Look Back 2024

বছরভর একের পর এক উদ্ভট কাণ্ড! হেসে কুটিপাটি না কি বিরক্তিতে ভ্রু কুঁচকে কাটল সাল ২০২৪?

আনন্দবাজার অনলাইনের মনে পড়ল তেমন সাতটি উদ্ভট ঘটনার কথা, যা নিয়ে আলোচনা হয়েছে বছরের বিভিন্ন সময়ে।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৯:১১
বছরভর নানা উদ্ভট কাণ্ডে জমজমাট ছিল ২০২৪ সাল।

বছরভর নানা উদ্ভট কাণ্ডে জমজমাট ছিল ২০২৪ সাল। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

এ পৃথিবীতে কখন যে কী ঘটে যায়, কেউ জানে না! অপ্রত্যাশিত সে সব ঘটনার অভিঘাতে মানুষ অবাক হয়। তার পর শুরু হয় প্রতিক্রিয়ার পালা। কোনওটায় হাসি হররা, তো কোনওটায় বিরক্তি— এমনই উদ্ভট নানা কাণ্ড ঘটে গেল ২০২৪ সালে। আর প্রযুক্তির কল্যাণে একেবারে ছোট হয়ে যাওয়া দুনিয়ায় তা নিয়ে শোরগোলও পড়ল বিস্তর। আনন্দবাজার অনলাইনের মনে পড়ল তেমন সাতটি উদ্ভট ঘটনার কথা, যা নিয়ে আলোচনা হয়েছে বছরের বিভিন্ন সময়ে।

Advertisement

নিয়নবাস, মহাকর্ণ কাঞ্চন:

Image of Kanchan Mullick and Sreemoyee Chattoraj

বিধায়ক-অভিনেতা কাঞ্চনের অবসর যাপনের ছবিতে নিয়ন রঙের হাফ প্যান্ট দেখে হেসেই কুটিপাটি বিনোদন দুনিয়া! ছবি: সংগৃহীত।

চলতি বছরই বিয়ে সেরেছেন কাঞ্চন মল্লিক ও শ্রীময়ী চট্টরাজ। প্রথম জামাইষষ্ঠীর আসরে আদুরে অনুযোগ করে শ্রীময়ী জানিয়েছিলেন, তাঁকে মধুচন্দ্রিমায় নিয়ে যাননি কাঞ্চন! দু’মাসের মধ্যেই অবশ্য যুগলে পাড়ি দিয়েছিলেন থাইল্যান্ড। সেখান থেকে একের পর এক ছবি শ্রীময়ী প্রকাশ করেছিলেন সমাজমাধ্যমে। আর তাতেই বিপত্তি। বিধায়ক-অভিনেতা কাঞ্চনের অবসর যাপনের ছবিতে নিয়ন রঙের হাফ প্যান্ট দেখে হেসেই কুটিপাটি বিনোদন দুনিয়া! তার উপর সাঁতারপুলে ভিজে চুলে কাঞ্চনের বৃহদায়তন কান দু’টি স্পষ্ট হয়ে ওঠায় শুরু হয় তাঁর সঙ্গে ভিন্গ্রহীদের তুলনা। কেউ কেউ বলতে শুরু করেন, ‘পিকে’ ছবিটি বাংলায় নির্মিত হলে একটি চরিত্র কাঞ্চন পাবেনই, প্রয়োজন হবে না কৃত্রিম রূপটানের।

সৃজিতের সর্পসঙ্গ:

Image of Srijit Mukherji

সুদূর কলম্বিয়া থেকে এই পাইথন আনিয়েছিলেন সৃজিত মুখোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত।

