‘চন্দু চ্যাম্পিয়ন’ ছবিতে কার্তিক আরিয়ান। ছবি: সংগৃহীত।
কবীর খান পরিচালিত, কার্তিক আরিয়ান অভিনীত ‘চন্দু চ্যাম্পিয়ন’ প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেল। ভারতের প্রথম প্যারা-অলিম্পিকে স্বর্ণপদক বিজয়ী পদ্মশ্রী মুরলীকান্ত পেটকরের আত্মজীবনীকে কেন্দ্র করে ‘এই কাহিনীর গল্প।
ছবিতে একটি সংলাপ রয়েছে, “চন্দু চ্যাম্পিয়ন’-এর কাহিনী বিশ্বাস করা খুব কঠিন, কিন্তু সবাইকে বলা খুব জরুরি।” এ থেকেই দর্শক বুঝতে পারেন মুরলীকান্ত পেটকরের জীবনী কতটা অনুপ্রেরণামূলক। ১৪৩ মিনিটের এই ছবি দেখার পর এই বিষয়ে কোনও সন্দেহ থাকে না, এ ছবি 'কার্তিক' চ্যাম্পিয়নের ছবি, পর্দায় যিনি পুরোপুরি হয়ে উঠেছেন 'মুরলীকান্ত'। কার্তিকের অনুরাগীরা এই ছবি দেখে আবার নতুন করে কার্তিককে চিনবেন, জানবেন, কী অপরিসীম পরিশ্রম করেছেন তিনি। দীর্ঘ ৩ বছরের কঠিন পরিশ্রম ও অধ্যবসায়ে কার্তিক যে ভাবে চরিত্রের জন্য নিজেকে পরিণত করেছেন তা খুবই প্রশংসনীয়।
গল্পের শুরুতে দেখা দেন বৃদ্ধ মুরলীকান্ত পেটকার, ছেলের সঙ্গে পুলিশ স্টেশনে গিয়ে ভারতের পূর্ব রাষ্ট্রপতিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ লেখাচ্ছেন। অভিযোগ একটাই, কেন তাঁকে অর্জুন পুরস্কার দেওয়া হয়নি! পেটকার মনে করতেন অনেক প্রতিকূলতার মধ্যেও যেভাবে তিনি সারা পৃথিবীতে দেশের মুখ উজ্জ্বল করেছেন, তার জন্য তিনি অর্জুন সম্মান পাওয়া উচিৎ ছিল তাঁর। ৪০ বছর পরেও মুরলীকান্ত কেন অর্জুন সন্মান চাইছেন সেটা জানতে গেলে ফ্ল্যাশব্যাকে যেতে হবে।
গল্পের শুরুতে দেখা যায় বৃদ্ধ মুরলীকান্ত পেটকর, ছেলের সঙ্গে পুলিশ স্টেশনে গিয়ে ভারতের পূর্ব রাষ্ট্রপতিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছেন। অভিযোগ একটাই, কেন তাঁকে অর্জুন পুরস্কার দেওয়া হয়নি। পেটকর মনে করতেন অনেক প্রতিকূলতার মধ্যেও যে ভাবে উনি ভারতের সন্মান পৃথিবীর মানচিত্রে তুলে ধরেছেন, তার জন্য উনি অর্জুন সম্মান পেতে পারেন। ৪০ বছর পরেও মুরলীকান্ত কেন অর্জুন সন্মান চাইছেন সেটা জানতে গেলে ‘ফ্ল্যাশব্যাক’-এ যেতে হবে।
কিশোর মুরলীকান্তের একটাই স্বপ্ন ছিল, যে ভাবেই হোক অন্তত একবার অলিম্পিকে ভারতের হয়ে স্বর্ণপদক জিতবেন। কিন্তু মুরলীর স্বপ্নে কারও বিশ্বাস নেই। শুধু তাই নয়, মুরলীকে নিয়ে গ্রামের সবাই ঠাট্টা করে এবং বারবার অপমানিত করে বলে তুই ‘চন্দু চ্যাম্পিয়ন’। ‘চন্দু’ এখানে সেইসব ছেলেদের বলা হয় যারা জীবনে কিছুই করতে পারে না, কিন্তু ছোট্ট মুরলী সব সময়ে এর প্রতিবাদ করে নিজের আত্মবিশ্বাস দেখিয়ে বলে, ‘চন্দু নেহি চ্যাম্পিয়ন হুঁ ম্যাঁয়’...
