Vikram Chatterjee

বছরের পয়লা দিনে পয়লা প্রেম? এমনটা সত্যিই হয়নি, তবে…

দেখতে বেশ লাগে, যখন দেখি কোনও মেয়ে লাল পাড় সাদা জামদানি, বড় টিপ পরে ফুলের মালা খোঁপায় জড়ায়। সারা বছর এ ভাবে তো আর সেজে ওঠা হয় না কারওর।

Advertisement
বিক্রম চট্টোপাধ্যায়
বিক্রম চট্টোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০২১ ১২:৩১
বিক্রম চট্টোপাধ্যায়।

বিক্রম চট্টোপাধ্যায়।

নববর্ষ মানেই বাড়ি ভর্তি লোকজন। তুতো ভাই-বোনদের ভিড়। সারা দিন হইহই। নতুন জামার গন্ধ। দুপুরে প্রচুর খাওয়াদাওয়া। সন্ধেয় মেলায় যাওয়া। আমার বেড়ে ওঠা দক্ষিণ কলকাতার সুলেখা অঞ্চলে। ওখানে নববর্ষের আগের দিন থেকে বিরাট মেলা বসত। মেলা চলত ৭ দিন। ওই ৭ দিন আমাদের অলিখিত ছুটি। সন্ধে বেলায় পড়া কামাই। দলবল মিলে মেলার মাঠে দাপাদাপি। দোলনা, ছোট ছোট নাগরদোলায় চড়া। হাসি-মজা-হুল্লোড়।

এ বার বিস্তারিত বলি। নববর্ষের ভূরিভোজ হত কী দিয়ে? পোলাও, মাটন, ডাল, নানা রকমের ভাজা, তরকারি, ফুলকপির বড়া, দিয়ে। তখন কেমন জামা পেতাম? নববর্ষ মানেই গরম আসছে। বিকেলে খেলতে যেতাম হাতকাটা গেঞ্জি আর হাফ প্যান্ট পরে। নববর্ষে সেই জামাই পেতাম ২ সেট করে। তাতেই কী খুশি! আমরা ছোটরা যখন এই আনন্দে মেতে থাকতাম দাদু, বাবা, মামা, কাকারা দোকানে যেতেন হালখাতা করতে। মিষ্টির প্যাকেট, ক্যালেন্ডার আসত বাড়িতে।

Advertisement

বড় হলাম। নতুন জামাকাপড় পাওয়াও বন্ধ হয়ে গেল। অনেকেই জানতে চান, বদলে কি নতুন প্রেম এল? না ও রকম দিনক্ষণ, তারিখ, বার মিলিয়ে তো প্রেমে পড়া যায় না। তবে যাঁর সঙ্গে প্রেম ছিল, তাঁকে নিয়ে ডেটিংয়ে হয়তো বেরিয়েছি। আর বাড়ির ভাল-মন্দ রান্নাবান্নাও বন্ধ হয়নি। বাইরে কোনও কাজ না থাকলে এখনও কাকা-কাকিমা বা মামারা চলে আসেন। তখন আবার আড্ডা, আগের মতো খাওয়াদাওয়া হয়। তবে তুতো ভাই-বোনদের খুব মিস করি। সবাই চারিদিকে ছড়িয়ে গিয়েছে। নববর্ষের দিন আর এক জোট হওয়া হয় না! বাঙালির উৎসব মিষ্টি ছাড়া অসম্পূর্ণ। আমিও মিষ্টির পোকা। কিন্তু ইচ্ছেমতো খেতে পারি না আর। তাই সপ্তাহে এক দিন চিট ডায়েট। সে দিন তালিকায় মিষ্টি থাকে। আর নববর্ষের দিন পাতে একটা কাঁচাগোল্লা থাকবেই।

এখন আমি কেমন পোশাকে সাজি? নির্দিষ্ট কোনও পোশাক নেই। ধুতি-পাঞ্জাবি পরতে ভাল লাগে। কিন্তু বিশেষ অনুষ্ঠান ছাড়া সে সবও আর পরা হয় না। দেখতে বেশ লাগে, যখন দেখি কোনও মেয়ে লাল পাড় সাদা জামদানি, বড় টিপ পরে ফুলের মালা খোঁপায় জড়ায়। সারা বছর এ ভাবে তো আর সেজে ওঠা হয় না কারওর। গত বছর করোনা ছিল। এ বছরে অতিমারির চোখরাঙানি যেন বেড়েছে। তার মধ্যেই ইতিবাচক দিক, এখন আমরা অনেক বেশি ঘরমুখো হয়েছি। বাড়িতে আত্মীয়দের দেখা মিলছে। আমরাও যেন কাজ নিয়ে পাগলামি সরিয়ে বাড়ির বড়দের প্রতি মনোযোগী হচ্ছি।

ভাগ্যিস করোনা এ গুলো ফিরিয়ে দিল! নইলে, এখনকার উৎসব যেন নিয়ম মেনে আসে-যায়। তাতে জাঁকজমক আছে। প্রাণটাই নেই।

আরও পড়ুন
Advertisement