রাহুল অরুণোদয় বন্দ্যোপাধ্যায়
‘চিরদিনই তুমি যে আমার’-এর কৃষ্ণ, ‘তুমি আসবে বলে’-র রাহুল, ‘দেশের মাটি’-র রাজা— ছোটপর্দা হোক বা বড়পর্দা, দর্শকের কাছে তিনি অন্যতম সেরা প্রেমিক। আর তাই কি রাহুল অরুণোদয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রেম জীবন নিয়ে এত কথা চারদিকে? বার বার তাঁর নায়িকাদের সঙ্গে তাঁর প্রেমের গুঞ্জন শোনা যায় কেন? তা ছাড়া প্রিয়াঙ্কা সরকারের সঙ্গে আলাদা হওয়ার পর থেকে তাঁর জীবনে কত জন নারী এসেছে? আনন্দবাজার অনলাইনের সঙ্গে সেই প্রেমিক মানুষ তাঁর প্রেম জীবন নিয়ে আড্ডা মারলেন।
প্রশ্ন: রুকমা রায়ের সঙ্গে আপনার পর্দার প্রেম নিয়ে তো দর্শক উত্তেজিত, কিন্তু বাস্তবেও কি গল্প এগিয়েছে খানিক?
রাহুল: (বেশ কয়েক মুহূর্ত হেসে) এই কথাটা আমাদের শ্যুটিং সেটে গিয়ে বললে আমার মতোই সবাই পেট চেপে হাসতে শুরু করবে। কারণ এটা একেবারেই অবাস্তব। বন্ধুত্ব আর প্রেম এক নয়। জীবনে আমি কিছুই লুকিয়ে করিনি। এ বারও যদি প্রেম হয়, লুকবো না। তবে আমি এটা শুনে খুশিই হলাম। বুঝতে পারছি মানুষ আমাদের জুটিকে ভালবেসেছে। তাই আমাদের মধ্যে সত্যি সত্যি প্রেম খুঁজতে ব্যস্ত। ‘সূরয হুয়া মধ্যম’ গানের ভিডিয়োয় কাজলের দিকে শাহরুখ খানের তাকানো দেখে মনে হত, ‘এটা যদি প্রেম না হয়, তবে প্রেমের সংজ্ঞাই পাল্টাতে হবে।’ আমাদের এ রকম একটা কিছু ভাবতে ভাল লাগত। কিন্তু সত্যি কথা বলতে, এটা (অভিনয়) শিল্প ছাড়া আর কিছুই নয়। যে শিল্প আমি ৩ বছর বয়স থেকে শিখতে শুরু করেছি। অন্য দিকে রুকমাও অত্যন্ত গুণী অভিনেত্রী।
প্রশ্ন: দিন কয়েক আগে এক সংবাদমাধ্যমে প্রিয়াঙ্কা বলেছেন, আপনার সঙ্গে রুকমার বাস্তবে বিয়ে হলে তিনি নিমন্ত্রণ চান...
রাহুল: হ্যাঁ জানি। ও সম্পূর্ণ মজা করে বলেছে। ওর ওই বক্তব্যের অর্থ, আমি যার সঙ্গেই থাকি না কেন, ও তাতে খুশি হবে।
প্রশ্ন: আপনার স্টেটাস কী এই মুহূর্তে?
রাহুল: (খানিকটা ভেবে) আমি সিঙ্গল।
প্রশ্ন: একটু ভেবে বলতে হল যে...
রাহুল: আসলে শুধু সিঙ্গল বললে তার সঙ্গে আরও কিছু বাক্য যুক্ত হয়ে যায় পিছনে, যেমন, ‘রেডি টু মিঙ্গল’। আমি কিন্তু তা একেবারেই নই। শুধুই সিঙ্গল।
প্রশ্ন: অনেক দিন ধরেই শোনা যাচ্ছে, আপনার সঙ্গে সন্দীপ্তা সেনের ‘বন্ধুত্ব’ আর আগের মতো নেই। আগে কী ছিল, সেটাও কখনও স্পষ্ট হয়নি...
রাহুল: হ্যাঁ একেবারেই সঠিক শোনা যাচ্ছে। আগের মতো নেই বন্ধুত্ব। কারণ এখন তার থেকেও গভীর হয়েছে আমাদের বন্ধুত্বটা। রাতবিরেতে বিপদে পড়লে আমি সবার প্রথমে সন্দীপ্তাকেই ফোন করব। আমরা এতটাই ভাল বন্ধু।
প্রশ্ন: আপনি কোনও দিন সন্দীপ্তার সঙ্গে আপনার সম্পর্ক নিয়ে মুখ খোলেননি কেন? লোকে তো বলে, আপনারা প্রেম করেন...
