অভিযুক্ত পরিচালকের গ্রেফতারি নিয়ে সরব সাহেব ভট্টাচার্য, তৃণা সাহা, ভাস্বর চট্টোপাধ্যায়, রূপা ভট্টাচার্য। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
ঠাকুরপুকুর গাড়ি দুর্ঘটনায় গ্রেফতার অভিযুক্ত পরিচালক সিদ্ধান্ত দাস ওরফে ভিক্টো। রবিবার মত্ত অবস্থায় গাড়ি চালিয়ে ছয় জনকে ধাক্কা দেন ছোট পর্দার পরিচালক। এই খবর প্রথম জানায় আনন্দবাজার ডট কম। কলকাতা পুলিশের ডিসি দক্ষিণ-পশ্চিম (বেহালা) রাহুল দে জানিয়েছিলেন, সোমবার আদালতে তোলা হবে অভিযুক্ত পরিচালককে। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, এ দিন তাঁকে আদালতে তোলা হয়েছে। অভিযুক্তকে গ্রেফতারও করেছে পুলিশ। রবিবারের ঘটনা এবং পরিচালক ভিক্টোর এই কার্যকলাপে রবিবার থেকেই সমাজমাধ্যমে ক্ষোভ উগরে দেন ছোট পর্দার অভিনেতা, পরিচালকেরা। তাঁদের দাবি, এই ঘটনা টেলিপাড়ার মাথা হেঁট করে দিয়েছে। প্রত্যেকেই অভিযুক্তের শাস্তি দাবি করেছেন। সোমবার পরিচালক ভিক্টোর গ্রেফতারির খবর আনন্দবাজার ডট কমের মারফত প্রথম জানতে পারেন ভাস্বর চট্টোপাধ্যায়, তৃণা সাহা, সাহেব ভট্টাচার্য, রূপা রাই ভট্টাচার্য।
অভিযুক্তের গ্রেফতারি নিয়ে কী মত তাঁদের? এই ঘটনা একটু হলেও কি হুঁশ ফেরাবে টেলিপাড়ার?
প্রশ্ন রাখা হয়েছিল চার জনের কাছেই। শুটিংয়ে ব্যস্ত ভাস্বর বলেন, “যা ঘটেছে সেটা অপরাধ। মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানো, মানুষ মেরে ফেলা দণ্ডনীয় অপরাধ। এটা জানার পরেও কী করে একই পথে পা বাড়ালেন পরিচালক ভিক্টো?” অভিনেতার ব্যঙ্গ, যাঁদের এত অর্থ, এত প্রতিপত্তি, দামি গাড়িতে চড়ে ঘোরেন তাঁদের চালক রাখার সামর্থ্য নেই! অভিনেতার কথায়, “প্রত্যেকে জানতেন, তাঁরা নেশা করতে যাচ্ছেন। ভজন শুনতে নয়! তিনি হতবাক, ভোর পর্যন্ত নেশা করে বেসামাল হয়ে গাড়ি চালানোর সাহস হয় কী করে!” একই সঙ্গে ভাস্বর সহমর্মী মৃত পথচারীর প্রতি। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, “বাজার করতে এসে প্রাণ গেল এক নিরীহ পথচারীর। এই দায় কে নেবে, ইন্ডাস্ট্রি?”
প্রায় একই কথা বলতে শোনা গিয়েছে অভিনেত্রী তৃণা সাহাকেও। ‘পরশুরাম আজকের নায়ক’ ধারাবাহিকের শুটিংয়ের ফাঁকেই আনন্দবাজার ডট কমকে বললেন, ‘‘কে কী করেছে তা নিয়ে আমি কোনও মন্তব্য করতে চাই না। শুধু এটুকু জানি, খুন করার মতোই মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানো অপরাধ। আইন আমাদের সেটাই শিখিয়েছে।’’
তৃণা বিশ্বাস করেন, রাত জেগে পার্টি করা কোনও অপরাধ নয়। কিন্তু তারকা থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ— প্রত্যেকেরই কিছু নিয়ম মেনে চলা উচিত। তৃণা বললেন, ‘‘আমাদের নানা ধরনের অনুষ্ঠানে যেতে হয়। অনেক সময়েই বাড়ি ফিরতে রাত হয়। বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে পার্টি করলে, প্রয়োজনে সঙ্গে গাড়ির চালক থাকে। তার পরেও প্রয়োজন হলে অ্যাপ ক্যাব পরিষেবা রয়েছে। কিন্তু খেয়াল রাখি, এমন কিছু যাতে না করি, যাতে অন্যের কোনও রকম ক্ষতি হয়।’’
টেলিপাড়ার পরিচিত মুখ ভিক্টো তথা সিদ্ধান্ত। তাঁর এই কাণ্ডজ্ঞানহীনতায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে টেলিপাড়ার অন্দরে। পাশাপাশি, বিনোদন দুনিয়ার সঙ্গে যুক্ত খ্যাতনামীদের দায়িত্বজ্ঞানহীনতার প্রশ্নও উঠছে। এই বিষয়ে কী মত সাহেব ভট্টাচার্যের?
