অমিতাভ বচ্চন-অক্ষয় কুমার
কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে মুখ না খুললে বন্ধ করে দেওয়া হবে শ্যুটিং। অমিতাভ বচ্চন ও অক্ষয় কুমারকে এমন হুমকি দিলেন মহারাষ্ট্রের কংগ্রেস নেতা তথা প্রদেশ কংগ্রেস প্রধান নানাভাউ পটোলে। তাঁর অভিযোগ, এই তারকারা পক্ষপাতদুষ্ট। মহারাষ্ট্রে উদ্ধব ঠাকরে সরকারের অন্যতম জোট শরিক কংগ্রেস। ফলে তাদের এই হুমকি বিশেষ ‘তাৎপর্যপূর্ণ’।
নানার বক্তব্য, ‘‘যে ভাবে পেট্রলের দাম বৃদ্ধি হচ্ছে, তাতে সাধারণ মানুষ বিপদে পড়েছেন। মনমোহন সিংহের সরকার থাকাকালীন যখন পেট্রলের দাম বেড়েছিল, তখন তো অমিতাভ বচ্চন ও অক্ষয় কুমারের মতো তারকারা এক চুল জায়গা ছাড়েননি। তখন তো খুব টুইট করতেন। আজ তাঁরা নীরব।’’ এর পর সোজাসুজি বলিউডের দুই প্রভাবশালী তারকাকে হুমকি দিয়ে বসলেন নানা। তাঁর তোপ, ‘‘যে ছবিগুলিতে অমিতাভ বচ্চন ও অক্ষয় কুমার রয়েছেন, মহারাষ্ট্রে সেই ছবির শ্যুটিং বন্ধ করে দেওয়া হবে। হয় নরেন্দ্র মোদী সরকারের দেশদ্রোহী নীতিগুলির বিরুদ্ধে কথা বলুন, নয়তো আমরা শ্যুটিং বন্ধ করে দেব।’’
মনমোহন সিংহ শাসিত ভারতে যখন পেট্রলের দাম বেড়েছিল, তখন অমিতাভ বচ্চন ও অক্ষয় কুমার পেট্রোপণ্যের মূল্য বৃদ্ধির নিন্দা করেছিলেন। ২০১২ সালের ২৪ মে, অমিতাভ টুইটে লিখেছিলেন, ‘পেট্রলের দাম বেড়েছে ৭.৫ টাকা। পেট্রল স্টেশনের কর্মী গাড়ির মালিককে জিজ্ঞেস করলেন, কত টাকার পেট্রল দেব? মালিক জানালেন, ২/৪ টাকার পেট্রল আমার গাড়ির উপরে ছিটিয়ে দাও। জ্বালিয়ে দাও’।
মোদী শাসিত ভারতবর্ষেও পেট্রলের দাম বেড়েই চলেছে। সম্প্রতি তা সর্বকালের রেকর্ড ছাড়িয়ে গিয়েছে। বৃহস্পতিবার মুম্বইয়ে এক লিটার পেট্রলের দাম বেড়ে হয়েছে ৯৬.৩২ টাকা। ডিজেল ৮৭.৩২ টাকা। টানা ১০ দিন ধরে বাড়ল পেট্রল ডিজেলের দাম। বিজেপি শাসিত দুই রাজ্য রাজস্থান ও মধ্যপ্রদেশে ইতিমধ্যেই পেট্রলের দাম ১০০টাকা ছাড়িয়েছে। রাজস্থানের শ্রীগঙ্গানগরে বৃহস্পতিবার প্রতিলিটার পেট্রল বিক্র হল ১০০.৪৯ টাকায়। মধ্যপ্রদেশের অনুপ্পুরে ১০০.২৫।
T 753 -Petrol up Rs 7.5 : Pump attendent - 'Kitne ka daloon ?' ! Mumbaikar - '2-4 rupye ka car ke upar spray kar de bhai, jalana hai !!'
— Amitabh Bachchan (@SrBachchan) May 24, 2012
উপরে অমিতাভের ২০১২-র সেই টুইট।
কিন্তু অমিতাভ বা অক্ষয়ের টুইটার, ইনস্টাগ্রাম বা ফেসবুক পেজ ঘুরে এসে এ বিষয়ে কোনও পোস্ট নজরে পড়বে না। সে জন্যই ক্ষুব্ধ মহারাষ্ট্রের শিবসেনার শরিক দল কংগ্রেস। সে রাজ্যের কংগ্রেস প্রধান নানাভাউ পটোলে সরাসরি হুমকি দিয়ে বসলেন এক ভিডিয়োয়। এক সময় বিজেপি-র সাংসদ ছিলেন নানা। ২০১৮ সালে বিজেপি ছেড়ে কংগ্রেসে যোগ দেন। নানার ধারণা, ‘‘এঁদের অত সাহস নেই যে মোদী সরকারের স্বৈরচারিতার বিরুদ্ধে কথা বলবেন। কংগ্রেসের কাছে আশ্চর্যের বিষয়, দাম বৃদ্ধির পরিমাণ তখনকার থেকে এখন অনেক বেশি। তাও ওঁরা চুপ।’’
ঘটনাচক্রে, এক সময় কংগ্রেসের খুব কাছের মানুষ ছিলেন অমিতাভ। দুন স্কুলের বন্ধু প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গাঁধীর প্রস্তাবে ১৯৮৪ সালে অভিনয় থেকে সংক্ষিপ্ত বিরতি নিয়ে রাজনীতিতে যোগ দেন অমিতাভ। এলাহাবাদ লোকসভা আসনে উত্তর প্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী হেম্মতি নন্দন বহুগুণা-র বিরুদ্ধে নির্বাচনে দাঁড়ান তিনি। রেকর্ড ভোটপার্থক্যে জেতেন। এর কিছু দিন পর রাজীবের নাম বোফর্স কেলেঙ্কারিতে জড়ানোয় অমিতাভ রাজনীতি থেকে সরে আসেন। সেই কংগ্রেসের থেকেই এমন ‘হুমকি’ তাই অমিতাভের কাছে খানিক ‘অপ্রত্যাশিত’ ঠেকতে পারে।
অন্য দিকে, অক্ষয় কুমার বর্তমান শাসকদলের ‘ঘনিষ্ঠ’ বলেই পরিচিত। সম্প্রতি রামমন্দির নির্মাণের জন্য অর্থ দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে ভিডিয়ো পোস্ট করেন নেটমাধ্যমে। সরকারি বিভিন্ন বিজ্ঞাপনেও তাঁকে নিয়মিত দেখা যায়। ফলে তিনি যে মহারাষ্ট্রে কংগ্রেসের নিশানা হবেন, তাতে আশ্চর্যের কিছু নেই।
ইতিমধ্যেই কংগ্রেস নেতার মন্তব্যের বিরোধিতায় সরব বিজেপি। বিজেপি নেতা রাম কদম বলেন, ‘‘এত প্রতিভাধর মানুষদের হুমকি দেওয়াটা অন্যায়।’’ তবে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত দুই বলি-তারকার এক জনও প্রকাশ্যে এ বিষয়ে নিজেদের প্রতিক্রিয়া জানাননি।