(বাঁ দিক থেকে) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, শ্রীরাধা বন্দ্যোপাধ্যায়, রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়, অরুন্ধতী হোম চৌধুরী, ডোনা গঙ্গোপাধ্যায়। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
তিনি রাঁধেন। চুল বাঁধেন। রুটিও কি বেলতে পারেন?
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দেখালেন, তিনি রুটিও বেলতে পারেন। শুধু তা-ই নয়, রুটি বেলাতে পারেন অভিনেত্রী রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দিয়েও। তবে বুধবার টেলিভিশন রিয়্যালিটি শো ‘দিদি নম্বর ওয়ান’-এর শুটিংয়ে রুটি বেলা সংক্রান্ত প্রতিযোগিতায় অংশ নেননি মমতা। শোয়ের ওই বিভাগের প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন ডোনা গঙ্গোপাধ্যায়। ওই শোয়ে প্রতিযোগীদের লুচির লেচি বেলা এবং ভাজার কথা ছিল। তবে অনেকেই নাকি লুচি ফুলকো করে ভাজা নিয়ে শঙ্কিত ছিলেন। অতএব লুচির বদলে মেনুতে রুটি নিয়ে আসা হয়।
মমতা অবশ্য আগেই শোয়ের সঞ্চালিকা অভিনেত্রী রচনাকে জানিয়ে দিয়েছিলেন, তিনি রুটি-টুটি বেলতে পারবেন না। তবে গাইবেন, নাচবেন, বাজাবেন, কবিতাও বলবেন। অতএব রুটি বেলা সংক্রান্ত প্রতিযোগিতায় অংশ নেন বাকি তিন প্রতিযোগী ডোনা এবং দুই গায়িকা অরুন্ধতী হোমচৌধুরী আর শ্রীরাধা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে ডোনার বেলা রুটিই গোলাকৃতিতে শ্রেষ্ঠ হয়েছে। তবে মমতা প্রতিযোগিতায় অংশ না-নিলে রচনা তাঁকে অনুরোধ করেছিলেন রুটি বেলতে। মমতা উল্টে রচনাকেই বলেন রুটি বেলে দেখাতে। সটান বলেন, ‘‘আগে তুমি রুটি বেলে দেখাও!’’ মুখ্যমন্ত্রীর অনুরোধ ফেলেননি রচনা। তার পরে মুখ্যমন্ত্রীও রুটি বেলে দেখিয়ে দিয়েছেন।
বস্তুত, জনপ্রিয় ওই রিয়্যালিটি শোয়ে ‘প্রতিযোগী’ নয়, ‘বিশেষ অতিথি’ হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রতিযোগিতা হয় ডোনা-অরুন্ধতী-শ্রীরাধার মধ্যেই। শুটিং শেষের পর বেরিয়ে প্রশ্নের উত্তরে মমতা বলেন, ‘‘খুব ভাল প্রোগ্রাম হয়েছে।’’
ছোট পর্দার জনপ্রিয় রিয়্যালিটি শো ‘দিদি নম্বর ওয়ান’-এ যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা অংশ নেবেন, তা আগেই ঠিক ছিল। বুধবার সকালে শোয়ের শুটিং করতে ডুমুরজলা ইন্ডোর স্টেডিয়ামে পৌঁছন মমতা। তার আগে থেকেই শুটিং ফ্লোরের বাইরে-ভিতরে ছিল কড়া নিরাপত্তাবেষ্টনী। বেলা ১২টা নাগাদ ফ্লোরে পৌঁছন মমতা। ছিলেন প্রায় আড়াই ঘণ্টা। শুটিং শেষ করে দেশপ্রিয় পার্কে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের কর্মসূচিতে যোগ দিতে যান মুখ্যমন্ত্রী। গল্প, রসিকতা এবং আড্ডার মেজাজে শুট করেছেন মমতা। সময় পেলেই গল্প করেছেন ‘দাদা’ সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের ঘরনি ডোনা এবং অরুন্ধতী-শ্রীরাধার সঙ্গে।
মূলত রাজ্যের মহিলাদের ‘উজ্জীবিত’ করাই ছিল এই শোয়ের এই পর্বের উদ্দেশ্য। আশ্চর্য নয় যে, মুখ্যমন্ত্রী মমতাকে মহিলাদের কাছে ‘আদর্শ’ হিসাবে তুলে ধরা হয়েছে। শোয়ের অন্দরে মমতা কী কী করেছেন, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই কৌতূহল দানা বেঁধেছে। উদ্যোক্তা সূত্রের খবর, তাঁর শৈশব থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত যাত্রাপথের অভিজ্ঞতা শুনিয়েছেন মমতা। পাশাপাশি, তাঁর জীবনসংগ্রামের প্রসঙ্গও উঠে এসেছে। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মমতা জানান, রাজ্যে মহিলাদের উন্নয়নের জন্য একাধিক প্রকল্প রয়েছে। তা নিয়ে নিজের অভিমত জানান তিনি। বিশেষ জোর দেন মহিলাদের জন্য স্বনির্ভর গোষ্ঠীর উপর। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্য সরকার মহিলাদের এ সব স্বনির্ভর প্রকল্পে খুব সহজে ঋণ দিচ্ছে। অবসর সময় কী ভাবে কাটে জানতে চাওয়ায় মুখ্যমন্ত্রী রচনাকে জানান, মূলত ছবি এঁকে, গল্প ও কবিতা লিখে তাঁর অবসর কাটে। শোয়ে পলাশ ফুলের ছবিও আঁকেন মমতা। গান করেন। তাঁর লেখা এবং সুর-দেওয়া গান গেয়ে শোনান শ্রীরাধা। সূত্রের খবর, মমতার সঙ্গে-যাওয়া রাজ্যের মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেনও মমতার লেখা এবং সুর-করা একটি গান ওই শোয়ে গেয়েছেন।
প্রায় ১৫ বছর ধরে এই রিয়্যালিটি শো সঞ্চালনা করছেন রচনা। ২০১১ সালে মমতা মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন সময়ে টলিপাড়ায় গুজব ছড়িয়েছে যে, রচনার শোয়ে যেতে পারেন মমতা। এত দিনে তা বাস্তবায়িত হয়েছে। প্রত্যাশিত ভাবেই রচনাও উচ্ছ্বসিত। বুধবার শুটিং ফ্লোরে ঢোকার আগে তিনি বলেন, ‘‘এখনও পর্যন্ত যেটা কখনও হয়নি, এ বার সেটাই হতে চলেছে। আমি দিদির কাছে চিরকৃতজ্ঞ। এত বছর ধরে আমার শোয়ের যে সুনাম, সেটা দিদির উপস্থিতিতে পূর্ণতা পেল।’’