চলতি বছরের দুর্গাপুজো শুধু উৎসবের নয়। প্রতিবাদেরও। এই প্রতিবাদে প্রথম থেকেই শামিল পিয়া চক্রবর্তী। মুম্বইয়ের কাজ সেরে কলকাতায় এসে একাধিক বার প্রতিবাদে পথে নেমেছেন পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়ও। দ্রোহকালের শহরকে মাথায় রেখে, খানিক ভারাক্রান্ত মন নিয়েই এ বছরের পুজোর প্রস্তুতি তাঁদের। আবার এটাই বিয়ের পরে পরমব্রত-পিয়ার প্রথম দুর্গোৎসব। পরস্পরের সঙ্গে ভাল থাকা ছাড়া আর তেমন কোনও পরিকল্পনা নেই তাঁদের। সঙ্গে থাকবে গান-বাজনা, বন্ধুবান্ধব আর খাওয়াদাওয়া।
হলুদ সুতির শাড়ির উপরে লক্ষ্মীর পা আর ধানের শিষের আঁকিবুকি। সঙ্গী কমলা রঙের ব্লাউজ়। গলায় হালকা কাদম্বিনী মুক্তোর হার। পরমব্রতের পরনে সাদার উপর এমব্রয়ডারি করা ধুতি ও পাঞ্জাবি। যোধপুর পার্কের সাজানো সংসারে রয়েছে আরও দুই গুরুত্বপূর্ণ সদস্য— সারমেয় কন্যা নিনা ও মার্জার পুত্র বাঘা। ক্যামেরার সামনে তুলনায় সাবলীল বাঘা। তাই সটান পরম-পিয়ার কোলে উঠে তাক করা ক্যামেরার দিকে ‘পারফেক্ট পোজ়’ দিয়ে ফেলতে বিন্দুমাত্র সমস্যা হয়নি তার। পিয়া বরাবরই মার্জারপ্রেমী। তবে সংসার পাতার পরে নিনার সঙ্গেও সখ্য হয়েছে তাঁর। পরম আবার দু’জনের সঙ্গেই সমান ভাবে সময় কাটাতে পছন্দ করেন।
পরম-পিয়ার সম্পর্ক বুঝি বাঁধা রয়েছে সুরের আদানপ্রদানে। বাড়িতে একসঙ্গে থাকলে বেশির ভাগ সময় গান নিয়েই কাটে তাঁদের। ‘গান তুমি হও বর্ষা শেষের নীল আকাশের আশা, মেঘের শাসন ভুলিয়ে দেওয়া আলোর ভালবাসা’— কবীর সুমনের গানের এই পঙ্ক্তি যেন চাক্ষুষ করা যায় তাঁদের রসায়নে। দু’জনেই যেন সারা দিনের ক্লান্তি, ব্যস্ততা নিমেষে ঘুচিয়ে ফেলে নিয়ন আলোয় মাখা অন্দরমহলে গান ধরেন।
প্রসাধনী, আলো, ক্যামেরা, অ্যাকশন— এ সবের সঙ্গে একেবারেই অভ্যস্ত নন পিয়া। তাঁর জগৎ আলাদা। তাই প্রথম থেকেই শর্ত ছিল, সাজাতে হবে হালকা সাজে। গানে ডুবে থাকেন পিয়া। তাঁর চলনেবলনেও যেন সুরের স্নিগ্ধ মূর্ছনা। তাই ক্যামেরার সামনেও যেন স্বরলিপির বাইরে যেতে তিনি কিছুটা আড়ষ্ট। উল্টো দিকে পরম। পিয়ার হাত ধরে ব্যাকরণ পেরিয়ে এক সুরেলা রসায়ন তৈরি করে নিলেন নিজেই।
স্ত্রীকে ক্যামেরার সামনে স্বচ্ছন্দ করে তুলতে গানের সুরে আবহ তৈরি করে নিলেন পরম। তখন রেকর্ডে বাজছে ‘হ্যায় আপনা দিল তো আওয়ারা’। আবার কখনও বাজছে ‘কিসকা রাস্তা দেখে’ অথবা ‘হম আপকি আঁখো মে’। কাজও হল অবলীলায়, ক্যামেরায় সাবলীল হলেন পিয়া। প্রাথমিক জড়তা কাটিয়ে পরমের চোখে চোখ রেখেই ক্যামেরাবন্দি হলেন। পরমের পরিচালক সত্তাও প্রকাশ পেল মুহূর্তে। স্ত্রীর সঙ্গে খুনসুটি করে পরম বললেন, “আমি মনোযোগ হারাচ্ছি। তুমি এতটা কাছে তাই।”
