(বাঁ দিক থেকে) পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তী, মনোজ মুরলী নায়ার, পণ্ডিত বিক্রম ঘোষ। গ্রাফিক্স: সনৎ সিংহ।
আরজি কর-কাণ্ডে রাজ্য উত্তাল। সমাজমাধ্যমে, প্রকাশ্যে মতামত জানাচ্ছেন সমাজের বিশিষ্টরা। তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ-মৃত্যু নাড়িয়ে দিয়েছে সাধারণ থেকে বিনোদন দুনিয়ার খ্যাতনামীদেরও। গানের দুনিয়ার শিল্পীরা কী বলছেন? তাঁদের কতটা আঘাত করেছে এই ঘটনা? জানতে আনন্দবাজার অনলাইন যোগাযোগ করেছিল পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তী, পণ্ডিত বিক্রম ঘোষ, মনোজ মুরলী নায়ারের সঙ্গে।
আরজি কর প্রসঙ্গে তুলতেই পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তীর বক্তব্য, “মানুষ দেখুক, জানুক, কী হচ্ছে। একটু ভাল করে দেখুক, জানুক, আমরা কোথায় নেমে এসেছি।” মেয়ের মা-বাবারা এমনিতেই এখনও পদে পদে ভয়ে কাঁটা। তরুণী চিকিৎসকের মৃত্যু কি নতুন করে তাঁদের ঘুম কাড়তে চলেছে? প্রশ্ন রাখতেই তিনি আশ্বস্ত করে বলেন, “বাংলা এখনও সে রকম জায়গা নয়। বাংলা এখনও দিল্লি নয়। বাংলা কোনও দিন দিল্লি হয়ে উঠবে না। তার পরেও বলব, বাংলায় এমন ঘটনা বিরল। এই ঘটনা বাংলার বুকে ঘটবে, আশা করা যায় না।” তাঁর আরও আফসোস, “স্বাস্থ্যকেন্দ্রে তো শিক্ষিত লোকের আনাগোনা। সেখানেই ঘটে যাওয়া এই ঘটনা আমাদের শিক্ষার দিকে আঙুল তুলে দিচ্ছে। আমি তাই বার বার বলছি, মানুষ একটু নিজের দিকে তাকিয়ে দেখুক। অনুভব করুক, বিচার করুক, আমাদের শিক্ষার মান কোথায় নেমেছে।” প্রত্যেক খ্যাতনামী নিজের মতো করে বার্তা দিচ্ছেন। আনন্দবাজার অনলাইনের মাধ্যমে পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তী কোনও বার্তা দেবেন? এ প্রসঙ্গে তাঁর মত, “পাশের মানুষটির সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখুন। মনুষ্যত্বের থেকে বড় কিছু হতেই পারে না। পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা-ভালবাসা বজায় থাক। আমরা কিন্তু সেই সব অনুভূতি থেকে সরে এসেছি।”
বিষয়টি নিয়ে বেশি কিছু বলতে চাননি পণ্ডিত বিক্রম ঘোষ। তিনি বার্তায় লিখেছেন, “আমি এই জঘন্য, অমানবিক অপরাধে মর্মাহত। আশা করছি, অপরাধীদের দ্রুত শাস্তি হবে।”
কিছু দিন আগে রাজ্যের চিকিৎসাব্যবস্থা নিয়ে আনন্দবাজার অনলাইনেই সরব হয়েছিলেন মনোজ মুরলী নায়ার। রাজ্যের চিকিৎসাব্যবস্থা ব্যয়বহুল, এই কারণে তিনি দক্ষিণ ভারতে চিকিৎসা করিয়েছেন তাঁর। এ বার তিনি বাংলার ‘দালালচক্র’-এর বিরুদ্ধে আঙুল তুললেন। বললেন, “স্বাস্থ্য পরিষেবা থেকে ভিসা ব্যবস্থা— সর্বত্র এই চক্র সক্রিয়। গানের দুনিয়াও ছাড় পায়নি। বিদেশে অনুষ্ঠানের সময় বেশি করে এই অব্যবস্থা টের পাওয়া যায়। এই কারণে বিদেশে গিয়ে অনেক গায়িকা হেনস্থার শিকারও হন।” তার পরেই তাঁর প্রশ্ন, “তার মানে কি, প্রত্যেক পুরুষ ধর্ষক? সেটা বোধ হয় না। এমনও অনেক পুরুষ আছেন, যাঁরা মেয়েদের যথেষ্ট সম্মান করেন। প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে তাই সকল পুরুষকে বোধ হয় এই তালিকায় ফেলা উচিত নয়।” এই ক্ষেত্রে তিনি নিজের উদাহরণ দিয়েছেন। জানিয়েছেন। তিনি কিন্তু তাঁর মহিলা শিক্ষার্থীদের বাড়ি না ফেরা পর্যন্ত চিন্তিত থাকেন। তাঁরা নিরাপদে বাড়িতে ফেরার পর ঘুমোতে যান। মনোজ আরও বলেছেন, “সমাজব্যবস্থা, শিক্ষাব্যবস্থা, দৃষ্টিভঙ্গি যত দিন না বদলাচ্ছে, তত দিন এই অন্যায় হবে।”