গত ফেব্রুয়ারি মাসে হঠাৎই একদিন জানা যায়, সৃজিত মুখোপাধ্যায় পাইথন পুষছেন। তিনি সমাজমাধ্যমে একটি পোস্টে লেখেন, ‘‘উলুপীকে বাড়িতে স্বাগত। আমাদের জীবন চিরকালের জন্য বদলে গেল।’’ এই পোস্টের পরেই পরিচালকের পরিবারে নতুন অতিথি কে, তা নিয়ে টলিপাড়ায় জল্পনা। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সৃজিত বাড়িতে একটি পোষ্য এনেছেন। আর সেই পোষ্যটি কোনও সারমেয় নয়, সেটি একটি পাইথন! পরিচালক নাকি সুদূর কলম্বিয়া থেকে এই পাইথন আনিয়েছেন। আদর করে নাম রেখেছেন উলুপী। ‘মহাভারত’ ছাড়াও বিষ্ণু পুরাণ এবং ভগবত পুরাণে নাগকন্যা উলুপীর উল্লেখ রয়েছে। কথিত আছে, বনবাসে থাকাকালীন অর্জুনের সঙ্গে উলুপীর বিবাহ হয়।

পরবর্তী কালে সৃজিত বাড়িতে এনেছেন আরও কয়েকটি সাপ। এখন তাঁর ঘরে বসত করে হাইড্রা, মেডুসা, অনন্ত নাগ, কালনাগিনী!

বানান বিভ্রম, বিপাকে মধুমিতা:

Image of Madhumita Sarcar

গত ১৫ অগস্ট, স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে নিজের ফেসবুকে একটি ছোট্ট পোস্ট করেছিলেন অভিনেত্রী মধুমিতা সরকার। ছবি: সংগৃহীত।

সমাজমাধ্যমে বেশ সক্রিয় থাকেন অভিনেত্রী মধুমিতা সরকার। গত ১৫ অগস্ট, স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে নিজের ফেসবুকে একটি ছোট্ট পোস্ট করেছিলেন তিনি। লিখেছিলেন, “স্বাধীনতা দিবেস একটি-ই প্রার্থণা, নিঃশ্বাসটুকু যেন নিতে পারি আমাদের স্বাধীন ভারতবর্শে।” সঙ্গে রেখেছিলেন ভারতের স্বাধীনতা দিবস সংক্রান্ত হ্যাশট্যাগ ও একটি জাতীয় পতাকার ইমোজি। মধুমিতার ভাবাবেগের কথা বোঝা গেলেও তাঁর বানানবোধ নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। সে ক্ষেত্রে একধাপ এগিয়ে কটাক্ষের পাশুপত হেনে ফেলেন আর এক অভিনেতা ঋদ্ধি সেন। সমাজমাধ্যমেই সরাসরি তিনি লেখেন, ‘‘আমাদের পেশার কলঙ্ক।’’ তিনি লেখেন, “...ঘেন্না ধরে গেল ন্যূনতম লজ্জা, শিক্ষা আর বোধ মুছে গিয়েছে এই বিনোদন জগতের বহু কর্মীর মধ্যে থেকে।...যে রাজ্যে এক চিকিৎসকের সাদা পোশাক ভেসে গেল রক্তে, সেই রাজ্যে এদের মতো অশিক্ষিত ব্যক্তি সাদা পোশাক পরে ওড়না উড়িয়ে দন্ত বিকশিত করে ভুল বানানে স্বাধীনতা দিবস পালন করার অভিনয় করছে। এরা কোনও দিনই শিল্পী ছিল না, ছিল না অভিনেতা”।

ঋদ্ধিকে ছেড়ে দেননি মধুমিতা। পাল্টা তিনিও এর পরে লেখেন, “আপনার শিক্ষা নিয়ে কোনও প্রশ্ন তুলব না ঋদ্ধি। কারণ সেটা করলে আপনার পারিবারিক শিক্ষার উপর প্রশ্ন ওঠে। সেটা করতে চাই না। কারণ আপনার মা ধারাবাহিকে আমার মায়ের চরিত্রে পার্ট করেছেন।’’

সুরকারের চুরি:

Image of Debojyoti Mishra

গত ৫ জুন, বিশ্ব পরিবেশ দিবসের রাতে সুরকার দেবজ্যোতি মিশ্র নিজের সমাজমাধ্যমে ভাগ করে নেন একটি হাতে আঁকা ছবি। ছবি: সংগৃহীত।