পরম-পিয়ার একান্ত মুহূর্তে রোজকার সঙ্গী তাঁদের গিটার। গিটারে কর্ড ধরলেন পরমব্রত। সুর খুঁজে নিলেন পিয়া। পরস্পরের চোখে চোখ রেখে একসঙ্গে গলা মেলালেন, ‘ইয়াদ কিয়া দিল নে কঁহা তুম’। পরম গানের কথা ভুলে গেলে মনে করিয়ে দিলেন পিয়া। ক্যামেরার জন্য নয়। এ ভাবেই কাটে তাঁদের একান্ত সময়। আনন্দবাজার অনলাইনের ক্যামেরায় বন্দি হল তাঁদের রোজনামচা।
গানের পাশাপাশি পিয়ার সমাজকর্মী পরিচিতিও রয়েছে। নারীবাদী হিসাবেও পরিচিত তিনি। ক্যামেরার স্বার্থে পিয়া বসলেন পরমের পায়ের কাছে। রসিকতা করে পরম বললেন, “এই তো পুরুষতন্ত্রের শিকার হল পিয়া। সঙ্গে একটা গড়গড়া থাকলে মন্দ হত না! লোকে কিন্তু তোমাকে ট্রোল করবে।” বরের খুনসুটিতে হেসে উঠলেন গায়িকা। তাঁর হাসিতেও ধরা পড়ল যেন সাত সুরের ঝঙ্কার।
সে দিন মুম্বই থেকে শুটিং করে ফিরেছেন পরমব্রত। সামান্য বিশ্রাম করেই তৈরি হয়ে নিয়েছিলেন শুটের জন্য। পিয়ার সঙ্গে কথা বলে বেছে নিয়েছিলেন হালফ্যাশনের সুতির ছাপা শার্ট ও বেজ রঙের প্যান্ট। পিয়াও পরেছিলেন একই রকম কমলালেবু ছাপের কাফতান ড্রেস। কানে হালকা গয়না।
সারা বছর শুটিং-এর মধ্যেই কাটে। তাই পুজো মানে সীমাহীন বিশ্রামের ছাড়পত্র। জানালেন পরম। অভিনেতা বলেন, “এ বার পুজোয় বিশ্রামমুখী হওয়ার চেষ্টা করব। এক দিন হয়তো কলকাতার বাইরের একটা পুজোয় যাব। তেমনই ভেবেছি।”
তবে পুজোর পাশাপাশি শহরের অশান্ত পরিস্থিতির কথাও মাথায় রাখছেন পরম-পিয়া। পরমব্রত বলেন, “পুজোর সঙ্গে বহু মানুষের জীবিকা জড়িয়ে থাকে। তাই অবশ্যই চাই, পুজো ভাল ভাবেই হোক। কিন্তু কোথাও গিয়ে মানুষের মাথায় থাকে, কী সাংঘাতিক ঘটনা ঘটে গিয়েছে। আমরা যেন সব ভুলে গড্ডলিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে না দিই। প্রতিনিয়ত সারা ভারতবর্ষের নানা প্রান্তে নানা এমন ঘটনা ঘটে চলেছে। সেটা সব সময়ই মাথায় থাকা উচিত। কিন্তু তা বলে কি উৎসব হচ্ছে না!” পিয়া সঙ্গ দিয়ে বলেন, “উৎসব যেন আমার বাস্তবটা ভুলিয়ে না দেয়।”
পুজোর পরেই আবার কাজে মন দেবেন দু’জনে। তাই এই অবসরে বেড়াতে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে পরম-পিয়ার। নবমীতেই বেড়াতে যাচ্ছেন দম্পতি। আর তার মাঝে নিজেদের বেঁধে রাখবেন গান-বাজনায়।
শাড়ি: শ্যামসূত্র। ধুতি-পাঞ্জাবি: হাউজ় অফ তনয়। কাফতান ও শার্ট: ডোরা বাই ফিনিক্স। পরিকল্পনা: স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রয়োগ: স্বরলিপি দাশগুপ্ত। চিত্রগ্রাহক: তথাগত ঘোষ। স্টাইলিং: তোর্ষা ভট্টাচার্য। রূপসজ্জা: অভিজিৎ পাল। গয়না: তাহির।