সব্যসাচী চক্রবর্তী এবং মিঠু চক্রবর্তী।
আমার ‘হ্যালো’ আপনাদের সব্যসাচী চক্রবর্তী। ছোট থেকে মা, প্রতিবেশী দক্ষিণ ভারতীয় এক কাকিমাকে দেখে বড় হয়েছি। ওঁরা কেউ স্বামীর নাম ধরে ডাকতেন না। মা বলতেন, ‘ওগো’, ‘হ্যাঁগো’ নয়তো ‘সান্যাল মশাই’। সেই কাকিমা কাকুকে ডাকতেন ‘হ্যালো’ বলে। বিয়ের পরে দেখলাম, চক্রবর্তী বা ‘চক্কোতি মশাই‘ নামটা বড্ড বড়। কাকিমার পথে হেঁটে সব্যসাচীও তাই আমার ‘হ্যালো’। বুধবার, সেই ‘হ্যালো’ ৬৫-তে পড়ল! সকালে জন্মদিন স্পেশাল লুচি, সাদা আলুর তরকারি হয়েছে। দুপুরে ভাত, ডাল, ভাজা, তরকারি, পাবদা মাছের ঝোল। ছিমছাম রান্না। প্রতি বছর এমনই হয়। আর আমি ওর জন্য যত্ন করে পায়েস রাঁধি। বিকেলে ছেলে-বৌমারা আসে। নাতনি আসে। ওদের নিয়ে মেতে থাকি। ফলে, রান্নাবান্নার পাট নেই। সবাই যেটা খেতে চাইবে, আনিয়ে নেব। আমি হয়তো খুব গোছানো গৃহিণী নই। সব কিছু একা হাতে সামলে উঠতেও সব সময় পারি না তাই।
এই নিয়ে ‘হ্যালো’র কোনও আক্ষেপও নেই। আমার শাশুড়ি মায়েরও ছিল না। বরং, অভিনেতা পরিবারে মা-বাবা বিয়ে দেওয়ায় খুব খুশি আমি। এই জন্যেই বোধ হয় সব সামলে অভিনয়ে মন দিতে পেরেছি। কারণ, সব্যসাচীর পরিবারের সবাই আমায়, আমার পেশাকে বুঝেছেন। বরাবর ঠান্ডা খাবার খেতে ভালবাসে ‘হ্যালো’। ফলে, শীতে গরম খাবার না পেলেও ও রাগ করে না। বরং আমি খাবার গরম করতে গেলে বাধা দেয়। তখন আমিই অস্বস্তিতে পড়ে যাই। তা হলে কি সব্যসাচী আমারই মতো? দাম্পত্যের ৩৫ বছর বলছে, শুরুতে যেমন ছিল এখনও তেমনই আছে। শুধু ওজন আর বয়সটাই যা বেড়েছে। ৮০০ টাকা রোজগেরে সব্যসাচী আর প্রতিষ্ঠিত সব্যসাচীর মধ্যে কোনও ফারাক নেই। স্কুল অথবা কলেজ জীবনে একটা প্রেমও করতে পারল না! ওর জীবনে চাঁদ, ফুল তারা বলে কিচ্ছু নেই। সব্যসাচী চক্রবর্তী মানেই হয় ক্রিকেট, নয় জঙ্গল। তার পরেও বলব, ‘হ্যালো’ ভীষণ অনুভূতিপ্রবণ। কিন্তু সেই অনুভূতির কোনও বহিঃপ্রকাশ নেই। আদতে মানুষটা খুবই উদার। ২৪ ক্যারেট সোনার মতোই খাঁটি। হেঁড়ে গলায় বকলেও আজ পর্যন্ত একটাও ভুল কথা বলল না। একটাই আক্ষেপ, শাশুড়ি প্রায়ই বলতেন, আমার ছেলে জিরে দিয়ে দারুণ মাছের ঝোল রাঁধতে পারে। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর রোজ নিজে হাতে টোস্ট, ডিম সেদ্ধ করে আমায় খাইয়েছে। যত্ন করেছে। কিন্তু এক দিনও ওর সেই বিখ্যাত মাছের ঝোল চেখে দেখার সৌভাগ্য হল না আমার!
এত ভালর মধ্যে একটাই সমস্যা, ‘হ্যালো’ বড্ড রাগী! তাও তো বয়সের সঙ্গে সঙ্গে রাগ অনেকটা কমেছে। ৩৫ বছর ধরে তো কম রাগ দেখলাম না! যখন রেগে যায়, তখন বশে থাকে না। রাগ পড়লে আবার চেনা মানুষ। তাই ও রাগলেই আমি চুপ। বাবা শিখিয়ে দিয়েছিলেন, এক জন রেগে গেলে আর এক জনকে চুপ থাকতে হয়। আমি অক্ষরে অক্ষরে সেটা মেনে এসেছি। জানেন, এই সব্যসাচীর মধ্যেই আরও এক সব্যসাচী থাকে। সে কিন্তু বেশ রোম্যান্টিক। হয়তো আমার জন্মদিনে হাতে করে কিছু উপহার আনল না। কিন্তু আমার জন্মদিন ঠিক মনে রাখে! বিশেষ দিনে উপহার না আনলেও কাজের সূত্রে এ দিক সে দিক গেলে ইদানীং দেখি হাতে করে কিছু না কিছু নিয়েই ফিরছে। শাড়ি, গয়না আছেই। শেষ বার আমার জন্য আমেরিকা থেকে এক বাক্স কুরুশের কাঁটা এনে দিয়েছে। আমি কুরুশ বুনতে ভীষণ ভালবাসি। উপহার পেয়ে বুঝলাম, আমার পছন্দ ও মনে রেখেছে। জেনে এত ভাল লাগল! সব থেকে বেশি খুশি হয়েছি এই উপহার পেয়ে। কাঁটাগুলো দিয়ে সারাক্ষণ কিছু না কিছু বুনেই চলেছি। যেন এ ভাবেই ও আমার সঙ্গে জড়িয়ে আছে।