রাহুল: আমাদের নিয়ে অনেক রটনা আছে জানি। কিন্তু আমি বা সন্দীপ্তা কেউই সেটা বলিনি কখনও। হয়তো আমাদের অনেক অনুষ্ঠানে একসঙ্গে দেখা গিয়েছে বলে লোকের এটাই মনে হয়। তার একটা বড় কারণ, সন্দীপ্তা এবং আমার বাড়ির মধ্যে দূরত্ব খুব কম। আর এক জন সচেতন নাগরিক হিসেবে আমি মনে করি, একই জায়গায় যেতে হলে দু'টো গাড়ির তেল খরচ না করাই উচিত। অত বড় তারকা হয়ে যাইনি আমরা। তা ছাড়া আলাদা আলাদা যাওয়ার মতো অখাদ্য মানুষও নই আমরা কেউ।
প্রশ্ন: তার মানে প্রিয়াঙ্কা সরকারের সঙ্গে বিচ্ছেদের পর আপনি কোনও দিনও প্রেম করেননি?
রাহুল: না, প্রেম করিনি। তবে আমি খুবই প্রেমিক মানুষ। কিন্তু সেই প্রেমে সব সময়ে নারীর অস্তিত্বের প্রয়োজন আছে বলে আমি বিশ্বাস করি না। যদিও আমার জীবনে নারী আছে— আমার মা আছে, তা ছাড়া সন্দীপ্তার মতো বন্ধু থাকতে আর কী চাই! প্রিয়াঙ্কার সঙ্গেও এখন খুব ভাল বন্ধুত্বের সম্পর্ক আমার। আর একটা জিনিস মনে করি, আমি প্রেমিকের তুলনায় বন্ধু হিসেবে বেশি ভাল মানুষ।
প্রশ্ন: ২০১৬ সালে আপনি আর প্রিয়াঙ্কা আলাদা হয়েছেন। এত বছর কেটে যেতেও আপনাদের আইনি বিচ্ছেদ হয়নি কেন?
রাহুল: কিছু টুকটাক জটিলতা রয়েছে। আশা করছি, সে সব তাড়াতাড়ি মিটে যাবে। তা ছাড়া আমি আর প্রিয়াঙ্কা এখন খুব ভাল বন্ধু। প্রতি রবিবার সহজকে নিয়ে ও আমার বাড়ি আসে। আমি, সহজ, প্রিয়াঙ্কা, আমার মা সুন্দর সময় কাটাই। হ্যাঁ আমি জানি, ২৪ ঘণ্টা সহজের সঙ্গে থাকলে ভাল হত। তাও এইটুকু সময়ই আমার কাছে খুব মূল্যবান। সহজ কোনও কোনও দিন সন্দীপ্তার সঙ্গে আড্ডা মারার দাবি জানায়। ও মনে করে, সন্দীপ্তা আর ও সমবয়সি। তাই পিৎজা বা কিছু অর্ডার করার সময়ে সন্দীপ্তার পরামর্শ সহজের কাছে ভীষণ দামি।
প্রশ্ন: মা-বাবা একসঙ্গে থাকে না বলে সহজের কষ্ট হয়?
