অক্ষয়, স্কারলেট এবং আয়ুষ্মান।
যখন ছবির চুক্তিতে সই করা হয়েছিল, তখন পরিস্থিতি ছিল ভিন্ন। স্বাভাবিক সব কিছুই বদলে গিয়েছে অতিমারির দাপটে। হলিউডের বেশির ভাগ অভিনেতাই ছবির পারিশ্রমিকের ক্ষেত্রে বক্স অফিস কালেকশনের একটা অংশ বা মূল লাভের একটা অংশ নিয়ে থাকেন। বলিউডেও বড় তারকারা এটি করে থাকেন। কিন্তু করোনার জেরে সারা বিশ্ব জুড়ে দীর্ঘ সময় সিনেমা হল বন্ধ থেকেছে। খুললেও প্রত্যাশিত দর্শক সমাগম হয়নি। এই পরিস্থিতিতে ওটিটি প্ল্যাটফর্মে ছবির স্বত্ব বিক্রির অঙ্ক যেমন বেড়েছে, তেমনই বক্স অফিস কালেকশন তলানিতে ঠেকেছে। ফলে যে সব অভিনেতা লভ্যাংশের নিয়মে চুক্তি করেছিলেন, তাঁরা বঞ্চিত হয়েছেন।
সম্প্রতি ডিজ়নি স্টুডিয়োজ়ের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন অভিনেত্রী স্কারলেট ইয়োহানসন। ‘ব্ল্যাক উইডো’ ছবির বক্স অফিস কালেকশনের লভ্যাংশ তিনি পারিশ্রমিক বাবদ পাবেন, এই মর্মে চুক্তি হয়েছিল। কিন্তু ছবিটি ওটিটি এবং কমসংখ্যক হলে রিলিজ় করায়, তিনি প্রত্যাশিত পারিশ্রমিক পাননি। ফলে চুক্তিভঙ্গের অভিযোগে মামলা করেছেন স্কারলেট। ডিজ়নির মতো স্টুডিয়োর বিরুদ্ধে মামলা করা সোজা বিষয় নয়। এই লড়াইয়ে অ্যালেক বল্ডউইন এবং ‘গার্ডিয়ান্স অব দ্য গ্যালাক্সি’র তারকা ডেভ বাতিস্তা ছাড়া প্রায় কাউকেই পাশে পাননি স্কারলেট। ‘ব্ল্যাক উইডো’ ওটিটি এবং সিনেমা হলে একসঙ্গে রিলিজ় হবে এই ঘোষণা গত বছরই হয়েছিল। প্রশ্নও উঠেছে, তখন কেন স্কারলেট আপত্তি করেননি? যদিও তাঁর আইনজীবীর দাবি, অভিনেত্রীর আপত্তিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। মামলা নিয়ে ডিজ়নির বক্তব্য, অতিমারিতে আগের নিয়মের অনেক কিছুই বদলে গিয়েছে। ওয়ার্নার ব্রাদার্সও তাদের বড় বাজেটের বেশ কিছু ছবি ওটিটি এবং প্রেক্ষাগৃহে একসঙ্গে রিলিজ় করেছে, যেমন ‘ওয়ান্ডার উওম্যান ১৯৮৪’। তবে তারা অভিনেতাদের সঙ্গে চুক্তির হেরফের করে নিয়েছে, বলেই খবর।
মামলা মোকদ্দমার পর্যায়ে না গেলেও একই ঘটনা বলিউডেও ঘটেছে। গত বছর সিনেমা হল বন্ধ থাকার সময়ে প্রযোজকেরা তাঁদের ছবি অনলাইনে রিলিজ় করতে উদ্যোগী হন। পরিচালক-প্রযোজক সুজিত সরকারের ‘গুলাবো সিতাবো’ প্রথম ছবি, যেটি সিনেমা হলের জন্য তৈরি অথচ ওটিটিতে মুক্তি পেয়েছিল। অমিতাভ বচ্চন, আয়ুষ্মান খুরানা অভিনীত এই ছবি মুক্তি পেয়েছিল অ্যামাজ়ন প্রাইমে। এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন আয়ুষ্মান। ছবির প্রচারে সে ভাবে শামিল হননি তিনি। সুজিতকে নিজের আপত্তির কথা জানিয়েও ছিলেন। তার পর থেকে সতর্ক হয়ে গিয়েছেন আয়ুষ্মান। নতুন বেশ কয়েকটি ছবির ক্ষেত্রেও ‘নো ওটিটি রিলিজ়’ শর্ত দিয়েছেন তিনি। ফলে সিনেমা হলের জন্য তৈরি হওয়া ছবি অভিনেতার অনুমতি ভিন্ন ওটিটিতে রিলিজ় করা যাবে না।
একই ভাবে ‘লক্ষ্মী’ ছবিটি নিয়ে ঝামেলা বেধেছিল অক্ষয়কুমার এবং ছবির অন্যতম প্রযোজক শাবিনা খানের মধ্যে। অক্ষয় ছবিতে থাকা মানেই বক্স অফিসে লক্ষ্মীলাভ। কিন্তু ওটিটিতে মুক্তি পেলে সেই পরিমাণ টাকা কখনও পাওয়া সম্ভব নয়। এই ছবিটি থেকে একটি নির্দিষ্ট অঙ্কের পারিশ্রমিকের পাশাপাশি বক্স অফিস কালেকশনের একটা অংশ অক্ষয় পেতেন। কিন্তু অনলাইনে মুক্তি পেলে ওই অংশটি পাবেন না তিনি। উপরন্তু বাকি যে টাকা অক্ষয় পেতেন, তা-ও কমানোর অনুরোধ করেন শাবিনা, ক্ষতির দোহাই দিয়ে। এই ঘটনার জেরে অক্ষয়ের সঙ্গে শাবিনার সম্পর্ক বেশ খারাপ হয় এবং ছবিটির নামমাত্র প্রচার করেছিলেন অভিনেতা।
অতিমারির মধ্যেই কার্তিক আরিয়ান ‘ধমাকা’ ছবিটির শুটিং করেছিলেন। শুটিং শেষ হয়ে যাওয়ার পরেই জানা যায় তা ওটিটিতে মুক্তি পাবে। এতে বেঁকে বসেন কার্তিক। তাঁর সঙ্গে চুক্তির সময়ে ছবিটি অনলাইনে রিলিজ়ের কথা বলা হয়নি। অভিনেতার পারিশ্রমিকের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করার পরেই কার্তিক ওটিটি রিলিজ়ে সম্মত হন। কিন্তু পরবর্তী ছবিগুলির চুক্তির সময়ে তিনিও ‘নো ওটিটি রিলিজ়’ শর্ত জুড়েছেন।
পরিস্থিতি এখন শাঁখের করাতের মতো। সব কিছু স্বাভাবিক হওয়ার আশায় বসে থাকলে নির্মাতাকে লোকসান গুনতে হচ্ছে। ওটিটি রিলিজ় করেও কাঙ্ক্ষিত লাভ হচ্ছে না। স্কারলেট ইয়োহানসন এবং ডিজ়নি স্টুডিয়োর মামলা কোন পথে গড়ায়, তার উপরে অনেকটাই নির্ভর করবে বিশ্বজুড়ে অভিনেতা-নির্মাতাদের আগামী দিনের শর্তের রূপরেখা।