আবরণের প্রয়োজন ছাপিয়ে পোশাক কখনও কখনও হয়ে ওঠে শিল্প। তেমনই আভিজাত্য পূর্ণ, বিরল শিল্পসম্ভারে সজ্জিত সিমা। পুজো আসছে। তবু, যেন মনের মধ্যে নেই উন্মাদনা। এ বার অন্য পুজো দেখবে বাঙালি! কলকাতা জুড়ে প্রতিবাদী আন্দোলন আর শারদ আবহ চলছে পায়ে পা মিলিয়ে। এই সময়ে সিমা ঘুরে দেখলেন ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। বেঁচে থাকার জন্যই আন্দোলন, অধিকার আদায়ের চেষ্টা। আবার সেই জীবনের জন্যই আনন্দের আয়োজন।
সাবেক থেকে আধুনিক— সিমা-র সংগ্রহে রয়েছে মনমাতানো শাড়ি ও গহনার সম্ভার। তারই মধ্যে থেকে একটি আরামদায়ক সুতির হ্যান্ডলুম শাড়ি বেছে নিলেন ঋতু। আকাশ নীল আর ধূসর রঙের খোপকাটা জমির সঙ্গে মিলিয়ে রুপোর গয়না উঠল তাঁর অঙ্গে। সঙ্গী খোলা পিঠের কালো ব্লাউজ। সাজ সম্পূর্ণ হতেই প্রশ্ন করলেন নায়িকা, স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে, “কেমন দেখাচ্ছে আমাকে? নিশ্চয়ই ভাল, তাই না?”
কিন্তু, সাজ তো শুধু সাজ নয়। নিত্য প্রয়োজনের একটা বড় অংশ জড়িয়ে থাকে তার সঙ্গে। তাই, সাজের অঙ্গ হিসাবে তিনি বেছে নিলেন সিমা-র তৈরি একটি বিশেষ হাতব্যাগ। কলমকারি কাজ করা। কাপড়ের কমনীয়তাকে দৃঢ়তা দিতেই সঙ্গী হয়েছে চামড়া। সাজ সম্পূর্ণ। ঋতুপর্ণার কথায়, “অফিস হোক বা পার্টি, এই ধরনের শাড়িতে অনায়াসেই মেলে ধরা যায় নিজেকে।”
কালো শাড়ির মোহ কাটানো মুশকিল। অভিনেত্রীও তাই বেছে নিলেন তাঁর প্রিয় একটি শাড়ি। কালোর সঙ্গে সোনা-রুপোর সুতোয় বোনা চান্দেরি। তবে, এ শাড়ির বিশেষত্ব তার বুটিতে। ঋতুপর্ণার ভাললাগা প্রকাশিত হল তাঁর কথায়, “শাড়ির পাড় তো নজরকাড়া বটেই, পাশাপাশি জমিতে ফুলেল নকশার সঙ্গে ফুটে উঠেছে ছোট্ট প্রাণীর ছবি। শাড়ির নকশায় এমন খরগোশ আমি এর আগে কখনও দেখিনি।”
ভাললাগার শাড়ি অঙ্গে জড়িয়ে নিতেই বিভঙ্গে স্পষ্ট হয়ে উঠল আবেদন। সঙ্গে সামান্য গহনা আর প্রসাধনীর ছোঁয়া। ঠোঁটের কোণায় আলতো হাসি রেখে চেনা মেজাজে ধরা দিলেন ঋতুপর্ণা। তাঁর সৌন্দর্য ও ব্যক্তিত্বের গভীরতা ফুটে ওঠে এই সাজে। যোগ্য সঙ্গত করেছে জমকালো নকশা করা বড় আকারের ব্যাগ।
পুজোর সাজে সাবেকিয়ানার ছোঁয়া থাকবে না, তা ভাবতেই পারেন না অভিনেত্রী। তাই বেছে নিলেন একটি লাল বেনারসি। অতিরিক্ত ভারী সাজগোজ করতে পছন্দ করছেন না এ বার। তবে, মনের মধ্যে শান্তি এনে দেয় সাদা ফুল। তাই একটি জুঁই ফুলের মালা জড়িয়ে নিলেন খোঁপায়। ঋতুপর্ণা জানালেন, মিনিম্যালিস্ট অথচ জমকালো— এমন সাজে নিজেকে সাজাতে চাইলে পাঠকেরাও চলে আসতে পারেন সিমায়। তিনি বলেন, “৭ সেপ্টেম্বর থেকে ৯ অক্টোবর সিমায় থাকছে বিশেষ সম্ভার। সিমা-য় এলে, নিশ্চয়ই ভাল লাগবে।”
শুধু পোশাক নয়। সিমায় রয়েছে গৃহসজ্জার নানা সম্ভারও। সে দিকেও নজর অভিনেত্রীর। নানা সম্ভারের মধ্যে নায়িকার নজর কাড়ল একটি ধাতব কচ্ছপ। অপরূপ ভাস্কর্য হাতে নিয়েই ঋতু বুঝতে পারলেন, যথেষ্ট ভারী। তবু, ভাললাগার কথা গোপন করতে পারলেন না। তিনি সাজলেন, ঘুরলেন। তবু, মন ভরল না যেন! বললেন, “রকমারি শাড়ি, জ্যাকেট, ব্যাগ, গয়না, অন্দরসজ্জার সামগ্রী দেখতে দেখতে ক্লান্ত হয়ে পড়ছি। কিন্তু চোখধাঁধানো সংগ্রহের আর শেষ নেই!”
আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে যখন মুখর শহর কলকাতা, তখনই বেজে উঠেছে আগমনী সুর। তাই প্রতিবাদের আবহ জড়িয়ে থেকেছে ঋতুপর্ণার সাজে। স্লোগানের পাশাপাশি সাজপোশাকেও প্রতিবাদের ছোঁয়া থাকতে পারে, এমনই মনে করেন অভিনেত্রী। এ বার তাই সাদামাঠা জ্যাকেটের সঙ্গে তসরের শাড়িতে সাজলেন। দু’টি পোশাকই তৈরি হয়েছে গুজরাতে। অভিনেত্রীর সৌন্দর্যের শরিক হয়ে উঠেছে প্রতিবাদী ভাষা।
ঋতুপর্ণার মতে, নারী আসলে স্বয়ংসম্পূর্ণ। আবেগ, প্রেম, মাতৃত্ব— নারীত্বের নানা ভাষা। সেই আবেগই তাঁদের প্রতিবাদী করে তোলে। বর্তমান আবহে থেকে তিনি মনে করেন, নারী নিরাপত্তা নিয়ে এই লড়াই চিরন্তন। বলেন, “পুরুষশাসিত সমাজেই আমরা অভ্যস্ত। না, এর মধ্যে কোথাও পুরুষ-বিদ্বেষ নেই। কিন্তু, কোথাও না কোথাও আজও নারীদের দমিয়ে রাখা হয়েছে। তার প্রমাণ পাই আমরা প্রতি মুহূর্তে।”
শাড়ির বোল্ড প্রিন্ট ভিতরে জমে থাকা আবেগ, প্রতিবাদী সত্তা প্রকাশ করছে যেন! ঋতুর কথায়, “সাজের তারতম্য ব্যক্তিত্বের সংজ্ঞা বদলে দিতে পারে। তাই আজ আমিও এই পরিস্থিতিতে এই সাজটাকেই বেছে নিয়েছি। ফ্যাশন আর প্রতিবাদের ভাষা মিলেমিশে একাকার।”