না, সুর চুরি নয়, ছবি চুরি। চলতি বছর সুররসিক বাঙালি সাক্ষী থাকল এক অন্য রকম অভিযোগের, যা হতভম্ব করে দিয়েছে সকলকে। গত ৫ জুন, বিশ্ব পরিবেশ দিবসের রাতে সুরকার দেবজ্যোতি মিশ্র নিজের সমাজমাধ্যমে ভাগ করে নেন একটি হাতে আঁকা ছবি— একটি জঙ্গলের দৃশ্য। ক্যাপশনে দেবজ্যোতি লেখেন, ‘‘জলরং আর ওয়াশে সবুজ এঁকে ফেলা যায়... ফেললামও। তার পর! সবুজ বনবীথিকা রক্ষার জন্য কী করছি আমরা!!’’

দেবজ্যোতির সুরসাধনার পাশাপাশি তাঁর রং-তুলির প্রতি আকর্ষণও সকলের জানা। তাই নেটাগরিকেরা প্রাথমিক ভাবে ভেবেছিলেন ছবিটি তাঁরই আঁকা। কিন্তু পরে জানা যায়, ছবিটি ইটালির প্রখ্যাত চিত্রকর জিওভান্নি বলদিনির আঁকা। নাম ‘আ পাথ থ্রু ট্রিজ় ইন দ্য বোয়া দে বোলোনে’। এর পরেই সুরকারের বিরুদ্ধে ছবি চুরির অভিযোগ উঠেছে। শুরু হয় ট্রোলিং। পোস্টটি মুছে দেন সুরকার। পরে অন্য একটি পোস্ট করে তিনি বিষয়টিকে ‘ভুল’ বলে দাবি করেন।

লেখেন, “বিখ্যাত চিত্রশিল্পীদের আঁকা ছবির সঙ্গে আমার আঁকা ছবিগুলোও একই ফোল্ডারে রাখা ছিল। আমাকে বিষয়টি নিয়ে অবগত করার জন্য আপনাদের ধন্যবাদ।”

ঋতুপর্ণার শঙ্খবাদন:

Image of Rituparna Sengupta

সিঙ্গাপুরে বসে অনলাইনে প্রতিবাদে যোগ দিতে চেয়েছিলেন অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। ছবি: সংগৃহীত।

২০২৪ সাল কলকাতার বুকে ঘটিয়ে ফেলেছে এক মর্মান্তিক ঘটনা— এক কথায় যা পরিচিতি পেয়েছে ‘আরজি কর-কাণ্ড’ হিসাবে। কর্তব্যরত চিকিৎসকের উপর নৃশংস অত্যাচারের প্রতিবাদে নজিরবিহীন ভাবে পথে নেমেছেন সাধারণ মানুষ। উঠে এসেছে প্রতিবাদের নানা উপচার। সেই পথেই এসেছিল প্রতিবাদী প্রতীক হিসাবে শঙ্খবাদনের অনুষঙ্গ। সে সময় কলকাতায় ছিলেন না অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। সিঙ্গাপুরে বসে অনলাইনে তিনি প্রতিবাদে যোগ দিতে চেয়েছিলেন। তাই সমাজমাধ্যমে শঙ্খবাদনের একটি ভিডিয়ো পোস্ট করেন।

এর পরেই তাঁকে নিয়ে শুরু হয় হাসাহাসি। কারণ, যে শঙ্খটি তিনি বাজিয়েছেন বলে দেখাতে চেয়েছিলেন তা আসলে একটি জলশঙ্খ, যা বাজে না। তদুপরি, ঋতুপর্ণার শঙ্খবাদনের সময় মুখভঙ্গিও ছিল ভুল। নেটাগরিকেরা কটাক্ষ করে বলতে শুরু করেন, এ ভাবে শাঁখ বাজায় না, জলপান করে। ঘটনার অভিঘাতে অভিনেত্রীকে হেনস্থা হতে হয় কলকাতায় এসে। শ্যামবাজারে প্রতিবাদী জমায়েতে শামিল হতে গেলে তাঁর উপর চড়াও হন একদল মানুষ।