এই প্রসঙ্গে সাহেব বলেছেন, “একটা ঘটনা দিয়ে পুরো ইন্ডাস্ট্রিকে বিচার করা যায় না। প্রতি শনি-রবিবার কলকাতা পুলিশের জালে ধরা পড়ে বহু মদ্যপ চালক। তাঁরা বেশির ভাগই এই ইন্ডাস্ট্রির অংশ নয়। বরং আমি বহু অভিনেতা ও পরিচালককে চিনি যাঁরা পার্টি করতে হলে সঙ্গে চালক নিয়ে যান। আর এখন তো অ্যাপের মাধ্যমেই চালক ডেকে নেওয়া যায়। আমি ২০১৭ সাল থেকে বলে আসছি, মদ্যপ হয়ে গাড়ি চালানো বড় অপরাধ। এর কোনও দ্বিমত হয় না। কিন্তু শুনতে খারাপ লাগলেও, এখন এটাই কলকাতার সংস্কৃতি হয়ে গিয়েছে। মত্ত অবস্থায় গাড়ি চালানোকেই এখন গৌরবান্বিত করা হয়। অনেকে আবার বলেন ‘খেয়ে আমি ভাল গাড়ি চালাই’। এর চেয়ে বোকা বোকা কথা আর কিছু হয় না।”
২০১৭ সালে ‘ড্রিংক অ্যান্ড ড্রাইভ’-এর বিরুদ্ধে দীর্ঘ প্রচার করেছিলেন সাহেব। অভিনেতার কথায়, “আমরা অনেক চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু প্রশাসনিক সাহায্যের দরকার। সেটা না পেলে কিছুই কার্যকরী হয় না।”
ভাস্বরের মতোই সমাজমাধ্যমে সোচ্চার ছোট পর্দার অভিনেত্রী রূপা ভট্টাচার্য। তিনিও ঘটনাটি জানার পর থেকেই ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন। অভিনেত্রী শুটিংয়ে ব্যস্ত। তার ফাঁকেই অভিযুক্তের গ্রেফতারির খবরে স্বস্তির শ্বাস ফেলেছেন। বলেছেন, “একেই ভিক্টোর ঘটনায় লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছে। লোকের থেকে শুনতে হচ্ছে, আমরা তারকা, প্রভাবশালী। প্রভাব খাটিয়ে ঠিক ছাড় পেয়ে যাব। ভিক্টোর গ্রেফতারি আমাদের মুখরক্ষা করল।” এই জায়গা থেকেই তাঁর আফসোস, দিনকাল এতটাই বদলে গিয়েছে যে আইন আইনের পথে চললে সেটাও যেন বাহবা দেওয়ার বিষয় হয়ে উঠেছে! অপরাধীকে আইন সাজা দেবে, অভিযুক্তকে প্রশাসন গ্রেফতার করবে— এটাই স্বাভাবিক। সাধারণ মানুষ এটুকুই তো চায়!
তিনি এ-ও জানান, কার্যকরী প্রযোজক শ্রিয়া বসুর বেসামাল অবস্থার ভাইরাল ভিডিয়ো তিনিও দেখেছেন। একজন নারী হিসাবে অন্য এক নারীর এই অবনমন দেখে প্রচণ্ড ব্যথিত অভিনেত্রী। পাশাপাশি প্রশ্ন তুলেছেন, কাজের শেষে কে, কী ভাবে জীবন কাটাবেন অবশ্যই তাঁর ব্যক্তিগত বিষয়। তা বলে মাত্রাজ্ঞান থাকবে না? বিশেষ করে পরের দিন যদি ফের কাজের দুনিয়ায় ফিরতে হয়। তাঁর আক্ষেপ, “পরিচালকের নিজেরই যদি মাত্রাজ্ঞান না থাকে তা হলে বাকিদের তিনি সামলাবেন কী করে?”
ভাস্বর এর আগেই জানিয়েছেন, ক্রমশ নেশায় তলিয়ে যাচ্ছে টেলিপাড়া। কত দিনের জন্য হাজতবাস করতে হবে ভিক্টোকে, এখনও জানা যায়নি। কিন্তু তাঁর গ্রেফতারি একটু হলেও হুঁশ ফেরাবে, এমনটা আশা করা যায়? প্রশ্ন রাখতেই রূপার দাবি, “মানসিক চাপ, কাজের অভাব, অতিরিক্ত লোভ, ক্ষমতার মত্ততা যে ভাবে ঘিরে ধরেছে ধারাবাহিকের দুনিয়াকে তাতে এই ঘটনা কতটা সজাগ করবে বলা কঠিন। কারণ, এর আগেও একাধিক বার এই ঘটনা ঘটেছে।”