লোকে আজও বাবা হতে ভয় পায়। যিশুর বিন্দুমাত্র বাবা হতে ভয় নেই। বিভিন্ন চরিত্রে নিজেকে ভাঙতে ভাঙতে এগিয়েছে ও।
যিশু, জন্মদিনে একটা কথাই বলি— নিজের ঘরের কাজে আরও বেশি সময় দাও। যতই আরব সাগরের ঢেউয়ের জলোচ্ছ্বাস তোমায় ভিজিয়ে রাখুক। বাংলা ছবির বাণিজ্যে লক্ষ্মীকে অচল করে রাখার অনেকখানি দায়িত্বও কিন্তু তোমার! তুমি তা ভুলতে পারো না!