(বাঁ দিক থেকে) মীর আফসার আলি, সুতপা শিকদার, মোক্ষ। ছবি: ফেসবুক।
বহু পরিচালক তাঁদের ছবির স্বার্থে কবিতাকে ব্যবহার করেছেন। কিন্তু, একটি মাত্র কবিতাকে কেন্দ্র করে ছবি নির্মাণের উদাহরণ খুব বেশি নয়। নিজের লেখা কবিতা ‘নালিশ’কে আধঘণ্টার ছবিতে রূপান্তরিত করলেন কবি-পরিচালক তন্ময় দে। তন্ময় এর আগে পরিচালক অর্ণব রিঙ্গো বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘সেনাপতি’ সিরিজ়ের সৃজনশীল পরিচালক ছিলেন। এ বার তিনি ক্যামেরার পিছনে। এই কবিতা-ছবিতে আরও চমক রয়েছে। এক বিচ্ছিন্ন দম্পতির ভূমিকায় অভিনয় করেছেন মীর আফসার আলি ও মোক্ষ। ছবিতে কোনও সংলাপ নেই। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ধ্বনিত হয়েছে কবিতা। ছবির আবহের দায়িত্বে ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্ত। সব থেকে বড় চমক ছবির নিবেদক। ইরফান খানের স্ত্রী লেখক সুতপা শিকদার এই প্রথম কোনও বাংলা ছবি নিবেদন করলেন। আনন্দবাজার অনলাইনকে সুতপা বলেছেন, “তন্ময়ের কবিতা পড়ে নতুন করে অনুভব করলাম, আজও আমি ইরফানের থেকে বেরোতে পারলাম না। কিন্তু ওকে সে কথা জানাব কী ভাবে?” সেই অনুভূতি থেকেই তিনি ‘নালিশ’-এর নিবেদক।
এক পরিবারের দু’জন সদস্য, স্বামী-স্ত্রী। তাঁরা যখন একসঙ্গে এক ছাদের নীচে, তখন বেশ কিছু অভ্যাস গড়ে ওঠে। তন্ময়ের দাবি, “এই অভ্যাস শুধুই যে মানুষের তৈরি তা নয়। পরিবারের সদস্যদের অনুভূতির সঙ্গে, তাঁদের উপস্থিতির সঙ্গে একাত্ম হয়ে পড়ে সংসারে ব্যবহৃত নানা উপকরণও। একজন ছেড়ে গেলে তাঁর অভাব তখন তাদেরও ছুঁয়ে যায়। আমার ছবি দেখাবে, ছাদে পড়ে থাকা কাপড় শুকোতে দেওয়ার তার বাড়ির কর্ত্রীর অভাবে কী ভাবে একাকিত্বে ভোগে। কারণ, কাপড় মেলা বা তোলার সময় রোজ তার হাতের ছোঁয়া পেত সে। এরা কার কাছে নালিশ জানাবে?” ছবির শুটিং হয়েছে বারুইপুরে, এক প্রথম সারির অলঙ্কার বিপণন সংস্থার বাগানবাড়িতে। ২২ ঘণ্টা টানা শুটিং করে পুরো ছবি ক্যামেরাবন্দি করেছেন পরিচালক নিজেই। প্রযোজনায় রাজীব মেহরা। ৩ অক্টোবর ইউটিউব চ্যানেলে মুক্তি পাবে এই ছবি। এই প্রসঙ্গে নিজের অনুভূতি ভাগ করে নিয়েছেন অভিনেত্রী মোক্ষও। তিনি আজও তাঁর ঠাকুমার প্রত্যেকটি জিনিস আঁকড়ে, আগলে বাঁচেন।
‘নালিশ’-এ অভিনয়ের পাশাপাশি মীরের কণ্ঠে আবৃত্তিও শুনবেন দর্শক। বাস্তবে মীর কোনও ভাবে টুকরো উপকরণ আঁকড়ে বেঁচে থাকেন? সঞ্চালক-অভিনেতাকে প্রশ্ন করেছিল আনন্দবাজার অনলাইন। অতীতে ডুব দিয়ে দুর্লভ স্মৃতি ভাগ করে নিলেন মীর। সাল ১৯৯১। কলকাতায় শাহরুখ খান। শহরের বিলাসবহুল হোটেলে উঠেছিলেন বলিউড তারকা। সে দিনের অনুষ্ঠানের সঞ্চালক মীর। মীরের কথায়, “হোটেলের লবিতে দাঁড়িয়ে সে দিন শাহরুখ ধূমপান করছিলেন। যত দূর মনে পড়ছে সম্ভবত তিনটি। একটার পর একটা সিগারেট খাচ্ছেন আর অ্যাশপটে অবশিষ্ট অংশটুকু ফেলে দিচ্ছেন। তিনি চলে যাওয়ার পর নিজেকে সামলাতে পারিনি। অ্যাশপট উপুড় করে ছাই সমেত সিগারেটের শেষ টুকরোগুলো যত্ন করে বাড়ি নিয়ে এসেছিলাম।” তাঁর দাবি, ওগুলো এখনও খামে মুড়ে আলমারিতে রেখে দিয়েছেন। শাহরুখের সঙ্গে দিনযাপন তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়। তাঁর খাওয়া সিগারেটের টুকরো মীরের সেই অভাব পূরণ করে দেয়।