পুরস্কার ফেরাতে চান নাট্যকার চন্দন সেন। ছবি: সংগৃহীত।
নাট্যক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সম্মাননা ‘দীনবন্ধু মিত্র পুরস্কার’ ফিরিয়ে দিতে চান প্রবীণ নাট্যকার চন্দন সেন। আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে এই প্রথম পুরস্কার ফিরিয়ে দিচ্ছেন কোনও সরকারি পুরস্কার প্রাপক।
প্রতিবাদীদের খোঁচা দিয়ে পুরস্কার ফেরত দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন কাঞ্চন মল্লিক। তৃণমূলের বিধায়ক হলেও কাঞ্চন একজন নাট্যকর্মী। রবিবার বিতর্কিত মন্তব্য করার পর সোমবার তিনি ক্ষমা চেয়েছেন বটে, তবে তাতে অপমানিত বোধ করছেন বর্ষীয়ান নাট্যকার চন্দন সেন। মঙ্গলবার সকালে তিনি ঘোষণা করেন ২০১৭ সালে রাজ্য সরকারের দেওয়া নাট্যক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সম্মাননা ‘দীনবন্ধু মিত্র পুরস্কার’ ফিরিয়ে দেবেন।
মঙ্গলবার আনন্দবাজার অনলাইনকে চন্দন জানান, এ জন্য ইতিমধ্যেই রাজ্যে তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগের সচিবের কাছে ইমেল পাঠিয়েছেন। চন্দন বলেন, “মঙ্গলবার সকালে পুরস্কারমূল্য ফেরত দিতে চাই, জানিয়ে ইমেল করেছি। সচিব মেলটি পেয়েছেন। তবে জানি না, এর উত্তর আমি কী ভাবে পাব।”
নাট্যকার দাবি করেন, যে ঘটনা রাজ্যে ঘটেছে তা নিন্দনীয়। তবে প্রাথমিক ভাবে পুরস্কার ফেরানোর কথা তিনি ভাবেননি। কিন্তু যে ভাবে শাসকদলের বিধায়ক হয়ে কাঞ্চন সকলকে অবমাননাকর মন্তব্য করেছেন, তাতেই তিনি মনে করছেন পুরস্কার রাখার অধিকার আর তাঁর নেই। চন্দন বলেন, “চিকিৎসকেরা যে আন্দোলন করছেন, আমি তার শরিক। ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে আমি পদযাত্রায় শামিল হয়েছি। কারণ, আমার বাবা ৪০ বছর সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক ছিলেন। আমি এই যন্ত্রণার শরিক।”
কাঞ্চন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “একজন বিধায়ক কাঞ্চন মল্লিক, যাঁকে আমি নাট্যকর্মী হিসাবে খুব ভাল মতো চিনতাম, তাঁর এমন পদোন্নতি হয়েছে জানতাম না। আমি কোনও দলের পক্ষে বা বিপক্ষে কথা বলতে চাই না। কিন্তু আমি আশা করেছিলাম, কাঞ্চনের এমন মন্তব্য তাঁর দল প্রত্যাহার করে নিতে বলবে। ১২ ঘণ্টা অপেক্ষা করেছিলাম। তেমন কিছুই ঘটেনি। তাই সোমবার রাতে সিদ্ধান্ত নিই, পুরস্কার ফিরিয়ে দেব।”
সোমবার রাতে সমাজমাধ্যমে ক্ষমাপ্রার্থনা করেছেন কাঞ্চন মল্লিক। সে খবর মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত প্রবীণ নাট্যকারের জানা ছিল না বলেও তিনি জানিয়েছেন। তবে, এর পরও নিজের পুরস্কার ফেরানোর সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে তিনি নারাজ, এমনই জানিয়েছেন আনন্দবাজার অনলাইনকে।
চন্দন স্পষ্ট বলেন, “সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার প্রশ্ন নেই। সরকার তো কোনও পদক্ষেপ করেনি তার বিধায়কের বিরুদ্ধে। সাধারণ মানুষ, চিকিৎসকেরা যে আন্দোলন করছেন, যে হতভাগ্য মেয়েটির জীবন শেষ হয়ে গেল, তার কী হবে!”
চন্দনের দাবি, প্রতিবাদে শামিল হলেও পুরস্কার ফেরানোর কথা তিনি প্রাথমিক ভাবে ভাবেননি। এর সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্কও নেই। নাট্যকার বলেন, “নাটকের বিষয়টি আমি রাজনীতির বাইরে রাখতেই সব সময় পছন্দ করি। কোনও দিনই নাটকের সঙ্গে রাজনীতি জড়াতে চাইনি। সব দল ও মতের মানুষ আমার লেখা নাটকের অভিনয় করেন। এখনও তৃণমূলের সাংসদ পার্থ ভৌমিক আমার নাটকের অভিনয় করছেন। আমার ভালই লাগে। কিন্তু তার সঙ্গে এই ঘটনার কোনও সম্পর্ক নেই।”