১,৫০০ পর্বেও জমজমাট ‘রাসমণি-উত্তর পর্ব’
সোমবার ‘করুণাময়ী রাণী রাসমণি’ ১৫০০ পর্ব ছুঁয়ে ফেলল। আনন্দের চোটে শ্রী রামকৃষ্ণকে কেক খাইয়ে দিলেন মা সারদা! আদর করে ‘সহধর্মিনী’-র নাকে কেকের ক্রিমও মাখিয়ে দিলেন ‘যুগপুরুষ’।
সকাল থেকেই সেট জুড়ে উদযাপনের মেজাজ, হুল্লোড়। শ্যুট শেষ হতেই স্টুডিয়োয় পৌঁছে গিয়েছে ধারাবাহিকের নাম লেখা বড় কেক। ‘রাসমণি’ পরিবারের সব থেকে ছোট সদস্য সুস্মিলি আচার্য ওরফে ‘কুমুদিনী’ এ দিন কেক কেটেছেন। উদযাপনের সূত্রধর বিশ্বনাথ বসু ওরফে ‘নগেন চৌধুরী’। উপস্থিত লেখিকা শাশ্বতী ঘোষ, কার্যনির্বাহী পরিচালক রাজেন্দ্রপ্রসাদ দাস, বর্তমান পরিচালক রূপক দে। ১০ জানুয়ারি থেকে বদলে যাচ্ছে ধারাবাহিকের সম্প্রচার সময়। সন্ধে সাড়ে ৬টার বদলে ‘রাসমণি’ দেখা যাবে সন্ধে ৬টায়।
সবার আশীর্বাদ, শুভেচ্ছা কামনার পাশাপাশি স্বাভাবিক ভাবেই ভিড় করেছিল স্মৃতি। আনন্দবাজার অনলাইনকে রাজেন্দ্রপ্রসাদ দাস বললেন, ‘‘আজকের দিন দাঁড়িয়ে প্রথম দিনের কথা ভীষণ মনে পড়ে যাচ্ছে। সেই সময় একের পর এক পিরিয়ড ড্রামা বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল। ফলে, আমরা সবাই আশা-নিরাশায় দুলছিলাম। অনেকে সাবধানও করেছিলেন। বলেছিলেন, বুঝে পা বাড়াতে। আমি বলেছিলাম, সবাই মিলে একটা ভাল কাজের চেষ্টা করছি। নিশ্চয়ই ভাল ফলাফল পাব।’’ প্রথম দিনের প্রথম দৃশ্য কী ছিল? স্মৃতি হাতড়ে পরিচালক প্রকাশ্যে আনলেন এক অজানা গল্প।
জানালেন, ধারাবাহিকের প্রথম দিনেই চুনো মাছ ভাজতে হবে ছোট রাসমণিকে। তার মা তাকে কাজ শেখাচ্ছেন। ভাইয়েরা খাবারের অপেক্ষায় বসে। তারা বোনের উপরে মোটেই সন্তুষ্ট নয়। বোন কোনও কাজ পারে না! সবার মস্ত অভিযোগ। ‘‘এ দিকে আমি ভাবছি, ছোট পর্দায় চুনোমাছ ভাজা কি দেখাতে পারব? যদি কোনও নিয়মে আটকায়! শেষে ঠাকুরের নাম নিয়ে দৃশ্যটা নিয়েই নিলাম।’’ চুনোমাছ ভাজার দৃশ্য পরে কোনও নিয়মের গেরোয় আটকায়নি। তবে সে দিন ‘রাসমণি’ ওরফে দিতিপ্রিয়া রায়ের হাতে ছোট ছোট তিন-চারটি ফোসকা পড়েছিল। তিনিও তো মাছ ভাজতে জানতেন না। অবস্থা দেখে তড়িঘড়ি পরিচালক বলেছিলেন, তাঁকে আর মাছ ভাজতে হবে না। বেঁকে বসেছিলেন স্বয়ং ‘রাসমণি’। জেদ ধরে বলেছিলেন, ‘‘আমি পারব আঙ্কল। আপনি ক্যামেরা চালু রাখুন।’’
সাড়ে চার বছরের যাত্রায় ইতিহাস মেনে রাজচন্দ্র দাস, রানিমা, মথুরামোহন বিশ্বাস একে একে বিদায় নিয়েছেন। এখন সম্প্রচারিত হচ্ছে উত্তর পর্ব। ‘রানিমা’ ধারাবাহিক দেখেন? উত্তর দিতে গিয়ে প্রাণখোলা রসিকতা দিতিপ্রিয়ার, ‘‘রানিমার নবজন্ম হয়েছে! বর্ধমানে ‘আয় খুকু আয়’ ছবির শ্যুটে ব্যস্ত। সিরিজ সহ আরও নানা ধরনের চরিত্রে সে অভিনয় করছে। ফলে, একটানা দেখে উঠতে পারছে না!’’ তার পরেই যুক্তি, তাঁর সময়েও তিনি ধারাবাহিক দেখতেন না। রোজ শ্যুটে যেতেন। কাজ করতেন। বাড়ি ফিরে আসতেন। প্রিয় জামাইয়ের মৃত্যুদৃশ্য দেখেছেন? ‘মথুরবাবু’ ওরফে গৌরব চট্টোপাধ্যায় কিন্তু শট দিয়েই সেট থেকে পালিয়ে এসেছিলেন। আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেছিলেন, দিতিপ্রিয়া থাকলে হয়তো আরও কিছুক্ষণ স্টুডিয়োয় থাকতেন।
উত্তরে দিতিপ্রিয়ার দাবি, ‘‘আমি আর গোগো খুব ভাল বন্ধু। কত ছোট থেকে চিনি ওকে! ‘দুর্গা’ ধারাবাহিকে আমার বাবা হয়েছিল। আমার যখন শেষদৃশ্য তখনই বলেছিল, ‘‘তুই না থাকলে কী করে কাজ করব রে?’’ অনেক বুঝিয়েছিলাম। দেখলাম, পরে গোগো-ও সরে এল।’’ সেটে এক সঙ্গে হলেই নাকি এক কোণে দাঁড়িয়ে হাসিঠাট্টায় মাততেন তাঁরা। দেখে পরিচালকের মাথায় হাত পড়ত, ‘‘এই রে! দুই মাথা এক হয়েছে? এ বারই শ্যুটের দফারফা।’’ এই রসায়ন নাকি রাজচন্দ্র দাস ওরফে আব্দূন গাজী নূরের সঙ্গে ছিল না দিতিপ্রিয়ার। অকপটে স্বীকার করেছেন, ‘‘রাজচন্দ্রও খুবই ভাল। মাটির কাছাকাছি, আন্তরিক। কিন্তু গোগোর মতো নয়!’’