কেমন হল সলমন-রশ্মিকার ‘সিকন্দর’? ছবি: সংগৃহীত।
সলমন খানের ‘সিকন্দর’ ছবিটির কথা শুনেই ভয় লেগেছিল। একে যা গরম, তায় এ হেন নাম শুনেই বোঝা যায়, প্রবল মারপিটের ছবি দেখতে চলেছি। হলও তা-ই। হলে বসে মনে হল, মাথা ঘুরছে। শরীর খারাপ লাগছে। মানে, আজকাল এ ধারার অনেক ছবি দেখতে গিয়েই এমন মনে হয়। এ ধারা বলতে ‘পুষ্পা’ বা ‘জওয়ান’-এ শটের পর শটে যা সফল, তার অন্ধ অনুকরণ করলেই ছবি যে কোনও ভাবেই দাঁড়ায় না, এটা অনেকেই বুঝতে পারছে না। এ ছবি দেখেও মনে হয়, যুক্তিহীন ভাবে শটের পর শটে জোর করে ঠাসবুনট মনোরঞ্জন করাই যেন একমাত্র চেষ্টা। সলমনকে দেখে মনে হচ্ছিল, তাঁকে জোর করে অভিনয় করানো হচ্ছে। মোটেই ইচ্ছে নেই তাঁর। মারামারি হোক বা নাচ বা প্রেমের মুহূর্ত— সলমন যেন অনিচ্ছা সত্ত্বেও সব করে চলেছেন...
এক রাজার গল্প আসলে এ ছবি। রাজকোট থেকে সঞ্জয় নামের সে রাজা আসে মুম্বইয়ে। প্রজাদের বরাবরই পাশে দাঁড়ায় এই রাজা। কিন্তু এক জন প্রজা বিরোধী হয়ে দাঁড়ায় তাঁর। বাকিটা জানতে হলে ছবিটি দেখতে হবে। অবশ্য দেখবেনই বা কী ভাবে! এ ছবি হলে বসে দেখা খুব কঠিন, আগেই বলেছি। যদিও এ ছবি প্রথম দিনেই কোটি টাকার ব্যবসাও করেছে। বিশেষ ধর্মীয় উৎসবের দিনেই মুক্তি পেয়েছে এ ছবি। উদ্দেশ্য, স্রেফ হুল্লোড়...
সলমন কতটা ‘সিকন্দর’?
নায়ক খলনায়ককে জব্দ করে এ ধারার ছবিতে। এ ছবিতেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। সমাজের নানা উচিত-অনুচিত নিয়ে নানা কথার পাশাপাশি এ ছবিতে রয়েছে ‘আলফা মেল’ নিয়ে বক্তব্যও। এই প্রসঙ্গে সলমনের অনুরাগীদের সচেতনতা বাড়ানোর উদ্দেশ্যেই এই বিশেষ বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, আশা করা যায়।
বলা হয়েছে, রাজা যদি প্রজাকে নিয়ে এগোয় জীবনে, তবেই তা উত্তম পথ। ছবিটি যত এগোতে থাকে, তত মনে হতে থাকে, এটি হয়তো কেবলই মারামারির ছবি। সলমন অনুরাগীরা তাঁকে যে হেতু রণংদেহি রূপে বেশি দেখতে চান, নিঃসন্দেহে তাঁদের ভাল লাগবে। তবে আগেই বলা হয়েছে, এর বাইরে সলমন বড় বেশি ক্লান্তিকর ও একঘেয়ে।
এ ছবির পরিচালক এ আর মুরুগাদস। সলমন ছাড়াও মুখ্য ভূমিকায় আছেন রশ্মিকা মন্দানা। এত বড় বড় নামের তালিকা থাকা সত্ত্বেও কেন যে ছবিটির চলন এমন বেখাপ্পা, বোঝা গেল না! ছবিটি দেখে কোনও অনুভূতিই তৈরি হয় না। নেহাত সরল শিশুপাঠ্য নীতিমালার জন্যে তো অনেক ভাল ভাল ছবি আছে, আবার নতুন করে এ হেন মার্ভেল কমিক্সের কী দরকার ছিল! অবশ্য সলমনের ভক্তেরা অনেকেই হয়তো চান, যে ভাবেই হোক তাঁকে বছরে এক বার পর্দায় দেখতে। কিন্তু হল থেকে বেরোনোর সময় মনে হল, এ ছবি দেখে তাঁদের অনেকেই হতাশ। কিছুটা বিরক্তও। কেন না, দ্বিতীয় পর্বের পর ছবিটা কেন এগোচ্ছে, তার কোনও ব্যাখ্যাই পাওয়া যায় না।
গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
‘সিকন্দর’-এর মতো ছবি দেখে তাই দুঃখ হয়, সিনেমা মাধ্যমটি দশ বছরে কেমন বেমালুম মুছে গিয়ে সস্তা বিষয় হয়ে গেল! সলমন খান, যিনি সেই সেলুলয়েডের রাজপুত্র, তাঁরও বয়স হল, মুখেচোখে তাঁর ক্লান্তি। তরুণী নায়িকাদের সঙ্গে প্রেম করতেও তাই তাঁর অনীহা। সিনেমা আর রিল ভিডিয়ো তো এক নয়! এত দ্রুত সম্পাদনা কেন এ ছবির? কিসের এত তাড়া? সিনেমা তো অনুভূতির বিষয়। ‘সিকন্দর’ তাই এক ধারার ভিডিয়ো গেম, যা নীতিমালার ছদ্মবেশে বলে গেল, সিনেমার দিন প্রায় শেষ...