সায়ন্তিকার গিটারবাদন:

Image of Sayantika Banerjee

অগস্ট মাসেই কামারহাটি পুরসভার কাছে আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে এক সভায় উপস্থিত হয়েছিলেন বিধায়ক অভিনেত্রী সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত।

প্রায় ঋতুপর্ণার মতোই কটাক্ষের শিকার হন অভিনেত্রী সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়। তত দিনে তিনি বরানগরের বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছেন। অগস্ট মাসেই কামারহাটি পুরসভার কাছে আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে এক সভায় উপস্থিত হয়েছিলেন। সেখানেই মঞ্চের উপর কিছু মহিলার সঙ্গে বসে প্রতিবাদী গান করছিলেন। হাতে ছিল গিটার। মুহূর্তে ভাইরাল হয়ে যায় ভিডিয়ো। তার পরই কটাক্ষের মুখে পড়েন অভিনেত্রী। অভিজ্ঞরা বলে দেন, মোটেও গিটার বাজাতে বা গান গাইতে জানেন না সায়ন্তিকা। তাল মেলাতে হিমশিম খাচ্ছেন। তা ছাড়া, আরজি কর-কাণ্ডের মতো সংবেদনশীল বিষয় নিয়ে এমন গানবাজনা করাও তাঁর উচিত হয়নি বলে মন্তব্য করেন অনেকে।

রচনার হাসিকান্না, ধোঁয়াশা:

Image of Rachna Banerjee

আরজি কর-কাণ্ড প্রসঙ্গেও সমাজমাধ্যমে একটি ভিডিয়ো পোস্ট করে কটাক্ষের শিকার হন সাংসদ-অভিনেত্রী রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত।

২০২৪ লোকসভা নির্বাচনে হুগলি কেন্দ্রে রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রার্থী করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রচার পর্বের চতুর্থ দিনে কেন্দ্রে গেলে রচনাকে প্রশ্ন করা হয় হুগলির বন্ধ কলকারখানা সম্পর্কে। সে সময় অভিনেত্রী হাসতে হাসতে জবাব দেন, ‘‘আমি যখন এলাম তখন তো দেখলাম অনেক কারখানা হয়েছে। চিমনি থেকে শুধু ধোঁয়াই ধোঁয়া। অন্ধকার রাস্তাঘাট। শুধু ধোঁয়াই বেরোচ্ছে। এত কারখানা হয়েছে। তা হলে কী করে বলছেন যে, কারখানা হয়নি। কারখানা তো হচ্ছে।’’ এই মন্তব্যের পরেই সমাজমাধ্যমে তাঁর ‘মিম’ ছড়িয়ে পড়ে। কটাক্ষ ধেয়ে আসে তাঁর ‘ধোঁয়া ধোঁয়া’ মন্তব্য ঘিরে।

এর পর থেকে যত বারই তিনি প্রচারে গিয়েছেন তুমুল হাসি হেসেছেন। প্রতি বারই তাঁকে নিয়ে তৈরি হয়েছে কোনও না কোনও ‘মিম’। তবে তার প্রভাব ভোটবাক্সে পড়েছে ইতিবাচক হিসাবে। প্রায় ৭৭ হাজার ভোটে তিনি হারিয়ে দেন নিকটবর্তী প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপির লকেট চট্টোপাধ্যায়কে।

আরজি কর-কাণ্ড প্রসঙ্গেও সমাজমাধ্যমে একটি ভিডিয়ো পোস্ট করে কটাক্ষের শিকার হন রচনা। তিনি অবশ্য দাবি করেন, তাঁর পক্ষে সত্যিই আবেগ সংযত রাখা কষ্টকর, তাই মানুষ ভুল বুঝেছেন।

Advertisement
আরও পড়ুন