এর পরের গল্প মুরলীর সেনাবাহিনীতে যোগদান করা থেকে বক্সিং রিং-এ ‘বিস্ময় বালক’ হওয়া, ১৯৬৫ সালের যুদ্ধে ন’টা গুলি খেয়েও, কীভাবে নিজের স্বপ্নকে লালন করে তা নিয়ে।
'চন্দু' না, 'কার্তিক' চ্যাম্পিয়ন, মন ছুঁয়ে যায়। কার্তিকের সাবলীল অভিনয়, প্রত্যেকটি দৃশ্যে দর্শকের মন জয় করে। একজন কুস্তিগীর, মুষ্টিযোদ্ধা, সৈনিক, সাঁতারু– এতগুলি ভূমিকা কার্তিক অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে পর্দায় ফুটিয়ে তুলেছেন। শুধু শারীরিক ভাবেই নয়, নিজের অভিনয় শৈলীর মাধ্যমে কার্তিক বোধহয় সমালোচকদেরও মুখ বন্ধ করে দেবেন। ‘বক্সিং রিং’-এ কার্তিকের ‘ফুট-ওয়ার্ক’ এবং শারীরী ভাষা যথাযথ। কিছু দৃশ্যে কার্তিকের অভিনয় দর্শকের চোখে জল এনে দেবে। পরিচালক কবীর খান নিজের কাজ খুব ভাল ভাবে জানেন, ‘চন্দু চ্যাম্পিয়ন’-এর মতো আবেগপ্রবণ ছবি বানাতে গিয়ে পরিচালক কখনওই আবেগে ভেসে যাননি। ১৯৫০-২০১৮ এর সময়সীমাকে কবীর ও লেখকদ্বয় সুমিত আরোরা এবং সুদীপ্ত সরকার খুবই বিশ্বাসযোগ্য ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন, এ কথা স্বীকার করতেই হবে। লেখাও সেই বিশ্বাসযোগ্যতার ছাপ বহন করেছে। তাই ২ ঘণ্টা ২৩ মিনিটের ছবিতে দর্শক কখনওই তাল হারিয়ে ফেলবেন না।
ছবিতে কিছু হাস্য কৌতুকের মুহূর্ত থাকাতে চোখের জলের সঙ্গে ঠোঁটের কোণে হাসি আসতে বাধ্য। কার্তিক ছাড়া কোচ টাইগার আলির ভূমিকায় বিজয় রাজ অনবদ্য, বড় ভাইয়ের ভূমিকায় অনিরুদ্ধ দাভে খুবই মানানসই, বন্ধু কর্নেল সিংহের ভূমিকায় ভুবন আরোরা প্রায় নিখুঁত। ছোট্ট চরিত্রে শ্রেয়স তালপাড়ে, রাজপাল যাদব, যশপাল শর্মার, সোনালী কুলকার্নির অভিনয় যথাযথ। প্রীতমের সম্পাদনায় প্রত্যেকটি গান ছবিতে খুব সুন্দরভাবে ব্যবহৃত হয়েছে। ক্যামেরার পিছনে সুদীপ চট্টোপাধ্যায়ের সৃজনশৈলী ছবিকে আরও সমৃদ্ধ করেছে।
অবশ্য এত সুখ্যাতির পরও একটা অফসোস থেকেই যায়। ছবিটি যেন মুরলীকান্ত পেটকরের ‘ব্যক্তিগত’ জীবনকে তাকে তুলে রেখে করা! এমন একজন মানুষের ব্যক্তিগত জীবন উপর আরও একটু আলো ফেলতে পারলে কবীরের কাজকে সত্যি-সত্যিই উদ্যাপন করা যেত।