রাহুল: একটি শিশুর মনের ভিতরে স্মৃতি তৈরি হওয়ার জন্য যে সময়টা লাগে, তার আগেই আমি আর প্রিয়াঙ্কা আলাদা হয়ে গিয়েছি। ফলে কিছু টুকরো টুকরো স্মৃতি ছাড়া ওর কাছে এখনকার পরিস্থিতিটাই বাস্তব। ওর মা-বাবা একসঙ্গে থাকে না, এটাই সহজের কাছে স্বাভাবিক। কিন্তু ওর মনের জগতে কী চলছে বা পরিবর্তীকালে কী হবে, সেটা বলার মতো বৈজ্ঞানিক মন আমার নেই। তবে এইটুকু বলত পারি যে আমার আর প্রিয়াঙ্কার মধ্যে কিছু একটা তিক্ততা ছিল বলেই আমরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি, কিন্তু সেই তিক্ততার মধ্যে সহজ আসে না। প্রিয়াঙ্কার প্রতি আমার অঢেল শ্রদ্ধা রয়েছে। প্রিয়াঙ্কাও আমার অবর্তমানে সহজের চোখে আমাকে খলনায়ক হিসেবে চিহ্নিত করে না। অনেক বাবা-মাকে দেখেছি, যাঁরা একসঙ্গে থেকেও একে অপরকে সহ্য করতে পারে না। কেবল মাত্র পার্টিতে গিয়ে কোমরে হাত দিয়ে ছবি তোলার জন্য সম্পর্কটা টিকিয়ে রাখিনি বলে সহজও সুস্থ পরিবেশে বড় হচ্ছে। আমরা কেউই সম্পর্কটাকে নাটকে পরিণত করতে চাইনি, কারণ আমাদের প্রেমটা সৎ ছিল তাই বিচ্ছেদটাও সৎ। ফলে সম্পর্কটাকে টেনে টেনে মর্গে ঢোকাইনি আমি আর প্রিয়াঙ্কা।
প্রশ্ন: আপনি আনন্দবাজার অনলাইনে সহজকে লেখা চিঠিতে লিখেছিলেন একসঙ্গে বড় হয়েছেন আপনি আর প্রিয়াঙ্কা, সে ক্ষেত্রে এখনও অধিকারবোধ কাজ করে?
রাহুল: না একেবারেই না। বরং যত বড় হচ্ছি, ‘অধিকারবোধ’ শব্দটির উপর থেকে বিশ্বাস চলে যাচ্ছে। এই বোধটি আসলে বড্ড ঠুনকো, বিষাক্ত, খেলো। ক্যানসারের মতো ছড়িয়ে পড়ে।
প্রশ্ন: প্রিয়াঙ্কা কোনও সুস্থ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়লে, আপনার মেনে নিতে অসুবিধা হবে?
রাহুল: আমি তো চাই প্রিয়াঙ্কা কোনও ভাল সঙ্গী পাক। আমি কিন্তু একা থাকাটাকে ছোট করছি না। সেটাও হতে পারে। কিন্তু ওর কাউকে ভাল লাগলে অবশ্যই একসঙ্গে থাকুক বা বিয়ে করুক। আমি নিজে ওর বিয়ের পৌরহিত্য করে দেব। আমি তো বাড়ুজ্জে (নিজেই হেসে উঠলেন রাহুল)!
প্রশ্ন: যদি পরবর্তীকালে আপনার বিয়ে করার শখ হয়, সে ক্ষেত্রে তো প্রিয়াঙ্কার সঙ্গে আইনি বিচ্ছেদ অপরিহার্য, তা হলে?
রাহুল: হ্যাঁ, মনে হতেই পারে। তখন তড়িঘড়ি করে আইনি পথে হাঁটব। তবে আমাদের বিচ্ছেদ হয়নি মানে কোনও দিনও হবে না, তা তো নয়। সম্পর্ক ঝুলিয়ে রেখে তো লাভ নেই। দু’জনেই দু’জনকে স্বাধীন ভাবে বাঁচতে দিতে চাই আমরা। এই প্রসঙ্গে মনে পড়ে গেল, আনন্দবাজার অনলাইনে সহজকে যে চিঠি লিখেছিলাম, তা পড়ে অনেকেই ভেবেছিল যে আমি আর প্রিয়াঙ্কা আবার এক হচ্ছি। কিন্তু তা নয়, আমাদের তিক্ততা যেন সহজকে স্পর্শ না করে, সেটাই আসল উদ্দেশ্য ছিল। দু’জনেরই কর্তব্য এটা।
প্রশ্ন: ২০১৬ সালে আপনাদের আলাদা হয়ে যাওয়ার সময়ে তো অনেক খবর বেরিয়েছিল, তখন তো নানা ঘটনা সামনে এসেছিল। সে সব তো সবাই দেখেছে। সহজ বড় হওয়ার পর সেগুলি তো জানতেই পারবে…
রাহুল: সেটা চাই না। সেই সময়ে যা যা বলা হয়েছে আমাদের সম্পর্কে, সেগুলির মধ্যে দিয়ে সহজের না যাওয়াটাই ভাল। সহজ জানবে যে কিছু মতানৈক্যের কারণে বাবা-মা আলাদা থাকে, কিন্তু এখন খুবই ভাল বন্ধু। আমার বিশ্বাস, পুরনো পত্রিকায় আমাদের সম্পর্কে লেখা কিছু খবরের চেয়ে সহজকে আরও ভাল সাহিত্য পড়তে উদ্বুদ্ধ করেছি আমি আর প্রিয়াঙ্কা।